পোস্টগুলি

ধ্বনিতত্ত্ব লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শ ষ স হ কে উষ্ম ধ্বনি বলে কেন?

উষ্ম কথার অর্থ কী? শ ষ স ও হ-কে উষ্ম ধ্বনি কেন বলে তা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে 'উষ্ম' কথার অর্থ কী? উষ্ম কথার একাধিক অর্থ আছে, তার মধ্যে একটি হল উত্তপ্ত। বহির্গামী শ্বাসবায়ু উত্তপ্ত হয় বলে তাকে 'উষ্ম শ্বাস' বা শুধু 'উষ্ম' বলে। উষ্ম ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ুকে পূর্ণ বাধা না দিয়ে আংশিক বাধা দেওয়া হয়, ফলে শ্বাসবায়ু আংশিক বাধা অতিক্রম করে যতক্ষণ প্রবাহিত হয়, উষ্ম ব্যঞ্জনগুলিকে ততক্ষণ ধরেই উচ্চারণ করা যায়। বহির্গামী শ্বাসবায়ু যতক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে, ততক্ষণ ধরে উচ্চারণ করা যায় বলে এই ব্যঞ্জনগুলিকে উষ্ম ব্যঞ্জন বা শ্বাস ব্যঞ্জন বলা হয়। 

ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে

ছবি
 ব্যঞ্জনধ্বনির সংজ্ঞা ও ধারণা ব্যঞ্জনধ্বনির আসল সংজ্ঞা কোনটি? আমরা ছোটোবেলা থেকেই শুনে আসছি "যে ধ্বনিকে অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারণ করা যায় না, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।" ব্যঞ্জনধ্বনির এই সংজ্ঞা কি ভুল? না, ভুল নয়, তবে এই সংজ্ঞাটি ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রচিত সংজ্ঞা নয়। ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে জানতে হলে ব্যঞ্জনের উচ্চারণ সম্পর্কে জানা জরুরি। ব্যঞ্জনধ্বনিকে উচ্চারণ করার সময় ফুসফুস থেকে বহির্গত শ্বাসবায়ু বাগ্‌যন্ত্রের কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং শ্বাসবায়ু যথারীতি সেই বাধাকে অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়। এখন মনে রাখতে হবে যে, এই বাধা প্রদানের সময় ব্যঞ্জনের উচ্চারণ হয় না। উচ্চারণটি সম্পন্ন হয় বাধা অপসারণের সময়। তাই বলা যায় ব্যঞ্জনধ্বনি হল বাধা-জাত ধ্বনি। সুতরাং ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে, এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলবো: যে ধ্বনিকে উচ্চারণ করার জন্য শ্বাসবায়ুকে বাগ্‌যন্ত্রের কোথাও না কোথাও আংশিক বা পূর্ণ রূপে বাধা দিতে হয় এবং শ্বাসবায়ু সেই বাধা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।     বাধার প্রকৃতি অনুসারে ব্যঞ্জনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১: স্

শ্রুতিধ্বনি কাকে বলে

 শ্রুতিধ্বনির সংজ্ঞা  শ্রুতিধ্বনি কাকে বলে - দুটি বা তার বেশি স্বরধ্বনি পাশাপাশি উচ্চারিত হলে দুটি স্বরের মাঝে একটি অতিরিক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে। এই অতিরিক্ত ধ্বনিকে শ্রুতিধ্বনি বলে। আমরা যখন 'ক-এক' বলতে যাই, তখন আমাদের বাগ্‌যন্ত্র নিজে থেকেই 'কয়েক' উচ্চারণ করে। একটি বাড়তি ব্যঞ্জন 'য়' নিজে থেকেই চলে আসে। এই বাড়তি 'য়' হল শ্রুতিধ্বনি। সুকুমার সেনের ব্যাখ্যা শব্দমধ্যস্থ বিভিন্ন ধ্বনিকে উচ্চারণ করার সময় জিহ্বাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হয়। এই ভাবে যাওয়ার সময় দুটি ধ্বনির মাঝখানে অসতর্ক ভাবে জিহ্বা যদি একটি বাড়তি ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণ করে ফেলে, তাহলে তাকে শ্রুতিধ্বনি বলে। যেমন: ক+এক = কয়েক। এখানে য় শ্রুতিধ্বনি হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে। ভাষার ইতিবৃত্ত ব‌ইয়ে সুকুমার সেনের ব্যাখ্যায় একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। তিনি দুটি ধ্বনির মাঝে আসা অতিরিক্ত ব্যঞ্জনকে শ্রুতিধ্বনি বলেছেন। এখানে তিনি স্বর ও ব্যঞ্জনে ভেদ করেননি। প্রথাগত ব্যাকরণে দুটি ব্যঞ্জনের মাঝে আগত ব্যঞ্জনকে শ্রুতিধ্বনি বলে স্বীকার করা হয় না। যেমন: বানর>বান্দর। প্রথাগত ব্যাকরণে এগুলি

ধ্বনি পরিবর্তনের ১০টি কারণ | Dhoni poribortoner karon in Bengali

ধ্বনি পরিবর্তন কী ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনিগুলি চিরকাল এক রকম থাকে না। এ বৈশিষ্ট্য প্রতিটি ভাষার‌ই নিজস্ব ধর্ম। ভাষা চলমান, ভাষা বিবর্তনশীল, ভাষা প্রাণময়। ভাষার প্রাথমিক উপাদান ধ্বনি, তাই ধ্বনিও স্বাভাবিক ভাবেই বিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে ভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দের এক বা একাধিক ধ্বনি বদলে যেতে থাকে। এই ঘটনাকে ব্যাকরণের পরিভাষায় ধ্বনি পরিবর্তন বলে। ধ্বনি পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবু আমাদের অনুসন্ধান করে দেখা উচিত ধ্বনির এই বিবর্তন কেন হয়, কেন‌ই বা এই বিবর্তন স্বাভাবিক। আসুন জেনে নিই ধ্বনি পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলি। আপনি এই সঙ্গে ধ্বনি পরিবর্তনের ধারাগুলি পড়ে নিতে পারেন। ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ উচ্চারণের সুবিধা ধ্বনি পরিবর্তনের সবচেয়ে বড়ো কারণ হলো উচ্চারণের সুবিধা। আমাদের বাগ্‌যন্ত্র স্বভাবতই শ্রমবিমুখ। যখন‌ই কোন‌ও ধ্বনিকে উচ্চারণ করতে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিশ্রম হয়, তখন‌ই আমাদের বাগ্‌যন্ত্র সেই ধ্বনিকে সম্ভব হলে এমন ভাবে বদলে নেয়, যাতে উচ্চারণের শ্রম লাঘব হয়। যেমন একটি উদাহরণ দিই: 'দেশি' শব্দটিতে দুটি স্বর আছে: 'এ' এবং 'ই'। এই স্বর দুটির উ

ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবন‌ কাকে বলে

 ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবন‌ সাধারণত সমীভবনের ফলে যুক্ত ব্যঞ্জন থেকে সৃষ্ট যুগ্ম ব্যঞ্জনের মধ্যে একটি ব্যঞ্জনধ্বনি লুপ্ত হ‌ওয়ার ফলে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে পূর্ববর্তী হ্রস্ব স্বরটি যদি দীর্ঘ স্বরে পরিণত হয়, তাহলে তাকে বলে ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবন‌।  উদাহরণ দিয়ে বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। চলুন কয়েকটি উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখি। ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবনের উদাহরণ ভক্ত > ভত্ত > ভাত, অষ্ট > অট্ট > আট, ছত্র > ছত্ত > ছাত, প্রস্তর > পত্থর > পাথর। উপরের উদাহরণগুলির মধ্যে একটিকে বিশ্লেষণ করে দেখাই। ভক্ত থেকে সমীভবনের ফলে ভত্ত হয়েছে। ভত্ত থেকে হয়েছে ভাত। (ভ্+অ+ত্+ত্+অ > ভ্+আ+ত্+অ)। দেখুন 'ভত্ত' শব্দে দুটি ত্ আছে, তাদের মধ্যে 'ভাত' শব্দে একটি লোপ পেয়েছে এবং ভ্-এর পরবর্তী অ স্বরটি আ স্বরে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ ত্ লোপ পেয়ে যে ক্ষতি হলো পূর্ববর্তী হ্রস্ব স্বর অ থেকে দীর্ঘ স্বর আ-তে পরিণত হয়ে সেই ক্ষতি পূরণ করেছে। নাসিক্যীভবনেও এই ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবন‌ ঘটে। যেমন: চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ। এখানেও দেখুন ন্ লোপ পেয়েছে এবং চ্-এর পরবর্তী অ স্বরটি আ স্বরে পরি

নাসিক্যীভবন কাকে বলে | Nasikyibhaban o binasikyibhaban

নাসিক্যীভবনের সংজ্ঞা আমরা জানি যে সব ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় কিছুটা শ্বাসবায়ু নাসাপথে চালিত হয় ও তার ফলে নাসাবিবরে একটি অনুরণন সৃষ্টি হয় তাদের নাসিক্য ব্যঞ্জন বলে। বাংলা বর্ণমালার ঙ, ঞ, ণ, ন, ম এই পাঁচটি ব্যঞ্জন নাসিক্য ব্যঞ্জন, এ ছাড়া অনুস্বরের উচ্চারণ‌ও ঙ এর মতো, তাই এটিও নাসিক্য ব্যঞ্জন। (এদের মধ্যে ণ ও ঞ বাংলায় উচ্চারিত হয় না। শুধু তৎসম শব্দের বানান লেখার জন্য এরা বাংলা বর্ণমালায় আছে।) কোনো শব্দের অন্তর্গত নাসিক্য ব্যঞ্জন লুপ্ত হয়ে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনিকে অনুনাসিক করে তুললে তাকে নাসিক্যীভবন বলে। নাসিক্যীভবন হলে এক‌ই সঙ্গে ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবন‌ও হয়। নাসিক্যীভবনের উদাহরণ নাসিক্যীভবনের বহু উদাহরণ বাংলা ভাষায় পাওয়া যায়। যেমন: চন্দ্র >  চাঁদ, দন্ত > দাঁত, কণ্টক > কাঁটা, কম্প > কাঁপ, হংস > হাঁস, বংশ > বাঁশ। নাসিক্যীভবনের উদাহরণ বিশ্লেষণ কম্প > কাঁপ এই উদাহরণটি ভেঙে দেখা যাক। নিচের বিশ্লেষণটি ভালো করে পড়ুন। ক্+অ+ম্+প্+অ > ক্ + আঁ + প্ + অ বিশ্লেষণটি লক্ষ করুন। ম্ ব্যঞ্জন লোপ পেয়েছে। এটি নাসিক্য ব্যঞ্জন। সেই সঙ্গে ম্ -এর পূর্ববর্তী স্বরটি দীর্ঘ হয়ে

বর্ণ বিপর্যয় কাকে বলে | ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে

বিপর্যাস বা বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে শব্দের ভিতর দুটি ধ্বনি বা বর্ণ যখন নিজেদের মধ্যে স্থান বিনিময় করে, তখন তাকে বলে বর্ণবিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় বা বিপর্যাস। স্থান বিনিময় বলতে কী বোঝায়? স্থান বিনিময় বলতে বোঝায় রামের জায়গায় শ্যাম এসে বসবে, শ্যামের জায়গায় গিয়ে বসবে রাম। বলা বাহুল্য, এখানে রাম-শ্যামের বদলে থাকবে দুটি ধ্বনি। যেমন: আমরা অনেকেই 'রিক্সা'-র জায়গায় বলি 'রিস্কা' বা 'জানালা'-র জায়গায় 'জালানা'। বর্ণ বিপর্যয়ের অপর নাম ধ্বনি বিপর্যয় বা বিপর্যাস। বর্ণ বিপর্যয়ের উদাহরণ বিশ্লেষণ এখন আসুন, বর্ণ বিপর্যয়ের একখানা উদাহরণকে বর্ণ বিশ্লেষণ করে ভেঙে দেখি সংজ্ঞায় যা বললাম, ব্যাপারটা ব্যাপারটা ঠিক তাই ঘটছে কিনা। পিশাচ > পিচাশ - বর্ণ বিপর্যয়ের এই উদাহরণটিকে ভাঙবো। পিশাচ = প্ + ই + শ্ + আ + চ্ + অ পিচাশ = প্ + ই + চ্ + আ + শ্ + অ লক্ষ করে দেখুন, সব ঠিকঠাক আছে, শুধু শ্ আর চ্ নিজেদের মধ্যে জায়গা বদল করে নিয়েছে, অর্থাৎ শ্-র জায়গায় এসেছে চ্ এবং চ্-এর জায়গায় গেছে শ্। দূরাগত বর্ণ বিপর্যয় বা স্পুনারিজম রেভারেন্ড উ

ঘোষীভবন কাকে বলে

ঘোষীভবন সম্পর্কে ধারণা (ঘোষীভবন ও অঘোষীভবন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করার জন্য ঘোষ ও অঘোষ ব্যঞ্জন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। প্রয়োজন থাকলে ঘোষ ও অঘোষ ব্যঞ্জন সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে নিন।) কোন অঘোষ ধ্বনি যখন কাছাকাছি কোন ঘোষ ধ্বনির প্রভাবে অথবা বিনা কারণেই ঘোষধ্বনি তে পরিণত হয় তখন তাকে ঘোষীভবন বলে। ঘোষীভবনের উদাহরণ ১: কাক > কাগ, ২: শাক > শাগ, ৩: থাপড় > থাবড়, ৪: কাঠগড়া > কাডগড়া, ৫: বক > বগ ইত্যাদি। উপরের ৩ ও ৪ নং উদাহরণে ড় ঘোষ ধ্বনির প্রভাবে যথাক্রমে প>ব ও ঠ>ড হয়েছে। অন্য উদাহরণগুলিতে কোনো ঘোষ ধ্বনির প্রভাব ছাড়াই অঘোষ ধ্বনি ঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হয়েছে। ঘোষ ধ্বনির প্রভাব ছাড়াই অঘোষ ধ্বনি যখন ঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হয়, তখন অনেকেই তাকে স্বতঃঘোষীভবন নামে আলাদা একটি ধ্বনি-পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। আমাদের মতে এ রকম আলাদা নামকরণ না করলেও চলে। উদাহরণ বিশ্লেষণ: কাঠগড়া > কাডগড়া। এই উদাহরণে অঘোষ ধ্বনি ঠ রূপান্তরিত হয়ে ঘোষধ্বনি ড-তে পরিণত হয়েছে। অঘোষীভবন কাকে বলে পাশাপাশি অবস্থিত অঘোষ ধ্বনির প্রভাবে অথবা বিনা কারণেই ঘোষধ্বনি যদি অঘোষ ধ্বনিতে পরিণ

স্বরাগম কাকে বলে

স্বরাগমের সংজ্ঞা যত প্রকারের ধ্বনি পরিবর্তন বাংলা ভাষায় দেখা যায়, তার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা হলো স্বরের আগম বা স্বরাগম। স্বরাগম বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে এবং স্বরাগম তিন প্রকার হতে পারে। ১: আদি স্বরাগম, ২: মধ্য স্বরাগম ও ৩: অন্ত্য স্বরাগম। স্বরাগমের সংজ্ঞা শব্দের আদিতে, মধ্যে বা অন্তে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে স্বরাগম বা স্বরের আগম বলা হয়।  আদি স্বরাগম কাকে বলে সাধারণত শব্দের গোড়ায় শিস-ধ্বনি সমন্বিত যুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে ঐ যুক্ত ব্যঞ্জনের উচ্চারণ প্রস্তুতি রূপে একটি বাড়তি স্বরধ্বনির আগমন ঘটে। এই প্রক্রিয়াকে আদি স্বরাগম বলে। আদি স্বরাগমের উদাহরণ  স্পর্ধা > আস্পর্ধা, স্পর্শ > ইস্পর্শ, স্পষ্ট > ইস্পষ্ট, স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন > ইস্টিশন ইত্যাদি।  মধ্য স্বরাগম মধ্য স্বরাগম বা স্বরভক্তি আগেেই  আলোচনা করেছি।  পড়ার জন্য উপরের লিংকে টাচ করুন। অন্ত্য স্বরাগম কাকে বলে শব্দের শেষে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে অন্ত্য স্বরাগম বলে।  অন্ত্য স্বরাগমের উদাহরণ বেঞ্চ > বেঞ্চি, জুল্‌ফ্ > জুলফি, বর্ফ > বরফি, মর্দ > মদ্দা, মুর্গ

সমীভবন কাকে বলে ও কয় প্রকার | ব্যঞ্জন সংগতি কাকে বলে

ছবি
সমীভবন কথার অর্থ ও সমীভবনের সংজ্ঞা সমীভবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আসুন জেনে নিই সমীভবন কথাটির অর্থ কী। সমীভবন মানে সমান হ‌ওয়া বা এক হ‌ওয়া। সমীভবনে দুটি ভিন্ন ধ্বনির এক ধ্বনিতে পরিণত হ‌ওয়া বোঝায়। তবে সব সময় একেবারে এক ধ্বনিতে পরিণত হয় না, এক বর্গের কাছাকাছি ধ্বনিতে পরিণত হলেও তা সমীভবন হিসেবে গণ্য হয়। সমীভবন কাকে বলে? সমীভবনের সংজ্ঞা হিসেবে আমরা বলতে পারি: পাশাপাশি বা কাছাকাছি উচ্চারিত দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জনের একটি অপরটির প্রভাবে বা দুটিই পরস্পরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে এক‌ই বা এক‌ই ধরনের ব্যঞ্জনে পরিণত হলে তাকে সমীভবন বা ব্যঞ্জন সংগতি বলে। সমীভবনের অপর নাম সমীকরণ। সমীভবনের উদাহরণ ও বিশ্লেষণ সমীভবনের কয়েকটি প্রচলিত উদাহরণ হল: দুর্গা>দুগ্গা, বড়দা > বদ্দা, উৎসব > উচ্ছব, ধর্ম > ধম্ম, বৎসর > বচ্ছর, পদ্ম > পদ্দ , মহাত্মা > মহাত্তা ইত্যাদি। সমীভবনের দুটি উদাহরণ আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি ১: উৎসব > উচ্ছব। এখানে দেখছি ৎ ও স দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে চ ও ছ হয়ে গেছে। চ ও ছ আলাদা হলেও কাছাকাছি। তাই বলা যায় দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নিকটবর্ত

স্বরভক্তি কাকে বলে

ছবি
স্বরভক্তির সংজ্ঞা ও ধারণা শব্দমধ্যস্থ যুক্তব্যঞ্জনের মাঝখানে একটি স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে যুক্তব্যঞ্জন ভেঙে যায়। এই ঘটনাকে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বা মধ্যস্বরাগম বলে। স্বরভক্তি কথার অর্থ কী, এই নিয়ে অনেকের‌ই ধারণা স্পষ্ট নয়। স্বরভক্তি কথাটির ব্যুৎপত্তি হল স্বর+√ভজ্+ক্তি। এই √ভজ্ ধাতুর অর্থ ভাগ করা। আর 'ভক্তি' কথার অর্থ সেই ভাগ করার কাজটি। স্বরভক্তিতে স্বরের দ্বারা যুক্তব্যঞ্জনের 'ভক্তি', অর্থাৎ বিভাজন ঘটে, তাই একে স্বরভক্তি বলে।  এই গেলো স্বরভক্তির কথা। এখন প্রশ্ন হলো, একে বিপ্রকর্ষ বলে কেন? বিপ্রকর্ষ কথার অর্থ কী? বিপ্রকর্ষ কথার অর্থ হলো অপনয়ন বা অপসারণ বা দূরে স্থাপন। স্বরভক্তিতে দুটি ব্যঞ্জনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয় বা একটি ব্যঞ্জনকে অপর ব্যঞ্জনের থেকে দূরে স্থাপন করা হয়, তাই একে বিপ্রকর্ষ বলে। বিপ্রকর্ষ কথার বিপরীত শব্দ হল সন্নিকর্ষ।  স্বরভক্তির উদাহরণ ও বিশ্লেষণ স্বরভক্তির উদাহরণ বাংলা ভাষায় প্রচুর দেখা যায়। যেমন: কর্ম>করম, ধর্ম>ধরম, বর্ষা>বরষা, স্নান>সিনান, ভক্তি>ভকতি, ত্রুপ > তুরুপ প্রভৃতি। এখন আমরা একটি উদাহরণের ধ্বনি-বিশ্লেষ

অভিশ্রুতি কাকে বলে?

অভিশ্রুতির সংজ্ঞা ও ধারণা অপিনিহিতির ফলে এগিয়ে আসা ই বা উ তার পাশাপাশি স্বরধ্বনির সাথে অভ্যন্তরীণ সন্ধিতে মিলিত হয়ে স্বরধ্বনির যে পরিবর্তন ঘটায়, তাকে অভিশ্রুতি বলে।   অন্য ভাবে বলা যায়: অপিনিহিত ই বা উ যখন তার পাশাপাশি স্বরধ্বনিকে প্রভাবিত করে এবং নিজেও তার সঙ্গে মিশে যায়, তখন তাকে অভিশ্রুতি বলে। অভিশ্রুতির উদাহরণ করিয়া > ক‌ইর‌্যা > করে (উচ্চারণ 'কোরে') দেখিয়া > দেইখ্যা > দেখে গাছুয়া > গাউছা > গেছো ভাতুয়া > ভাউতা > ভেতো কন্যা > ক‌ইন্যা > কনে উপরের উদাহরণগুলিতে প্রথমে অপিনিহিতি ও তার পর অভিশ্রুতি দেখানো হয়েছে। এখন আমরা অভিশ্রুতির একটি উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখবো আসলে এখানে কী ঘটছে। ক‌ইর‌্যা > করে -- এই উদাহরণটিকে ভেঙে দেখবো। ক্ + অ + ই + র্ + য্ + আ > ক্ + অ + র্ + এ এখানে দেখা যাচ্ছে  ১: ক্, অ, র্ ধ্বনি অপরিবর্তিত রয়েছে। ২: য্ ধ্বনি লোপ পেয়েছে। ৩: ই স্বরধ্বনি লুপ্ত হয়েছে এবং আ-এর বদলে এ স্বরধ্বনি এসেছে। এই তৃতীয় ঘটনাটিই আসলে অভিশ্রুতি। অপিনিহিত স্বর ই এবং সন্নিহিত স্বর আ এক ধরনের সন্ধিতে মিলিত হয়ে এ স্বরধ্বনিতে পরিণত হয়

স্বরসঙ্গতি কাকে বলে ও কয় প্রকার

ছবি
 স্বরসঙ্গতির সংজ্ঞা পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বর, পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বর, পারস্পরিক প্রভাবে উভয় স্বর অথবা উভয় স্বরের প্রভাবে মধ্যবর্তী (তৃতীয়) স্বরের পরিবর্তন ঘ'টে স্বরের যে সামঞ্জস্য সাধিত হয়, তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। সংজ্ঞাটি কি খুব কঠিন লাগছে? গুলিয়ে যাচ্ছে? গুলিয়ে যাবে না, যদি আমরা সংজ্ঞাটি বুঝে নিই। মুখস্থ করার চেষ্টা করলেই গুলিয়ে যাবে। আপাতত এইটুকু বুঝলেই চলবে যে, স্বরসঙ্গতিতে স্বরের পরিবর্তন ঘটে এবং সেই পরিবর্তনের ফলে স্বরের সামঞ্জস্য সাধিত হয়। এবার আসুন স্বরসঙ্গতির প্রকারভেদ আলোচনা করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংজ্ঞাটিও ভালো করে বুঝে নেবো। স্বরসঙ্গতি কয় প্রকার স্বরসঙ্গতি চার প্রকার: প্রগত স্বরসঙ্গতি, পরাগত স্বরসঙ্গতি, অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি ও মধ্যগত স্বরসঙ্গতি। প্রগত স্বরসঙ্গতি পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরের পরিবর্তন ঘটে যে স্বরসঙ্গতি হয়, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন:  কুয়া > কুয়ো। উদাহরণটির একটু ধ্বনি বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। ক্+উ+য়্+আ > ক্+উ+য়্+ও।  দেখা যাচ্ছে পূর্ববর্তী উ স্বরটি অপরিবর্তিত রয়েছে, পরবর্তী আ স্বরটি বদলে

অপিনিহিতি কাকে বলে

অপিনিহিতির সংজ্ঞা ও উদাহরণ শব্দমধ্যস্থ ই বা উ-কে তার স্বাভাবিক স্থানের অব্যবহিত পূর্ববর্তী স্থানে উচ্চারণ করার রীতিকে অপিনিহিতি বলে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলে দেওয়া প্রয়োজন: শব্দের যে কোনো স্থানে অবস্থিত ই বা উ-তে অপিনিহিতি ঘটে না। ই বা উ যখন ব্যঞ্জনের পরে থাকে, তখন‌ই অপিনিহিতি হবার সম্ভাবনা থাকে। অপিনিহিতি কথার অর্থ কী? অপিনিহিতি কথার অর্থ হল পূর্বে স্থাপন। অপিনিহিতিতে ই বা উ স্বরকে পূর্বে স্থাপন করা হয়। বর্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা এখন অপিনিহিতির ধারণাটি স্পষ্ট করে বুঝে নেবো। অপিনিহিতির উদাহরণ ব্যাখ্যা আজি>আইজ্ : এটি অপিনিহিতির একটি উদাহরণ। এই উদাহরণটিকে আমরা ভেঙে দেখবো ই স্বরধ্বনি কী ভাবে এক ঘর মাত্র এগিয়ে গেছে। আ+জ্+ই > আ+ই+জ্ বর্ণ বিশ্লেষণের দ্বারা দেখা যাচ্ছে 'ই' স্বরটি এক ঘর এগিয়ে গেছে। অপিনিহিতিতে ই বা উ স্বর এক ঘরের বেশি এগোবে না। আর‌ও কয়েকটি উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখি। দেখিয়া>দেইখ্যা দ্+এ+খ্+ই+য়্+আ > দ্+এ+ই+খ্+য্+আ (য়=য) উপরের উদাহরণে ই স্বরটি প্রথমে খ-এর পরে ছিলো, অপিনিহিতির ফলে খ চলে গেছে ই-র পর, ই এক ঘর এগিয়ে গেছে। অপিনিহিতির একটি বিশেষ