প্রাতিপদিক কাকে বলে
প্রাতিপদিক
প্রত্যয়ের আলোচনায় প্রাতিপদিক কথাটি পাওয়া যায়। প্রকৃতির আলোচনায় আমরা জেনেছি প্রকৃতি দুই প্রকার। ধাতু প্রকৃতি ও শব্দ প্রকৃতি। প্রতিপদ কথার অর্থ হল আরম্ভ। যা থেকে পদের আরম্ভ বা সূচনা হয়, তা-ই প্রাতিপদিক। সহজ ভাষায় বললে বিভক্তিচিহ্নহীন শব্দকেই প্রাতিপদিক বলে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে প্রাতিপদিক মানে শুধুমাত্র মৌলিক শব্দ নয়। সাধিত শব্দও প্রাতিপদিক। শব্দের সাথে বিভক্তি না থাকলেই তা প্রাতিপদিক। যেমন: হাত, ঘর, সুখ, জল, কথা, লোক, ছেলে, মা, ভাই প্রভৃতি মৌলিক শব্দগুলি যেমন প্রাতিপদিকের উদাহরণ, তেমনি হিমালয়, উত্তরবঙ্গ, পদ্মানদী, শিক্ষাগুরু প্রভৃতি সাধিত শব্দও প্রাতিপদিক। আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বিশিষ্ট প্রত্যয়যুক্ত কিন্তু বিভক্তিহীন ধাতুকেও প্রাতিপদিক বলেছেন। তিনি প্রাতিপদিককে দু ভাগে ভাগ করেছেন: নাম প্রাতিপদিক ও ক্রিয়া প্রাতিপদিক। ক্রিয়া-প্রাতিপদিকের ব্যাপারটি নিচে আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করলাম। মনে রাখার বিষয় হল: প্রাতিপদিকের সাথে বিভক্তি যুক্ত হলে, তবেই বাক্যে ব্যবহারযোগ্য পদ সৃষ্টি হয়।
ক্রিয়া-প্রাতিপদিক
বিশিষ্ট প্রত্যয়যুক্ত কিন্তু বিভক্তিহীন ধাতুকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ক্রিয়া-প্রাতিপদিক নাম দিয়েছেন। কয়েকটি ক্রিয়াপদের উদাহরণ ভেঙে আমরা এই ধারণাটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করবো।
আমি করিলাম। তুমি করিবে। সে করিত। -- এই তিনটি বাক্যের তিনটি ক্রিয়াপদকে ভাঙলে পাই
১: করিলাম = √কর্ + ইল্ + আম
২: করিবে = √কর্ + ইব্ + এ
৩: করিত = √কর্ + ইত্ + অ
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় 'ইল্', 'ইব্' ও 'ইত্'-কে কাল-দ্যোতক প্রত্যয় বলেছেন এবং 'আম', 'এ', 'অ'-কে বলেছেন বিভক্তি। তাঁর মতে √কর্+ইল্ = করিল্ , √কর্ + ইব্ = করিব্ এবং √কর্ + ইত্ = করিত্ -- এই অংশগুলি ক্রিয়া-প্রাতিপদিক। এদের সাথে একটি বিভক্তি যুক্ত হলেই এরা ক্রিয়াপদে পরিণত হবে।
মন্তব্যসমূহ