স্বরভক্তি কাকে বলে
স্বরভক্তির সংজ্ঞা ও ধারণা
শব্দমধ্যস্থ যুক্তব্যঞ্জনের মাঝখানে একটি স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে যুক্তব্যঞ্জন ভেঙে যায়। এই ঘটনাকে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বা মধ্যস্বরাগম বলে।
স্বরভক্তি কথার অর্থ কী, এই নিয়ে অনেকেরই ধারণা স্পষ্ট নয়। স্বরভক্তি কথাটির ব্যুৎপত্তি হল স্বর+√ভজ্+ক্তি। এই √ভজ্ ধাতুর অর্থ ভাগ করা। আর 'ভক্তি' কথার অর্থ সেই ভাগ করার কাজটি। স্বরভক্তিতে স্বরের দ্বারা যুক্তব্যঞ্জনের 'ভক্তি', অর্থাৎ বিভাজন ঘটে, তাই একে স্বরভক্তি বলে।
এই গেলো স্বরভক্তির কথা। এখন প্রশ্ন হলো, একে বিপ্রকর্ষ বলে কেন? বিপ্রকর্ষ কথার অর্থ কী? বিপ্রকর্ষ কথার অর্থ হলো অপনয়ন বা অপসারণ বা দূরে স্থাপন। স্বরভক্তিতে দুটি ব্যঞ্জনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয় বা একটি ব্যঞ্জনকে অপর ব্যঞ্জনের থেকে দূরে স্থাপন করা হয়, তাই একে বিপ্রকর্ষ বলে। বিপ্রকর্ষ কথার বিপরীত শব্দ হল সন্নিকর্ষ।
স্বরভক্তির উদাহরণ ও বিশ্লেষণ
স্বরভক্তির উদাহরণ বাংলা ভাষায় প্রচুর দেখা যায়। যেমন: কর্ম>করম, ধর্ম>ধরম, বর্ষা>বরষা, স্নান>সিনান, ভক্তি>ভকতি, ত্রুপ > তুরুপ প্রভৃতি। এখন আমরা একটি উদাহরণের ধ্বনি-বিশ্লেষণ করে দেখবো, কী ভাবে স্বরের আগমনের ফলে যুক্ত ব্যঞ্জনের 'ভক্তি' ঘটছে।
স্নান>সিনান উদাহরণটিকে ভাঙলে পাবো:
স্+ন্+আ+ন্ > স্+ই+ন্+আ+ন্
এখানে দেখা যাচ্ছে স্ ও ন্ যুক্ত ব্যঞ্জন ছিলো। দুইয়ের মাঝে ই স্বর আসার ফলে দুই ব্যঞ্জনের মাঝে ভাঙন এলো।
স্বরভক্তি ও মধ্যস্বরাগম কি একই?
স্বরভক্তি ও মধ্যস্বরাগম কি একই? এই প্রশ্ন বার বার শুনতে হয়। ইতিপূর্বে 'স্বরভক্তি' কথাটির অর্থ ব্যাখ্যা করেছি। সেখানে দেখলাম স্বরের আগমনটিই শেষ কথা নয়, সেই সঙ্গে জড়িয়ে আছে যুক্ত ব্যঞ্জনের ভাঙনের ব্যাপারটিও। তাহলে যদি এমন হয় যে, শব্দের মধ্যে স্বরের আগমন তো হলো, কিন্তু কোনো যুক্ত ব্যঞ্জনের ভাঙন হলো না। হয়তো যুক্ত ব্যঞ্জন ছিলোই না, তবুও একটি মধ্যস্বরের আগম ঘটলো (যেমন: মার>মাইর)। তখন কি আমরা তাকে স্বরভক্তি বলবো? আমাদের উত্তর হলো: না। সেই ক্ষেত্রে মধ্যস্বরাগম হলেও স্বরভক্তি হয়নি। তাই প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণে স্বরভক্তি ও মধ্যস্বরাগমকে অভিন্ন রূপে দেখানো হলেও স্বরভক্তি কথার ব্যুৎপত্তি বিচার করলে স্বরভক্তি ও মধ্যস্বরাগমকে পুরোপুরি অভিন্ন বলা যায় না। বরং বলা ভালো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মধ্যস্বরাগম ও স্বরভক্তি সমার্থক, সব ক্ষেত্রে নয়।
স্বরভক্তির গুরুত্ব
বাংলা ভাষায় স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বরভক্তির ফলে কঠিন ও দুরুচ্চার্য যুক্ত ব্যঞ্জনের উচ্চারণ সহজ হয়। এ ছাড়া কবিতায় ছন্দ ও সৌন্দর্যের খাতিরে স্বরভক্তির প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন: "দেবতা-মন্দির মাঝে ভকত প্রবীণ/জপিতেছে জপমালা বসি নিশিদিন।"
আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
বরষা = ব্+অ+র্+অ+ষ্+আ। র্ ও ষ্-এর মাঝে কোনো স্বর ছিলো না, ফলে এরা ছিলো যুক্তব্যঞ্জন। অ স্বর দুজনের মাঝে আসার ফলে ভাঙন ঘটলো।