পোস্টগুলি

জুন, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

উপমেয় কাকে বলে | উপমান কাকে বলে

 উপমেয় ও উপমানের ধারণা উপমেয় কাকে বলে উপমেয় কথার আক্ষরিক অর্থ হল: যার উপমা করা হয়, যার উপমা দেওয়া হবে‌, যা উপমার যোগ্য। অর্থালঙ্কারের ক্ষেত্রে যে বস্তুর তুলনা করা হয়, তাকে উপমেয় বলে। বস্তু শব্দটি এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যক্তি, প্রাণী, বস্তু, সব‌ই এখানে বস্তু হিসেবে গণ্য হবে। উপমেয়কে প্রধান বস্তুও বলা হয়। তার কারণ উপমাতে উপমেয়‌ই মূল বর্ণিতব্য বিষয়। উপমেয়ের গুণ বর্ণনা করার লক্ষ্যেই উপমা করা হয়। যেমন: "চাঁদের মতো সুন্দর মুখ" বললে আমরা মুখ কত সুন্দর, সেটাই বোঝাতে চাইছি। তাই মুখ‌ই প্রধান বস্তু বা উপমেয়। উপমান কাকে বলে যার সাথে উপমেয়ের তুলনা করা হয়, তাকে উপমান বলে। যেমন: "আগুনের মতো গরম বাতাস" বললে বাতাসের তুলনা করা হচ্ছে আগুনের সাথে। তাই আগুন উপমান। তুলনায় উপমানের কাজ হলো উপমেয়ের গুণ বর্ণনায় সাহায্য করা। উপমানকে উপমেয়ের গুণ বর্ণনার মানদণ্ড বলা যায়। উপমেয় ও উপমান চেনার উপায় উপমেয় ও উপমান চেনার কয়েককটি খুব সহজ ও কার্যকরী উপায় আছে।  ১: যার কথা আমরা বলতে চাইছি, সেটি হলো উপমেয়। ২: যার সাথে তুলনা, সে উপমান।  ৩: উপমানকে চেনা বেশি স

আক্ষরিক অনুবাদ ও ভাবানুবাদ: পার্থক্য

আক্ষরিক অনুবাদ ও ভাবানুবাদের পার্থক্য  ১: আক্ষরিক অনুবাদে প্রতিটি শব্দের, প্রতিটি বাক্যের হুবহু অনুবাদ করা হয়। ভাবানুবাদে মূল ভাবটি বজায় রেখে নতুন ভাবে বাক্য গঠন করা হয়। ২: আক্ষরিক অনুবাদ নিকৃষ্ট বলে গণ্য হয়। ভাবানুবাদ উৎকৃষ্ট অনুবাদ বলে গণ্য হয়। ৩: দাপ্তরিক ও আইনি কাজকর্মে আক্ষরিক অনুবাদের কিছু উপযোগিতা আছে। ভাবানুবাদের উপযোগিতা শিক্ষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে। ৪: আক্ষরিক অনুবাদে ভাষা সাবলীল হয় না। ভাবানুবাদে ভাষা সাবলীল হয়। ৫: আক্ষরিক অনুবাদে বাক্যের সরলার্থ ছাড়া গূঢ় প্রকাশিত হয় না। ভাবানুবাদে বাক্যের গূঢ় ভাবার্থ প্রকাশ করা যায়। ৬: প্রবাদ, প্রবচন ও বিশিষ্ট বাক্যের আক্ষরিক অনুবাদ সম্ভব হয় না। ভাবানুবাদ যে কোনো বাক্যের‌ই করা যায়। ভাবানুবাদ কাকে বলে

অপাদান কারক চেনার উপায়

অপাদান কারক  যেখান থেকে কোনো কিছু বিচ্যুত, নির্গত, উৎপন্ন, প্রাপ্ত, আরম্ভ, পরিচালিত প্রভৃতি হয়, তাকে অপাদান কারক বলে। অপাদান কারক চেনার জন্য এর প্রতিটি শ্রেণিবিভাগ জেনে রাখা দরকার। তার পর নিচে আমরা অপাদান কারক চেনার উপায় আলোচনা করবো। অপাদান কারকের শ্রেণিবিভাগ ১: স্থান-বাচক অপাদান: যে স্থান থেকে কর্তা বা কর্ম বিচ্যুত হয়, সেই স্থানকে স্থানবাচক অপাদান বলে। যেমন: জলটা গ্লাস থেকে ঢালো। -- গ্লাস অপাদান। ২: উৎস-বাচক অপাদান: যে উৎস থেকে কিছু পাওয়া যায় বা নির্গত হয়, তাকে উৎস বাচক অপাদান বলে।  যেমন: তিল থেকে তেল হয়।  ৩: অবস্থান-বাচক অপাদান: যে স্থান থেকে দূরবর্তী ক্রিয়া পরিচালিত হয়, সেই স্থানকে অবস্থান বাচক অপাদান বলে। যেমন: সে ছাদ থেকে ডাকছে।  ৪: রূপান্তর-বাচক অপাদান: কোনো কিছু থেকে রূপান্তরিত হয়ে অন্য কোনো কিছুতে পরিণত হলে প্রথম পদটি অপাদান কারক হয়। যেমন: দুধ থেকে দ‌ই হয়।  ৫: দূরত্ব-বাচক অপাদান: এক স্থান থেকে অন্য স্থানের দূরত্ব বোঝানো হলে প্রথম স্থানটিকে দূরত্ব বাচক অপাদান বলে। যেমন: কলকাতা থেকে দিল্লি অনেক দূরে। ৬: কাল-বাচক অপাদান: যে সময় থেকে কোনো কিছু শুরু হয়, সেই সময়

ভাবানুবাদ কাকে বলে

ভাবানুবাদ অনুবাদ বলতে বোঝায় ভাষান্তর। এক ভাষার রচনাকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত করাকেই অনুবাদ বলা হয়। অনুবাদ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: আক্ষরিক অনুবাদ, ভাবানুবাদ ও রসানুবাদ। আজকের আলোচনায় আমরা ভাবানুবাদ সম্পর্কে জানবো। ভাবানুবাদ কথার অর্থ হল ভাব অনুসারে অনুবাদ। ভাবানুবাদ = ভাব + অনুবাদ। যে অনুবাদ করার জন্য মূল রচনার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্যের হুবহু অনুবাদ করা হয় না , রচনাটি আগাগোড়া ভালো ভাবে পড়ার পর মূল ভাব বা বক্তব্যটি নতুন ভাবে রচনা করা হয়, তাকে বলে ভাবানুবাদ। তবে ভাবানুবাদ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, রচনার মূল বক্তব্য যেন বদলে না যায়। ইংরেজি থেকে বাংলায় যে অনুবাদ বিভিন্ন পরীক্ষায় করতে দেওয়া হয়, সেগুলি সব সময় ভাবানুবাদ করা উচিত। আক্ষরিক অনুবাদ মানেই নিকৃষ্ট অনুবাদ। তাই আক্ষরিক অনুবাদ কখনোই কাম্য নয়। আক্ষরিক অনুবাদ ও ভাবানুবাদের পার্থক্য পড়ুন। ভাবানুবাদের উদাহরণ পড়ুন

বিভক্তি ও নির্দেশকের পার্থক্য | বিভক্তি ও নির্দেশকের সাদৃশ্য

বিভক্তি ও নির্দেশক আলোচক: অনন্য পাঠক বিভক্তি ও নির্দেশক, উভয়ের বেশ কিছু সাদৃশ্য থাকলেও এরা এক জিনিস নয়। নিচে এদের পার্থক্য ও সাদৃশ্য আলোচনা করা হলো। পার্থক্য ১: বিভক্তি শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে তাকে পদে পরিণত করে। নির্দেশক শব্দের পরে যুক্ত হয়ে বচন নির্দেশ করে। ২: নির্দেশকের পর বিভক্তি যুক্ত হতে পারে। বিভক্তির পর নির্দেশক যুক্ত হতে পারে না। ৩: বিভক্তি অন্বয় সৃষ্টি করে। নির্দেশক অন্বয় সৃষ্টি করতে পারে না। ৪: বিভক্তির পরিবর্তে অনুসর্গ ব্যবহৃত হতে পারে। নির্দেশকের পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহৃত হতে পারে না। ৫: বিভক্তি ধাতুর পরেও যুক্ত হয়। নির্দেশক ধাতুর পরে যুক্ত হতে পারে না। সাদৃশ্য ১: বিভক্তি ও নির্দেশক, উভয়েই শব্দের পরে যুক্ত হয়।  ২: বিভক্তি ও নির্দেশক, উভয়েই পরাধীন রূপমূল, বাক্যের মধ্যে এদের স্বাধীন ব্যবহার নেই। ৩: বিভক্তি ও নির্দেশক, উভয়ের‌ই অর্থবাচকতা আছে, কিন্তু স্বাধীন অর্থ নেই। কারক বিভক্তি ও নির্দেশক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদের পার্থক্য

ছবি
সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ, উভয়‌ই অকারক পদ। উভয়ের সঙ্গেই ক্রিয়ার সরাসরি সম্পর্ক থাকে না। তবু এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিচে সম্বোধন পদ ও সম্বন্ধ পদের পার্থক্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলাম।  সম্বন্ধ ও সম্বোধন পদের পার্থক্য ১: সম্বন্ধ পদে সাধারণত র/এর বিভক্তি যুক্ত থাকে। সম্বোধন পদে সাধারণত বিভক্তি থাকে না (অর্থাৎ শূন্য বিভক্তি থাকে)। ২: সম্বন্ধ পদ বাক্যের গতি ভঙ্গ করে না। সম্বোধন পদ বাক্যের গতি ভঙ্গ করে। ৩: সম্বন্ধ পদ বিশেষ্য‌ও হতে পারে, সর্বনাম‌ও হতে পারে। সম্বোধন পদ শুধু বিশেষ্য‌ই হতে পারে। ৪: সম্বন্ধ পদের পরে কমা চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না। সম্বোধন পদের পরে, আগে অথবা আগে ও পরে কমা চিহ্ন দিতে হয়। ৫: সম্বন্ধ পদ বাক্যের বাড়তি অংশ নয়, এটি উদ্দেশ্য বা বিধেয়ের অন্তর্গত হয়। সম্বোধন পদ বাক্যের বাড়তি অংশ এবং উদ্দেশ্য বা বিধেয়ের অন্তর্গত নয়।  নিচে কারক ও অকারক পদের ধারণা সম্পর্কে আমার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওটি দিলাম। এটা দেখার অনুরোধ র‌ইলো। আশা করি কারক সম্পর্কে অনেক নতুন বিষয় জানা যাবে। আশা করি সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদের পার্থক্য বোঝা গেছে। ইউটিউবে আমার ব

সম্বোধন পদ কাকে বলে

সম্বোধন পদ আলোচক: অনন্য পাঠক যে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদগুলির সাথে ক্রিয়াপদের সরাসরি সম্পর্ক থাকে না, সেগুলি অকারক নামে পরিচিত। বাংলা ব্যাকরণে দুই ধরনের অকারক পদের উল্লেখ পাওয়া যায়। একটির নাম সম্বন্ধ পদ, অন্যটির নাম সম্বোধন পদ। আজকের আলোচনায় আমরা সম্বোধন পদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। এর সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলিও দূর করে নেবো। প্রথমেই জেনে নিই সম্বোধন পদ কাকে বলে। বাক্যের সূচনায়, বাক্যের শেষে, বা মাঝখানে বাক্যের গতি ভঙ্গ করে, কাউকে ডাকা বা সম্বোধন করা হলে, যে পদটির দ্বারা এই সম্বোধন করা হয়, তাকে সম্বোধন পদ বলে। নিচে উদাহরণের মাধ্যমে সম্বোধন পদ সম্পর্কে ধারণাটি আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হল। উদাহরণ ১: মা, আমাকে জল দাও। -- এই বাক্যে সম্বোধন পদ 'মা'। এখানে মনে হতে পারে যে, মা তো কর্তা! কারণ মা-ই জল দেবে। কিন্তু তা নয়। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে এই বাক্যের কর্তা 'তুমি' ঊহ্য আছে। এই বাক্যের কর্তা যে 'তুমি', তা বোঝার জন্য ক্রিয়াপদটি লক্ষ করুন। 'দাও' যেখানে ক্রিয়া, কর্তা সেখানে অবশ্যই 'তুমি'। 'মা' কর্তা হলে বর্তমান অনুজ্ঞায় ক্রিয়া হত

বহুব্রীহি সমাস চেনার উপায়

বহুব্রীহি সমাস চেনার কৌশল বহুব্রীহি সমাস চিনতে অনেকেই অসুবিধায় পড়েন। তাই আজকের আলোচনায় কতকগুলি শর্টকাট টেকনিক জানাবো, যার সাহায্যে বহুব্রীহি সমাস মনে রাখা বা চেনা অনেক সহজ হবে। তবে প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে, যে কোনো সমাস চেনার জন্য সমাসবদ্ধ পদটির অর্থ জানতে হবে। সমাসবদ্ধ পদের অর্থ না জানলে কোনো ভাবেই সমাস চেনা সম্ভব নয়। এ ছাড়া এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা বলে দেওয়া উচিত যে, শর্টকাট পদ্ধতি জানার পাশাপাশি প্রতিটি অধ্যায় বিস্তারিত পড়ে নেওয়া দরকার। ১: ব্যাসবাক্যের মধ্যে 'যার' /'যাঁর' পদটি থাকলে সেটি বহুব্রীহি সমাস হবে। যেমন: নীল অম্বর যাঁর - নীলাম্বর, বীণা পাণিতে যাঁর - বীণাপাণি। ২: সমস্তপদের শেষে 'ক' প্রত্যয় থাকলে বহুব্রীহি সমাস হবে। যেমন: সস্ত্রীক, সকর্মক, অকর্মক, অপুত্রক প্রভৃতি‌। এখানে খেয়াল রাখতে হবে শেষের ক যেন প্রত্যয় হিসেবে থাকে। ক যদি মূল শব্দের মধ্যেই থাকে, তাহলে বহুব্রীহি সমাস নাও হতে পারে। ক-এর পরিবর্তে 'অক' প্রত্যয় থাকলেও চলবে না। ৩: ব্যাসবাক্যের শুরুতে 'নেই'/'নাই' শব্দ এবং শেষে 'যার'/'যাঁর'/'যে

নিমিত্ত কারক কাকে বলে

ছবি
নিমিত্ত কারক নিমিত্ত কারক বাংলা ব্যাকরণের একটি বিতর্কিত কারক। এই বিতর্কের বিষয়ে নিচে সংক্ষেপে বলছি ; তার আগে জেনে নিই নিই নিমিত্ত কারক কাকে বলে। কর্তা যার জন্য, যার উদ্দেশ্যে বা যে অভিপ্রায়ে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে নিমিত্ত কারক বলে।  নিচে নিমিত্ত কারকের উদাহরণগুলি লক্ষ করুন। উদাহরণ ১: তোমার জন্য কলম আনবো। -- নিমিত্ত কারকে 'জন্য' অনুসর্গ। ২: মহারাজ শিকারে গেছেন। -- নিমিত্ত কারকে 'এ' বিভক্তি। ৩: সখি, জলকে চল। -- নিমিত্ত কারকে 'কে' বিভক্তি। ৪: চিকিৎসার উদ্দেশ্যে শহরে এসেছি। -- নিমিত্ত কারকে 'উদ্দেশ্যে' অনুসর্গ। নিমিত্ত কারকের প্রকারভেদ নিমিত্ত কারক দুই ভাবে হয়: ১: ফলভোগী অর্থে নিমিত্ত: যার জন্য কাজ করা হয়, কাজের ফল যে ভোগ করে, তা নিমিত্ত কারক হয়। যেমন: দেশের জন্য প্রাণ দেব; তোমার জন্য জামা এনেছি। ২: অভিপ্রায় অর্থে নিমিত্ত: যে অভিপ্রায়ে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তা নিমিত্ত হয়। যেমন: পড়াশোনার জন্য হস্টেলে থাকি। নিমিত্ত কারক বিতর্ক নিমিত্ত কারকের ধারণাটি বাংলা ব্যাকরণে সাম্প্রতিক কালে সংযোজিত হয়েছে। সংস্কৃতে এই ধারণাটি সম্প্রদান কারকের অন্ত

করণ বাচক অপাদান কাকে বলে

করণ-বাচক অপাদান অপাদান কারকের একটি ভিন্ন ধরনের ভাগ এই করণ-বাচক অপাদান। এটি আসলে করণ, কিন্তু বাক্যে প্রয়োগ-বৈচিত্র্যের কারণে অপাদান বলে মনে হয়। যা প্রকৃতপক্ষে করণ, তাকেই যখন অপাদান রূপে প্রয়োগ করা হয়, তাকে করণ-বাচক অপাদান বলে। যদিও আমাদের মনে হয়, এই ভাগটিকে অপাদান না বলে করণ‌ই বলা উচিত। নিচে উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আর‌ও স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি। উদাহরণ ১: সংক্রমণ থেকেই মৃত্যু হয়েছে। -- সংক্রমণ আসলে মৃত্যুর হেতু, তাই করণ কারক, অথচ এই বাক্যে তাকে অপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ২: ভয় থেকে অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। -- ভয় প্রকৃতপক্ষে করণ হলেও এখানে অপাদান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৩: ঐ সামান্য পুঁজি থেকে এত বড় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। -- প্রকৃতপক্ষে পুঁজির সাহায্যে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। কিন্তু এখানে পুঁজি অপাদান হয়েছে। আশা করি বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। ইউটিউবে আমার ব্যাকরণের ক্লাস করার জন্য ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করুন আমার নাম অনন্য পাঠক (Ananya Pathak)। সূচিপত্র

নৈকট্যসূচক স্থানাধিকরণের উদাহরণ

নৈকট্য সূচক স্থানাধিকরণ কাকে বলে স্থানাধিকরণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়: ১: ব্যাপ্তি সূচক স্থানাধিকরণ, ২: ঐকদেশিক/একদেশ সূচক স্থানাধিকরণ ও ৩: নৈকট্য সূচক স্থানাধিকরণ। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো নৈকট্য সূচক স্থানাধিকরণ। নৈকট্য মানে নিকটের ভাব বা কাছাকাছি থাকার ভাব। আমরা জানি যে স্থানে ক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হয়, সেই স্থানকে স্থানাধিকরণ বলে। অনেক সময় দেখা যায় কোনো স্থানের নিকটে ক্রিয়া সম্পাদিত হলেও বলা হয় সেই স্থানেই ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। এই ভাবে যে স্থানের নিকটে বা কাছাকাছি ক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হয়, সেই স্থানকে নৈকট্য সূচক স্থানাধিকরণ বলে। নিচে নৈকট্য সূচক স্থানাধিকরণের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ভালো ভাবে বোঝানো হলো। উদাহরণ ১: বাইপাসে আমার বাড়ি। -- বাইপাস একটি রাস্তা, সেই রাস্তার উপর কার‌ও বাড়ি হতে পারে না। আসলে বাড়িটি অবস্থিত ওই রাস্তার নিকটে। তাই 'বাইপাসে' পদটি নৈকট্যসূচক স্থানাধিকরণ। ২: দরজায় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। -- দরজায় নৈকট্যসূচক স্থানাধিকরণ। প্রকৃতপক্ষে দরজার সামনে গাবি দাঁড়িয়ে আছে। ৩: পুরীতে সমুদ্র আছে। -- আসলে পুরীর নিকটে সমুদ্র আছে। 'পুরীতে' নৈকট্যসূচক

অনুক্ত কর্তা কাকে বলে

অনুক্ত কর্তার ধারণা অনুক্ত কথার আক্ষরিক অর্থ হল 'নয় উক্ত', অর্থাৎ, 'যা বলা হয়নি'।  কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যে কর্তাটি বাক্যের মধ্যে প্রাধান্য পায় না। এই দুই বাচ্যে কর্তা যেহেতু কর্তা রূপে উক্ত বা প্রকাশিত হয় না, তাই এই দুই বাচ্যের কর্তাকে অনুক্ত কর্তা বলে। নিচের উদাহরণগুলি দেখলে অনুক্ত কর্তা কাকে বলে এবং কেন বলে, তা ভালো করে বোঝা যাবে। (বাচ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকলে পড়ে নিন আমার লেখা  বাচ্যের বিস্তারিত আলোচনা। ) অনুক্ত কর্তার উদাহরণ ১: রাবণ রাম কর্তৃ নিহত হন। -- এই বাক্যে রাম প্রকৃত কর্তা হলেও বাক্যে সাক্ষাৎ কর্তার স্থানে রয়েছে রাবণ। রামকে প্রত্যক্ষ কর্তা বলে মনে হচ্ছে না। বাক্যটি কর্মবাচ্যে আছে বলেই এমনটা হচ্ছে। এই বাক্যের প্রকৃত কর্তা 'রাম' অনুক্ত কর্তা। ২: আমার যাওয়া হবে না। -- এই বাক্যে প্রকৃত কর্তা 'আমি'। কিন্তু বাক্যটি ভাববাচ্যে থাকায় কর্তা 'আমি'-কে প্রত্যক্ষ ভাবে কর্তা মনে হচ্ছে না। তাই এটিও অনুক্ত কর্তা। এক‌ই রকম আরও উদাহরণ: ৩: তোমাকে যেতে হবে। -- তোমাকে ৪: জনতার দ্বারা লোকটি প্রহৃত হল। -- জনতা ৫: আমার দ্বারা এ কাজ হবে না। -- আম

তারতম্য বাচক অপাদান কাকে বলে

তারতম্য বাচক অপাদান অপাদান কারকের বেশ কয়েকটি ভাগের মধ্যে একটি বিশিষ্ট ভাগ হল তারতম্য বাচক অপাদান বা তুলনাবাচক অপাদান। যখন দুয়ের মধ্যে তুলনা করা হয়, তখন 'থেকে', 'চেয়ে', 'অপেক্ষা' প্রভৃতি অনুসর্গ-বিশিষ্ট প্রথম পদটিকে তুলনা বাচক অপাদান অপাদান বা তারতম্য বাচক অপাদান বলা হয়। তুলনাবাচক বা তারতম্যবাচক অপাদানের কথা আলোচনা করেছেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ গ্রন্থে এই প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। নিচে তারতম্য বাচক অপাদানের উদাহরণ দেওয়া হল উদাহরণ ১: তোমার চেয়ে আমি বড়ো। -- 'তোমার' তারতম্য বাচক অপাদান। ২: পৃথিবীর চেয়ে চাঁদ ছোটো। -- পৃথিবী  ৩: ভাইয়ের থেকে দাদা ভালো। -- ভাই ৪: এমন সুখের চেয়ে দুঃখ শ্রেয়। -- সুখ ৫: বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়। -- বাঁশ ৬: মহাভারত অপেক্ষা রামায়ণ প্রাচীনতর। -- মহাভারত আশা করি তারতম্য বাচক অপাদান কাকে বলে বোঝা গেছে। ইউটিউবে আমার ভিডিও ক্লাস করার জন্য ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করুন আমার নাম অনন্য পাঠক (Ananya Pathak)। কারক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন   সূচিপত্র

অপভাষা কাকে বলে | অপভাষা কী

অপভাষার সংজ্ঞা ও ধারণা অপভাষা নামটি দিয়েছেন ডঃ সুকুমার সেন। তিনি তাঁর 'ভাষার ইতিবৃত্ত' গ্রন্থে অপভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে যা বলেছেন, তার মর্মার্থ হল: কোনো ভাষা বা উপভাষাকে ভালো ভাবে না জেনে সেই ভাষা ব্যবহার করতে চেষ্টা করলে উচ্চারণ ও ভাষা ব্যবহারে ভুলত্রুটি হবেই। এ রকম ভুলত্রুটি-পূর্ণ ভাষাকে বলে অপভাষা। পতঞ্জলি তাঁর মহাভাষ্যে অপশব্দ কথাটি ব্যবহার করেছেন। ভুল ভাবে উচ্চারিত শব্দকে তিনি অপশব্দ বলেছেন। নিচে অপভাষার উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটি আর একটু স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি।  অপভাষার উদাহরণ হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের বাংলা উচ্চারণ: "হামি আপনাকে চিনে না।"  বাঙালির হিন্দি উচ্চারণ: "মে বাস মে চাপ কে কলকাতা যাতা হুঁ।" ইংরেজ সাহেবের বাংলা উচ্চারণ: "হামি টোমাকে শাসটি ডিটে পারি।" অপভাষার দৃষ্টান্ত হিসেবে এই বাক্যগুলি উল্লেখ করা যায়। একটু চোখ কান খোলা রাখলে আমাদের চারপাশে এমন অপভাষার দৃষ্টান্ত অনেক পাওয়া যাবে। আশা করি অপভাষা সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা দিতে পেরেছি। ইউটিউবে আমার ব্যাকরণ বিষয়ক ক্লাস শোনার জন্য ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করুন আমার নাম অনন্য পাঠক (Ana

ধ্বনি পরিবর্তন মনে রাখার কৌশল

ধ্বনি পরিবর্তন মনে রাখার উপায়  ধ্বনি পরিবর্তন চিনতে অনেকেই অনেক সময় সমস্যায় পড়ে যায়। তাই আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো ধ্বনি পরিবর্তন মনে রাখার কিছু সহজ উপায় বা কৌশল। যদিও ধ্বনি পরিবর্তন মনে রাখার জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল প্রতিটি ধারা থেকে একটি করে উদাহরণ মনে রাখা ও সেই উদাহরণটি বর্ণ বিশ্লেষণ করে বুঝে নেওয়া। এই পদ্ধতির বাইরেও কিছু শর্টকাট টেকনিক জানাবো আজকের পোস্টে। ১: অপিনিহিতি : মূল শব্দে ই-কার বা উ-কার থাকবে এবং যে ব্যঞ্জনের গায়ে এই ই-কার বা উ-কার থাকবে, ধ্বনি পরিবর্তনের পর সেই ব্যঞ্জনের আগে ই বা উ হবে। যেমন: কালি > কাইল। ল-এর গায়ে ই-কার ছিলো, তাই ল-এর আগে ই হলো। ২: সমীভবন : দুটো আলাদা ব্যঞ্জন পাশাপাশি বা যুক্ত অবস্থায় থাকবে। ধ্বনি পরিবর্তনের পর আলাদা ব্যঞ্জন দুটো বদলে এক‌ই ব্যঞ্জন বা পাশাপাশি ব্যঞ্জনে পরিণত হবে (পাশাপাশি ব্যঞ্জন যেমন: ত-থ, দ-ধ, চ-ছ ইত্যাদি)। উদাহরণ: ধর্ম > ধম্ম। র-ম পাশাপাশি ছিলো (রেফ মানে র-এ ম)। পরিবর্তনের পর দুটোই ম হয়ে গেছে। ৩: অভিশ্রুতি : অভিশ্রুতি হয় অপিনিহিতির পর। আগে অপিনিহিতি হবার পর স্বরধ্বনির আর‌ও পরিবর্তন ঘটলেই বুঝতে হবে অভিশ

ব্যাকরণ প্রশ্নোত্তর ১

ব্যাকরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ১: প্রশ্ন: পরের ই-কার ও উ-কার আগে উচ্চারিত হলে তাকে কী বলে? উত্তর: অপিনিহিতি বলে। ২: প্রশ্ন: রিক্সা‌ > রিস্কা - কিসের উদাহরণ? উত্তর: এটি বর্ণবিপর্যয় বা ধ্বনি-বিপর্যয়ের উদাহরণ। ৩: প্রশ্ন: করিয়া > ক‌ইরা > করে কিসের উদাহরণ? উত্তর: এটি অভিশ্রুতির উদাহরণ। (প্রথমে অপিনিহিতি, পরে অভিশ্রুতি।) ৪: প্রশ্ন: যে সন্ধি কোনো নিয়ম মানে না, তাকে কী বলে? উ: তাকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। ৫: প্রশ্ন: শ ষ স হ - এ চারটি বর্ণের নাম কী? উত্তর: এই চারটি বর্ণের নাম উষ্ম বর্ণ। ৬: প্রশ্ন: পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ হলে তাকে কী বলে? উত্তর: পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনের লোপ হলে তাকে বলে মধ্যব্যঞ্জনলোপ বা অন্তর্হতি। ৭: সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে কী বলে? উত্তর: সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে স্বরভক্তি বলে। ৮: লগ্ন > লগগ কোন সমীভবন? উত্তর: এটি প্রগত সমীভবন। কারণ এখানে পূর্ব ব্যঞ্জন গ-এর প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনটি বদলে গেছে। ৯: আদি স্বরাগমের উদাহরণ কোনটি? উত্তর: আদি স্বরাগমের উদাহরণ: স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন &g

দুটি সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে কী বলে

দুটি সমবর্ণের মধ্যে একটির পরিবর্তন দুটি সমবর্ণের মধ্যে একটি পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ব্যঞ্জনে পরিণত হলে সেই পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। বিষমীভবন হল সমীভবনের বিপরীত প্রক্রিয়া। সমীমবনে দুটি বিষম ব্যঞ্জনের মধ্যে একটি বা কখনও দুটিই পরিবর্তিত হয়ে সম ব্যঞ্জনে পরিণত হয়। বিষমীভবনে ঠিক তার উল্টো ঘটনা ঘটে। নিচে বিষমীভবনের উদাহরণ দেওয়া হল। বিষমীভবনের উদাহরণ শরীর > শরীল লাল > নাল

অকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে | সকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে

অকর্মক ও সকর্মক ক্রিয়া অকর্মক ক্রিয়া কী, তা বোঝার জন্য প্রথমে বুঝতে হবে কর্ম কী। কর্ম হল ক্রিয়ার আশ্রয়। ক্রিয়ার কাজ যার উপর প্রযুক্ত হয়, তাকে কর্ম বলে। ক্রিয়াকে 'কী' বা 'কাকে' দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্মটি পাওয়া যায়। যেমন: "আমি ব‌ই পড়ছি।" -- আমি কী পড়ছি? উঃ - ব‌ই। ব‌ই হল কর্ম। (প্রশ্ন করার সময় কর্তা সমেত প্রশ্ন করতে হবে, নয়তো ভুল হতে পারে।) "আমি তোমাকে কথাটা বলবো।" -- কাকে কথাটা বলবো?  উঃ- তোমাকে। তুমি কর্ম। কী বলবো? কথাটা। তাই এই বাক্যে দুটো কর্ম। এই ভাবে কর্ম নির্ণয় করলেই বোঝা যাবে ক্রিয়াটির কর্ম আছে, না নেই। কর্ম থাকলে সেটি হবে সকর্মক ক্রিয়া, না থাকলে হবে অকর্মক ক্রিয়া। যেমন: "আমি খেয়েছি।" এই বাক্যে যদি প্রশ্ন করা হয়, "আমি কী খেয়েছি?", তাহলে যাই হোক একটা উত্তর পাওয়া যাবে। তাই 'খেয়েছি' ক্রিয়াটি সকর্মক। এবার অন্য একটি উদাহরণ দেখুন -- "আমি সকালে হেঁটেছি।" - এই বাক্যে প্রশ্ন করুন। "আমি কী হেঁটেছি?" কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে কি? যাচ্ছে না। তাই এটি অকর্মক ক্রিয়া। নিচে দুই ধরনের ক্রিয়ার অ

প্রযোজ্য কর্তা কাকে বলে | প্রযোজ্য কর্তা কাকে বলে

প্রযোজ্য কর্তা বাংলা ব্যাকরণের প্রযোজ্য কর্তা নিয়ে অনেক জটিলতা আছে। এইসব জটিলতা সমেত পুরো ব্যাপারটি আজ সহজ ভাবে উপস্থাপিত করতে চেষ্টা করবো। প্রযোজ্য কর্তা কাকে বলে, এই প্রশ্নের জবাবে সহজ ভাবে বলা যায়: যে কর্তা অন্য কর্তার প্রযোজনায় কাজ করে, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। প্রযোজ্য কর্তা যার প্রযোজনায় কাজ করে, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। এখন সমস্যা হচ্ছে প্রযোজ্য কর্তা চিনবো কীভাবে? প্রযোজ্য কর্তা চেনার একটি সহজ উপায় আছে। সেটি নিচে উদাহরণের সঙ্গে আলোচনা করছি। প্রযোজ্য কর্তার উদাহরণ ১: বাবা ছেলেকে খেলাচ্ছেন। -- ছেলে প্রযোজ্য কর্তা। ২: দাদু আমাকে গল্প শোনায়। -- আমি প্রযোজ্য কর্তা। ৩: দাদা আমাকে সাইকেল শিখিয়েছে। - আমি প্রযোজ্য। ৪: আমি তোমাকে দৃশ্যটা দেখাবো। - তুমি প্রযোজ্য কর্তা। ৫: বাবু মালীকে কাজ করাচ্ছেন। - মালী প্রযোজ্য কর্তা। ৬: আমি তোমাকে খাওয়াবো। - তুমি প্রযোজ্য কর্তা। উপরের উদাহরণগুলি লক্ষ করলে দেখা যাবে প্রতিটি বাক্যে দুটি করে কর্তা আছে। একজন কাজ করাচ্ছে, অন্যজন কাজ করছে। যেমন: ১ নাম্বার উদাহরণে বাবা খেলাচ্ছেন, ছেলে খেলছে। প্রযোজ্য কর্তা চেনার জন্য এই ভাবে দেখতে হবে দু জন আছে

কারক কাকে বলে | কারক কত প্রকার

কারক কাকে বলে ও কারক কথার ব্যুৎপত্তি কারক কথার ব্যুৎপত্তি হল √কৃ + অক। কৃ ধাতুর অর্থ হল করা। তাই কারক কথার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল 'যে করে'। কিন্তু ব্যাকরণে কারক কথাটি সম্পূর্ণ এই অর্থে ব্যবহৃত হয় না। কারক কাকে বলে বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ককে কারক বলে। পাণিনি বলেছেন "ক্রিয়ান্বয়ী কারকম্।" এর অর্থ: ক্রিয়ার সাথে যার সম্পর্ক আছে, সে কারক। পাণিনির সংজ্ঞা অনুযায়ী যে পদটির সাথে ক্রিয়ার সম্পর্ক, সেই পদটি কারক‌। সুতরাং পাণিনির মত অনুসারে কারকের সংজ্ঞা হ‌ওয়া উচিত: যে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সরাসরি সম্পর্ক আছে, সেই বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে কারক বলে। কারক কত প্রকার কারক ছয় প্রকার: কর্তৃ কারক, কর্ম কারক, করণ কারক, নিমিত্ত কারক, অপাদান কারক, অধিকরণ কারক। সংস্কৃত ব্যাকরণে নিমিত্ত কারক নেই, দান ক্রিয়ার গৌণ কর্মের সঙ্গে নিমিত্তের ধারণাটিও সম্প্রদান কারকের অন্তর্গত। ব্যাকরণবিদরা বাংলা ব্যাকরণ থেকে সম্প্রদান কারককে বাদ দিয়েছেন। সম্প্রদান কারক আসলে গৌণ কর্ম। তবু কেউ কেউ সংস্কৃত ব্যাকরণের মোহ ত্যাগ করতে না পেরে সম্প্রদান কারক

ক্রিয়াবিশেষণ কাকে বলে | ক্রিয়াবিশেষণের উদাহরণ

ক্রিয়াবিশেষণ যে পদগুলি ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, তাদের ক্রিয়াবিশেষণ বলে।  বিষয়টি আর একটু ভেঙে বলার চেষ্টা করি। আমরা জানি, বাক্যের মধ্যে ৫ ধরনের পদ থাকতে পারে: বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, অব্যয় ও ক্রিয়া। এদের মধ্যে বিশেষণ পদের কাজ হল অন্য পদের সম্পর্কে কিছু জানান দেওয়া, বা অন্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ, মাত্রা ইত্যাদি প্রকাশ করা। বিশেষণ পদগুলি ক্রিয়া পদ সম্পর্কেও কিছু কথা জানান দিতে পারে। যেমন: ক্রিয়াটি কী ভাবে হচ্ছে, কতটা হচ্ছে ইত্যাদি। নিচে আমরা কতকগুলি উদাহরণ নিয়ে ক্রিয়াবিশেষণ সম্পর্কে ধারণাটি আরও স্পষ্ট করে নেবো। ক্রিয়াবিশেষণের উদাহরণ ছেলেটি দ্রুত হাঁটছে। -- এই বাক্যে 'দ্রুত' পদটি ক্রিয়াবিশেষণ। যদি প্রশ্ন করা হয় "কেমন ভাবে হাঁটছে?" উত্তর হবে 'দ্রুত'। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে 'দ্রুত' পদটি 'হাঁটছে' ক্রিয়ার ধরন প্রকাশ করছে। এ রকম আরও উদাহরণ:  গাড়িটা হঠাৎ থেমে গেল। - হঠাৎ ঘুড়িটা গোল গোল ঘুরছে। - গোল গোল আচমকা ব্রেক কষলো। - আচমকা বিড়ালটি সন্তর্পণে হাঁটছে‌। - সন্তর্পণে সে আমাকে বিচ্ছিরি ভাবে ডাকলো। - বিচ্ছিরি ভাবে কাজ

প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য

প্রত্যয় ও বিভক্তির পার্থক্য প্রত্যয় ও বিভক্তি উভয়েই শব্দ ও ধাতুর পরে যুক্ত হয়। কিন্তু এই দুইয়ের ভূমিকা সম্পূর্ণ আলাদা। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো প্রত্যয় ও বিভক্তি কি ভাবে কাজ করে, এবং এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি কী কী। সেই সাথে জেনে নেবো প্রত্যয় ও বিভক্তির সাদৃশ্য। ১: প্রত্যয়গুলি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ বা নতুন ধাতু গঠন করে। অপর দিকে বিভক্তিগুলি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী পদ গঠন করে। ২: প্রত্যয়ের কিছুটা অংশ লুপ্ত হতে পারে। যেমন: দর্শন + ষ্ণিক = দার্শনিক। এখানে ষ্ণ্ লোপ পেয়েছে, ইক অবশিষ্ট আছে। বিভক্তির কোনো অংশ লোপ পায় না। যেমন: রাম + এর = রামের।  ৩: শব্দের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যয়কে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়, ধাতুর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যয়কে বলে কৃৎ প্রত্যয়। অপর দিকে শব্দের সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিকে বলে শব্দ-বিভক্তি, ধাতুর সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিকে বলে ধাতু-বিভক্তি বা ক্রিয়াবিভক্তি।  ৪: প্রত্যয় নতুন অর্থসম্পন্ন শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। বিভক্তি কোনো নতুন অর্থ সৃষ্টি করতে পারে না। ৫: প্রত্যয় কোনো ধরনের সম্পর্ক গড়তে পারে না। অপর দিকে বিভক্তি

সন্ধি ও সমাসের সাদৃশ্য | সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য

সন্ধি ও সমাসের মিল-অমিল আজকের আলোচনায় সন্ধি ও সমাসের মিল এবং অমিলগুলি নিয়ে লিখবো।  সন্ধি ও সমাসের সাদৃশ্য ১: সন্ধি ও সমাস, উভয়‌ই নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া। উভয় প্রক্রিয়াতেই নতুন শব্দ গঠিত হয়। ২: সন্ধি ও সমাস, উভয় প্রক্রিয়াতেই পদসংখ্যা হ্রাস পায়।  ৩: সন্ধি ও সমাস, উভয় প্রক্রিয়াই নির্দিষ্ট নিয়ম বা সূত্র মেনে চলে।  ৪: সন্ধি ও সমাস, উভয় প্রক্রিয়াতেই কোনো না কোনো ভাবে একাধিক উপাদানের মিলন ঘটে। নিচে সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য আলোচনা করা হল সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য ১: সন্ধিতে বর্ণের সঙ্গে বর্ণের (ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনির) মিলন হয়। সমাসে পদের সঙ্গে পদের মিলন ঘটে। ২: সন্ধিতে অর্থের কোনো ভূমিকা নেই। সমাসে অর্থের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩: সন্ধিতে অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না। সমাসে অর্থের পরিবর্তন ঘটতে পারে। ৪: সন্ধি ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। সমাস রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। ৫: সন্ধিতে বিভক্তি লুপ্ত হয় না। সমাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভক্তির লোপ ঘটে। সন্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন সমাস সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

মহাভাষ্য কার লেখা | মহাভাষ্য কী

মহাভাষ্য কী সংস্কৃত ব্যাকরণের আদি গুরু পাণিনি অষ্টাধ্যায়ী নামে ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। কিন্তু পাণিনি তাঁর গ্রন্থ রচনা করেন সূত্রাকারে। সূত্রগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা না করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে পাণিনির সূত্রগুলি বোঝা কঠিন। ঋষি কাত্যায়ন পাণিনির অষ্টাধ্যায়ীর উপর টীকাগ্রন্থ 'বার্তিক' রচনা করেন। এরপর পতঞ্জলি অষ্টাধ্যায়ীর পাশাপাশি বার্তিকের উপর আর একটি টীকাগ্রন্থ (ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ) রচনা করেন। এই টীকা গ্রন্থের নাম‌ই মহাভাষ্য। মহাভাষ্যের বঙ্গানুবাদ পিডিএফ ডাউনলোড করতে নিচের লিংকে যান। মহাভাষ্য pdf ডাউনলোড

উপসর্গ ও প্রত্যয়ের পার্থক্য

উপসর্গ ও প্রত্যয় উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মধ্যে অল্প কিছু মিল থাকলেও দুয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিচে এদের পার্থক্যগুলি আলোচনা করা হলো। ১: উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর পূর্বে যুক্ত হয়। প্রত্যয় শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়। ২: উপসর্গের অংশবিশেষ লোপ পায় না। প্রত্যয়ের অংশবিশেষ লুপ্ত হতে পারে। ৩: উপসর্গ যুক্ত হবার ফলে মূল ধাতু বা শব্দের কোনো রকম ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে না। প্রত্যয় যুক্ত হ‌ওয়ার ফলে মূল শব্দ বা ধাতুটির ধ্বনি পরিবর্তন ঘটতে পারে। ৪: নতুন শব্দ গঠনের পাশাপাশি উপসর্গগুলি শব্দ বা ধাতুর অর্থকে পরিবর্তিত করে। প্রত্যয় শুধু নতুন শব্দ গঠন করে।  প্রত্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

উপসর্গ ও অনুসর্গের পার্থক্য

উপসর্গ ও অনুসর্গ উপসর্গ ও অনুসর্গ নাম দুটির মধ্যে মিল থাকলেও আসলে এদের মধ্যে মিল কম, পার্থক্য‌ই বেশি। সত্যি কথা বলতে গেলে উপসর্গ ও অনুসর্গ সম্পূর্ণ পৃথক দুটি জিনিস। আসুন উদাহরণ সহকারে জেনে নিই এদের মধ্যে কী কী পার্থক্য আছে। উপসর্গ ও অনুসর্গের পার্থক্য ১: উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর পূর্বে বসে। অনুসর্গ পদের পরে বসে। যেমন:  উপ + কার = উপকার -- 'উপ' উপসর্গ। তোমার চেয়ে আমি বড়ো। -- 'চেয়ে' অনুসর্গ। ২: উপসর্গের নিজস্ব কোনো স্বাধীন অর্থ নেই। অনুসর্গের স্বাধীন অর্থ আছে।  ৩: উপসর্গগুলি শব্দ বা ধাতুর অর্থকে বদলে দেয়, বা ভিন্ন মাত্রা দান করে। অনুসর্গগুলি পদের সঙ্গে পদের সম্পর্ক গড়ে তোলে, বা অনেক সময় বিভক্তির কাজ‌ও করে। ৪: উপসর্গগুলি নতুন নতুন শব্দ গঠন করতে কাজে লাগে। অনুসর্গের সাহায্যে নতুন শব্দ গঠন করা যায় না। ৫: উপসর্গগুলি পরাধীন রূপমূল, এরা অন্যের আশ্রয় ছাড়া ব্যবহৃত হতে পারে না। অনুসর্গগুলি স্বাধীন রূপমূল, এরা স্বাধীন ভাবে ব্যবহৃত হয়। শব্দ ও পদের পার্থক্য

ধাতু ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য

ধাতু ও শব্দ ধাতু ও শব্দ, এই দুটিই হল ভাষার প্রাথমিক উপাদান। এদের মধ্যে যেমন কিছু মিল রয়েছে, তেমনি কিছু অমিল‌ও রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান মিলগুলি হল: উভয়েই ভাষার প্রাথমিক উপাদান, উভয়ের সঙ্গেই বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদ গঠিত হয়। শব্দ ও ধাতুর মধ্যে পার্থক্যগুলি নিচে আলোচনা করা হলো। ধাতু ও শব্দের পার্থক্য ১: শব্দ থেকে নামপদ সৃষ্টি হয়। ধাতু থেকে ক্রিয়াপদ সৃষ্টি হয়। ২: শব্দের সাথে শব্দবিভক্তি যুক্ত হয়। ধাতুর সাথে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়। ৩: শব্দের সাথে নির্দেশক যুক্ত হতে পারে। ধাতুর সাথে নির্দেশক যুক্ত হতে পারে না। ৪: শব্দের দ্বারা বস্তু বা ভাবের অর্থ বোঝায়। ধাতুর দ্বারা সক্রিয়তার অর্থ বোঝায়।  ৫: শব্দের সাথে তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। ধাতুর সাথে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। ৬: ক্রিয়ার সাথে সম্পর্ক অনুযায়ী শব্দের রূপ বদলায়। কাল ও পুরুষ অনুযায়ী ধাতুর রূপ বদলায়। শব্দ ও পদের পার্থক্য

মৌলিক শব্দ কাকে বলে | সিদ্ধ/মৌলিক শব্দের উদাহরণ

মৌলিক শব্দ কাকে বলে যে শব্দকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বা সিদ্ধ শব্দ বলে।  মৌলিক শব্দকে ভাঙা যায় না। ভাঙতে গেলে অর্থপূর্ণ পাওয়া যাবে না। যেমন: 'জল' শব্দটিকে ভাঙলে পাবো জ্+অ+ল্+অ অথবা জ+ল। কোনো ক্ষেত্রেই অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই 'জল' শদটি মৌলিক শব্দ। নিচে মৌলিক শব্দের আর‌ও উদাহরণ দেওয়া হল। সিদ্ধ/মৌলিক শব্দের উদাহরণ মা, বাবা, গাছ, মাটি, হাত, পা, মাথা, ঘর, বাড়ি, ভোর, সকাল, রাত, সময়, আজ, কাল, কলম, খাতা, ব‌ই, উঁচু, নিচু, বড়, ছোট, কম, বেশি, আলো, ফল, ফুল, বীজ, শাক, আম, জাম, লিচু, সোজা, সরল, চা, কফি, হাওয়া, বাতাস, গ্রাম, শহর, গলি, পথ, সড়ক, মোড়, দোকান, প্রভৃতি।  সতর্কতা: মৌলিক শব্দের উদাহরণ দিতে গিয়ে অনেক সময় মারাত্মক ভুল হয়ে যায়। মৌলিক শব্দের উদাহরণ দেওয়ার সময় তৎসম শব্দ (সংস্কৃত শব্দ) এড়িয়ে যাওয়া ভালো। কারণ সংস্কৃতের অনেক শব্দকে দেখে মৌলিক শব্দ বলে মনে হলেও আসলে সেগুলি সাধিত শব্দ। যেমন: অন্ধকার, সুন্দর, দেশ, সহজ, প্রভাত, পিতা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থা প্রভৃতি শব্দগুলি মৌলিক শব্দ নয়। কিন্তু হঠাৎ করে এগুলির মধ্যে কোনো কোনোটিকে মৌলিক শব্

নির্দেশক কাকে বলে

নির্দেশক কী নির্দেশক হল এক ধরনের ধ্বনিগুচ্ছ, যেগুলির স্বাধীন অর্থ নেই, কিন্তু শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বচন নির্দেশ করে। ব্যাকরণে এরা লগ্নক নামেও পরিচিত। এদের আর এক নাম পদাশ্রয়ী নির্দেশক। কেউ কেউ পদাশ্রয়ীর পরিবর্তে শব্দাশ্রয়ী বলতে চান।   নিচে নির্দেশকের উদাহরণ এবং বিভক্তির সাথে এর পার্থক্য আলোচনা করা হল। নির্দেশকের উদাহরণ টি, টা, খান, খানি, খানা, গুলি, গুলো প্রভৃতি হল নির্দেশকের উদাহরণ। এই নির্দেশকগুলি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে একবচন বা বহুবচন নির্দেশ করে। নির্দেশক ও বিভক্তির পার্থক্য নির্দেশক ও বিভক্তি উভয়ের‌ই স্বাধীন অর্থ নেই এবং উভয়েই শব্দের শেষে যুক্ত হয়, তবু এই দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেমন: ১: বিভক্তি শব্দকে পদে পরিণত করে। নির্দেশক শুধুমাত্র বচন নির্দেশ করে। ২: নির্দেশকের পর বিভক্তি যুক্ত হতে পারে, কিন্তু বিভক্তির পর নির্দেশক যুক্ত হতে পারে না। যেমন: "ছেলেটিকে ডাকো।" -- নির্দেশকের পর বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। কিন্তু " ছেলেকেটি ডাকো" -- এমনটা হয় না।

সমধাতুজ কর্তা কাকে বলে

সমধাতুজ কর্তা সমধাতুজ কর্তা সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে 'সমধাতুজ' মানে কী। সমধাতুজ মানে এক‌ই (সম) ধাতু থেকে যার জন্ম হয়েছে। আমরা জানি ক্রিয়ার জন্ম হয় ধাতু থেকে। কিন্তু অনেক সময় ধাতু থেকে কর্তার‌ও জন্ম হতে পারে। এমনটা হলে সেই কর্তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে। নিচে আমরা সমধাতুজ কর্তার সংজ্ঞা দেবো এবং উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখবো। সমধাতুজ কর্তা কাকে বলে বাক্যের ক্রিয়াপদটি যে ধাতু থেকে এসেছে, কর্তাটিও যদি সেই ধাতু থেকেই নিষ্পন্ন হয়, তবে সেই কর্তাকে বলে সমধাতুজ কর্তা।  সমধাতুজ কর্তার উদাহরণ খেলোয়াড় খেলছে। -- এই বাক্যের ক্রিয়াপদ 'খেলছে'। এই ক্রিয়াটির ধাতু √খেল্। কর্তা 'খেলোয়াড়' শব্দটিও √খেল্ ধাতু থেকে এসেছে (√খেল্ + ওয়াড় = খেলোয়াড়)। তাই খেলোয়াড় কর্তাটি সমধাতুজ কর্তা। এমনি আরও কিছু উদাহরণ:  পড়ুয়া পড়ছে।  গায়ক গান গায়। নাচিয়েরা নাচবে। এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার। অনেক সময় কর্তাটি সংস্কৃত ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ও ক্রিয়াটি এক‌ই অর্থযুক্ত বাংলা ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হলেও কেউ কেউ কর্তাটিকে সমধাতুজ বলতে চান। যেমন: পাঠক পড়ছে। নর্তক নাচছে।

সমধাতুজ করণ কাকে বলে

সমধাতুজ করণ করণ কারকের অনেকগুলি ভাগের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ হল সমধাতুজ করণ। সমধাতুজ করণ কাকে বলে তা জানার আগে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার 'সমধাতুজ' কথার অর্থ কী। সমধাতুজ কথার অর্থ হল : সম (এক‌ই) ধাতু থেকে জন্মেছে যা। সোজা ভাষায় বললে অর্থটি হয়: এক‌ই ধাতু থেকে যার জন্ম হয়েছে। ধাতু বলতে বোঝায় ক্রিয়ার মূল। ধাতু কী, তা জানা না থাকলে ধাতুর আলোচনাটি পড়ে নিন। সমধাতুজ করণ কাকে বলে:  বাক্যের ক্রিপদটি যে ধাতু থেকে এসেছে, করণ কারকটিও যদি সেই ধাতু থেকেই জন্মায়, তাহলে সেই করণকে বলা হয় সমধাতুজ করণ। নিচে সমধাতুজ করণের উদাহরণ বিশ্লেষণ করে বোঝানো হল। সমধাতুজ করণের উদাহরণ কী বাঁধনে বেঁধেছো আমায়। -- এই বাক্যে ক্রিয়াপদ 'বেঁধেছো'। এই ক্রিয়ার ধাতু হল √বাঁধ্। এই বাক্যের করণ হল 'বাঁধন'। এই পদটির‌ও জন্ম হয়েছে √বাঁধ্ ধাতু থেকেই (√বাঁধ্ + অন = বাঁধন)। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ক্রিয়াপদ ও করণ এক‌ই ধাতু থেকে জন্মেছে। তাই বাঁধন করণটিকে বলা হয় সমধাতুজ করণ। এমনি আরও কিছু উদাহরণ হল: ঝাড়ন দিয়ে ঝুলগুলো ঝাড়লাম। কাটারি দিয়ে ডালপালাগুলো কাটো। বেলনা দিয়ে রুটি বেলছি।  এখানে

একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে

একশেষ দ্বন্দ্ব দ্বন্দ্ব সমাসের একটি বিশেষ ভাগ হল একশেষ দ্বন্দ্ব। এই সমাস সম্পর্কে জানার আগে আসুন জেনে নিই  'একশেষ' কথার অর্থ কী। 'শেষ' কথার প্রচলিত অর্থ সমাপ্ত হলেও এর আক্ষরিক অর্থ হল 'অবশিষ্ট' বা যা পড়ে থাকে (স্মরণীয়: ভাগ করার পর যা পড়ে থাকে, তাকে ভাগশেষ বলে)। 'একশেষ' কথার অর্থ হল যাতে এক পড়ে থাকে । একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসে একটি পদ অবশিষ্ট থাকে, বাকিগুলি লোপ পায়। নিচে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দেওয়া হল। একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের সংজ্ঞা যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলির মধ্যে একটিই অবশিষ্ট থাকে, অন্য পদগুলি লোপ পায় এবং ঐ একমাত্র পদটির বহুবচনের রূপের সাহায্যে সমস্তপদটি গঠন করা হয়, তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব বলে। এরপর আমরা এই সমাসের উদাহরণ ও তার ব্যাখ্যা করে দেখবো। দ্বন্দ্ব সমাসের অন্যান্য ভাগ ও বিস্তারিত আলোচনা একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ বেশি পাওয়া যায় না। এর কয়েকটি উদাহরণ হল আমি, তুমি ও সে = আমরা তুমি ও সে = তোমরা তুই ও সে = তোরা বাবা, কাকা ও জ্যাঠা = বাবারা ব্যাখ্যা: প্রথম উদাহরণটি একটু ব্যাখ্যা করে দ

পরিভাষা কাকে বলে | পারিভাষিক শব্দ বলতে কী বোঝায়

পরিভাষা বা পারিভাষিক শব্দ 'পরিভাষা' বলতে বোঝায় সুনির্দিষ্ট অর্থবোধক শব্দ। এখন কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন সুনির্দিষ্ট অর্থ বলতে কী বোঝায়? এর উত্তর হল: ভাষায় ব্যবহৃত শব্দগুলির অর্থ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবর্তনশীল। প্রয়োগভেদে একটি শব্দের অর্থ বিভিন্ন রকম হতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষামূলক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক প্রভৃতি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এমন কিছু শব্দের দরকার পড়ে, যাদের অর্থ সবসময় স্থির থাকবে, প্রয়োগ ভেদে সহজে বদলাবে না।  পরিভাষার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সংক্ষেপ। পরিভাষার আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো: কোনো ভাষায় ব্যবহৃত পরিভাষাগুলির সমার্থক শব্দ ঐ ভাষায় সাধারণত পাওয়া যায় না। অর্থাৎ পরিভাষার সমার্থক শব্দ হয় না। অভিধানে পরিভাষা অর্থে বলা হয়েছে সংক্ষেপার্থ শব্দ।  নিচে পরিভাষার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল। পরিভাষার উদাহরণ পরিভাষার কিছু উদাহরণ নিলেই পরিভাষা সম্পর্কে ধারণাটি স্পষ্ট হবে।  ব্যাকরণের পরিভাষা: কারক, সমাস, বাচ্য, বাক্য, বিভক্তি, নির্দেশক, অব্যয়, অনুকার শব্দ, উপসর্গ প্রভৃতি। গাণিতিক পরিভাষা: সংখ্যা, লসাগু, সমীকরণ, বর্গমূল, বর্গ, ঘনমূল, শতাংশ, বহিঃকোণ, ব

কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ কী | কারক শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী

কারক শব্দের অর্থ কারক ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা জানি কারক বলতে বোঝায় ক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ক। কিন্তু কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ বা ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী? আজকের আলোচনায় আমরা তা জানবো। 'কারক' একটি সংস্কৃত শব্দ। এই শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ জানার জন্য প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার কারক শব্দের ব্যুৎপত্তি বা প্রকৃতি-প্রত্যয়। কারক শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করলে পাওয়া যাবে √কৃ + অক = কারক।  কৃ ধাতুর অর্থ করা। ধাতুর সঙ্গে অক প্রত্যয় যোগ করলে ধাতুর কাজটি যে করে, তাকে বোঝায়। যেমন: দৃশ্ + অক = দর্শক। অর্থ: যে দেখে। এই নিয়মে কারক শব্দের‌ও ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বেরিয়ে আসে। কৃ ধাতুর অর্থ হল 'করা' (do), তাই কারক কথার অর্থ হয় 'যে করে' বা 'ক্রিয়ার সম্পাদক'।  এই প্রসঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন যে, কারক শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যাকরণগত তাৎপর্য এক নয়। ব্যাকরণে কারক শব্দটি ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়। কারক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য কাকে বলে

সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের ধারণা যে বিশেষ্যের দ্বারা কোনো কিছুর সমষ্টিগত নাম বোঝানো হয়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে।  নিচে উদাহরণের মাধ্যমে সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের ধারণাটি স্পষ্ট করা হলো। উদাহরণগুলি না জানলে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য চিনতে ভুল হতে পারে। সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: গবাদিপশুর সমষ্টিকে বলে পাল, মাছ বা পাখির সমষ্টিকে বলে ঝাঁক, সৈনিকদের সমষ্টিকে বলে বাহিনি, নৌকার সমষ্টিকে বলে বহর, ডাকাতদের সমষ্টিকে বলে দল, ছাত্রছাত্রীদের সমষ্টিকে বলে শ্রেণি। সুতরাং পাল, ঝাঁক, বাহিনি, বহর, দল, শ্রেণি, এগুলো সব হলো সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। অনেক সমষ্টিবাচক বিশেষ্য আছে, যেগুলিকে বাংলা ভাষায় বহুবচনবাচক প্রত্যয়ের মতো ব্যবহার করা হয়। আসলে এগুলি প্রত্যয় নয়, বিশেষ্য। যেমন: জনগণ শব্দের গণ কথাটি একটি সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। এমনি আরও উদাহরণ: বৃন্দ, রাজি, আবলী, নিচয়, নিকর প্রভৃতি। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে গুলি, গুলো, গুলা কিন্তু বিশেষ্য নয়, এগুলি বহুবচনবাচক নির্দেশক।  বিশেষ্য পদ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

ধ্বনি ও বর্ণের ৬টি পার্থক্য ধ্বনি ও বর্ণ বলতে অনেকে এক‌ই জিনিস বোঝেন। আসলে কিন্তু তা নয়। ধ্বনি ও বর্ণ পরস্পরের পরিপূরক, কিন্তু অভিন্ন নয়। নিচে আমরা ধ্বনি বর্ণের পার্থক্যগুলি দেখে নেবো। ১: ধ্বনি কানে শোনা যায়। বর্ণকে চোখে দেখা যায়। ২: ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগ্‌যন্ত্রে। বর্ণকে অঙ্কন করা হয়।  ৩: ধ্বনি এক ধরনের আওয়াজ-সংকেত। বর্ণ এক ধরনের চিত্র-সংকেত। ৪: ধ্বনি ক্ষণস্থায়ী। বর্ণ দীর্ঘস্থায়ী। ৫: ধ্বনি হল ভাষার প্রাথমিক উপাদান। বর্ণ হল ভাষার একটি বিকল্প উপাদান। ৬: ধ্বনির ভাব-প্রকাশ-ক্ষমতা অনেক বেশি। বর্ণের ভাব-প্রকাশ-ক্ষমতা ধ্বনির চেয়ে কম। ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

বাংলা ভাষাকে এস ও ভি ভাষা বলে কেন | Why Bengali is an SOV language

এস ও ভি ভাষা কী | What is an SOV language? এস ও ভি বা SOV হল একটি সংক্ষেপিত শব্দ বা অ্যাব্রিভিয়েশন। এর সম্পূর্ণ রূপ হল Subject - object - verb বা কর্তা - ক্রিয়া - কর্ম । পৃথিবীর ভাষাগুলিকে বাক্যে পদক্রমের ভিত্তিতে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়: SOV, SVO, VSO, VOS, OVS, OSV. এই ছটি ভাগের মধ্যে SOV শ্রেণির ভাষার সংখ্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি (৪৫%)। তার পরেই আছে SVO শ্রেণির ভাষা। বাংলা ভাষায় বাক্য গঠন করার জন্য প্রথমে কর্তা, তারপর কর্ম ও তারপর ক্রিয়া দিতে হয়। যেমন: আমি (S) ভাত (O) খাই (V)। আমি কর্তা, ভাত কর্ম ও খাই ক্রিয়া। বাক্যের প্রথমে কর্তা (Subject), তারপর কর্ম (Object) ও শেষে ক্রিয়া ( Verb) দেওয়া হয়েছে। এইভাবে কর্তা - ক্রিয়া - কর্ম  পরপর সাজিয়ে বাক্য গঠন করা হয় বলে বাংলা ভাষাকে এস ও ভি ভাষা বলা হয়। তবে একটি কথা এই প্রসঙ্গে মনে রাখা উচিত যে, বাংলা ভাষায় এই SOV ফরম্যাট সব ক্ষেত্রে মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়। গানে ও কবিতায় এই বাক্যগঠন রীতি প্রায়শ‌ই লঙ্ঘন করা হয়। যেমন: আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী। এখানে বাক্যটি গঠিত হয়েছে কর্তা - ক্রিয়া - কর্ম ফরম্যাটে।

স্বরলোপ কাকে বলে

স্বরলোপের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ সাধারণত দ্রুত উচ্চারণ করার তাগিদে শব্দের আদি, মধ্য বা অন্ত্য অবস্থান থেকে একটি স্বরধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে বলা হয় স্বরলোপ। কেউ কেউ স্বরলোপের অপর নাম সম্প্রকর্ষ বলে থাকেন। এই ধারণা ঠিক নয়। সব ধরনের স্বরলোপ সম্প্রকর্ষ নয়। শুধুমাত্র মধ্যস্বরলোপকে সম্প্রকর্ষ বলা যায়। নিচে স্বরলোপের তিনটি শ্রেণিবিভাগ উদাহরণ সহ আলোচনা করা হলো। আদি স্বরলোপ শব্দের গোড়ায় অবস্থিত স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হলে তাকে বলা হয় আদি-স্বরলোপ।  যেমন: অলাবু > লাউ, অতসী > তিসি,  উধার > ধার ।  মধ্য স্বরলোপ বা সম্প্রকর্ষ শব্দের মধ্যে অবস্থিত স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলা হয় মধ্যস্বরলোপ বা সম্প্রকর্ষ। একে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষের বিপরীত প্রক্রিয়াও বলা যায়। স্বরভক্তিতে মধ্যস্বরের আগম ঘটে, এখানে মধ্যস্বরের লোপ ঘটছে। যেমন: গামোছা > গামছা, নাতিনি > নাতনি, ভাগিনেয় > ভাগিনে > ভাগ্নে, কাঁচাকলা > কাঁচকলা।  এখন একটি উদাহরণকে বিশ্লেশণ করে দেখি।  গামোছা > গামছা = গ্ + আ + ম্ + ও + ছ্ + আ > গ্ + আ + ম্ + ছ্ + আ। মাঝে অবস্থিত ও স্বরটি লোপ পেয়েছে। অন্ত্য স্বরলোপ শব্দের শেষে অব

কৃদন্ত পদ কাকে বলে | কৃদন্ত শব্দ কাকে বলে

কৃদন্ত পদের সংজ্ঞা ও উদাহরণ কৃদন্ত কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল: যার শেষে কৃৎ আছে বা কৃৎ অন্তে যার। অন্ত মানে শেষ। সন্ধিবিচ্ছেদ হবে কৃৎ + অন্ত। কৃৎ কী? কৃৎ হল এক প্রকার প্রত্যয় (কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়)। কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয় ধাতুর সঙ্গে। ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হলে শব্দ তৈরি হয়। এইভাবে ধাতু ও কৃৎ প্রত্যয়ের যোগে গঠিত শব্দগুলিকে কৃদন্ত পদ বা কৃদন্ত শব্দ বলে। অবশ্য বাক্যে প্রয়োগের আগে এদের কৃদন্ত শব্দ বলাই ভালো। উপপদ তৎপুরুষ সমাস সম্পর্কে আলোচনায় কৃদন্ত পদের ধারণা দেওয়া দরকার হয়। কৃদন্ত পদের উদাহরণ গ্রহণ, বর্জন, দৃষ্টি, শ্রোতা, কার্য, দৃশ্য, বাক্য, গমন, গামী, দর্শী, জাত, জ, দাতা, দ, দা, কর, কার, কারী, কারক, করণ, হরণ, হারী, হর প্রভৃতি হল কৃদন্ত পদের উদাহরণ। উদাহরণগুলি লক্ষ করলে দেখা যাবে কতকগুলি কৃদন্ত পদের অর্থ বোঝা যাচ্ছে, কতকগুলির অর্থ বোঝা যাচ্ছে না। আসলে যেগুলির অর্থ বোঝা যাচ্ছে না, সেগুলিও অর্থহীন নয়। তবে ওরা স্বাধীন ভাবে ভাষায় ব্যবহৃত হয় না। উপসর্গ বা উপপদের আশ্রয়ে ব্যবহৃত হয়। যেমন: দূর +গামী = দূরগামী, পঙ্ক + জ = পঙ্কজ, জল + দ = জলদ, উপ + কার = উপকার।

উপসর্গ কাকে বলে | উপসর্গ কয় প্রকার

উপসর্গ কাকে বলে ও কয় প্রকার যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি শব্দ বা ধাতুর পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন অর্থ বিশিষ্ট শব্দ গঠন করে, তাদের উপসর্গ বলে। উপসর্গ কথার ব্যুৎপত্তি হল উপ + √সৃজ্ + অ। উপ অর্থে পূর্বে বা আগে এবং √সৃজ্ অর্থে সৃজন করা। উপসর্গগুলি শব্দ বা ধাতুর পূর্বে বসে নতুন অর্থ সৃজন করে।  উপসর্গ কত প্রকার বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উপসর্গগুলিকে উৎস অনুসার তিন ভাগে ভাগ করা যায়: ১: সংস্কৃত উপসর্গ ২: বাংলা উপসর্গ ও ৩: বিদেশি উপসর্গ। সংস্কৃত উপসর্গ সংস্কৃতে ২০টি উপসর্গ আছে: প্র, পরা, অপ, সম্ , নি, অব, অনু, নির্ , দুর্ , বি, অধি, সু, উদ্ (উৎ), পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ।  সংস্কৃত উপসর্গগুলিকে মনে রাখার উপায়: একটি সহজ পদ্ধতিতে এই উপসর্গগুলিকে মুখস্থ করা যায়। নিচে যে ভাবে সাজিয়ে দিলাম, ঐ ভাবে সাজিয়ে বার বার সুর করে বলতে থাকুন। দশ মিনিটেই মুখস্থ হয়ে যাবে। প্র পরা অপ সম্  নি অব অনু নির্ দুর্ বি অধি সু উদ্ পরি প্রতি অভি অতি অপি উপ আ বাংলা উপসর্গের উদাহরণ নিচের উপসর্গগুলি বাংলার নিজস্ব উপসর্গ।  অ, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আব, কু, গণ্ড, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সু, হা। বাংলা উপসর্গ যোগে শব

ইৎ কাকে বলে | ইৎ কী

প্রত্যয়ে ইৎ কী প্রত্যয় অধ্যায় পড়তে গেলে একটি পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। সেই পরিভাষাটি হল ইৎ। প্রত্যয় পড়তে গিয়ে একটা জিনিস হয়তো সবার‌ই নজরে আসবে যে, সংস্কৃত প্রত্যয়গুলির পুরোটা শব্দ গঠনের কাজে লাগে না। কিছুটা থাকে, কিছুটা বাদ যায়। যেমন: √শ্রু + ক্ত = শ্রুত। এখানে ক্ত প্রত্যয়ের 'ত' আছে, 'ক্' নেই। এই 'ক্' হচ্ছে প্রত্যয়ের অনুবন্ধ। প্রত্যয় যখন প্রকৃতির সাথে যুক্ত হয়, তখন তার অনুবন্ধ অংশটি লোপ পায়। অনুবন্ধ লোপ পাওয়ার এই ঘটনাকেই বলে ইৎ। তবে অনেক সময় ইৎ ও অনুবন্ধকে সমার্থক‌ও ভলা হয়েছে। ইৎ -এর আর‌ও কয়েকটি উদাহরণ √কৃ + ণ্যৎ = কার্য। (ণ্ ৎ ইৎ হয়েছে, য রয়ে গেছে।) √ভু + অনট্ = ভবন । (ট্ ইৎ হয়েছে অন রয়ে গেছে।) √স্থা + ক্তি = স্থিতি । (ক্ ইৎ হয়েছে তি রয়ে গেছে।) উপ + √হৃ + ঘঞ্ । (ঘ্ ঞ্ ইৎ হয়েছে, অ রয়ে গেছে।) প্রদেশ + ষ্ণিক = প্রাদেশিক। (ষ্ণ্ ইৎ হয়েছে, ইক আছে।)  অনেক সময় অনুবন্ধ ইৎ হবার ফলে শব্দের মধ্যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে। যেমন: প্রদেশ+ষ্ণিক = প্রদেশিক না হয়ে প্রাদেশিক হয়েছে।

প্রাতিপদিক কাকে বলে

প্রাতিপদিক প্রত্যয়ের আলোচনায় প্রাতিপদিক কথাটি পাওয়া যায়। প্রকৃতির আলোচনায় আমরা জেনেছি প্রকৃতি দুই প্রকার। ধাতু প্রকৃতি ও শব্দ প্রকৃতি। প্রতিপদ কথার অর্থ হল আরম্ভ। যা থেকে পদের আরম্ভ বা সূচনা হয়, তা-ই প্রাতিপদিক। সহজ ভাষায় বললে বিভক্তিচিহ্নহীন শব্দকেই প্রাতিপদিক বলে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে প্রাতিপদিক মানে শুধুমাত্র মৌলিক শব্দ নয়। সাধিত শব্দ‌ও প্রাতিপদিক। শব্দের সাথে বিভক্তি না থাকলেই তা প্রাতিপদিক। যেমন: হাত, ঘর, সুখ, জল, কথা, লোক, ছেলে, মা, ভাই প্রভৃতি মৌলিক শব্দগুলি যেমন প্রাতিপদিকের উদাহরণ, তেমনি হিমালয়, উত্তরবঙ্গ, পদ্মানদী, শিক্ষাগুরু প্রভৃতি সাধিত শব্দ‌ও প্রাতিপদিক।  আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বিশিষ্ট প্রত্যয়যুক্ত কিন্তু বিভক্তিহীন ধাতুকেও প্রাতিপদিক বলেছেন। তিনি প্রাতিপদিককে দু ভাগে ভাগ করেছেন: নাম প্রাতিপদিক ও ক্রিয়া প্রাতিপদিক। ক্রিয়া-প্রাতিপদিকের ব্যাপারটি নিচে আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করলাম। মনে রাখার বিষয় হল:  প্রাতিপদিকের সাথে বিভক্তি যুক্ত হলে, তবেই বাক্যে ব্যবহারযোগ্য পদ সৃষ্টি হয়।  ক্রিয়া-প্রাতিপদিক বিশিষ্ট প্রত্যয়যুক্ত কিন্তু বিভক্তিহীন ধাতু

স্ত্রী প্রত্যয় কাকে বলে

স্ত্রী প্রত্যয় শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ বা ধাতু সৃষ্টি করা প্রত্যয়ের কাজ। বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয়ের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যয়ের কাজ হল পুরুষ-বাচক শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ তৈরি করা। এই ভাবে যে প্রত্যয়গুলি পুরুষবাচক শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ তৈরি করে, তাদের বলে স্ত্রী প্রত্যয়। বাংলা ভাষায় যে সব স্ত্রী প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়, উৎসগত ভাবে তাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়: সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয় ও বাংলা স্ত্রী প্রত্যয়। নিচে স্ত্রী প্রত্যয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো।  স্ত্রী প্রত্যয়ের উদাহরণ আ (টাপ) ই (ইন), ঈ (ঈপ্) ঈ (ঙীপ্) ঈ(ঙীষ্) নী, আনী -- এই স্ত্রী-প্রত্যয়গুলি বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত স্ত্রী প্রত্যয়ের উদাহরণ।

প্রকৃতি কাকে বলে

প্রত্যয়ের প্রকৃতি কী প্রত্যয় নির্ণয়ের সময় আমরা প্রকৃতি-প্রত্যয় কথা দুটি একসাথে পাই। প্রত্যয়ের আগে ব্যবহৃত এই প্রকৃতি কথাটির অর্থ কী? ব্যাকরণে প্রকৃতি বলতে বোঝায় মূল। আমরা জানি প্রত্যয় যুক্ত হতে পারে ধাতু ও শব্দের সাথে। যে সব ধাতু ও শব্দের সাথে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, সেই সব ধাতু ও শব্দ‌ই প্রকৃতি। প্রকৃতি দুই প্রকার: ১: নাম প্রকৃতি বা শব্দ প্রকৃতি ও ২: ধাতু প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠিত হয়। শব্দ প্রকৃতির সাথে তদ্ধিত প্রত্যয় ও ধাতু প্রকৃতির সাথে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়। প্রকৃতির পরে যেমন প্রত্যয় যুক্ত হয়, তেমনি এর আগেও উপসর্গ যুক্ত হতে পারে। নিচে দুই প্রকার প্রকৃতির উদাহরণ দেওয়া হল। প্রকৃতির উদাহরণ শব্দ-প্রকৃতির উদাহরণ:‌ বর্ষ + ষ্ণিক = বার্ষিক (বর্ষ একটি শব্দ। এর সাথে ষ্ণিক প্রত্যয় যুক্ত হয়ে 'বার্ষিক' শব্দটি পাওয়া গেছে।) ঘর + উয়া = ঘরোয়া। (ঘর শব্দটি এখানে প্রকৃতি।) বাবু + গিরি = বাবুগিরি‌। ( বাবু শব্দটি প্রকৃতি।) ধাতু-প্রকৃতির উদাহরণ: আ + √হৃ + ঘঞ্ = আহার । (এখানে একটি উপসর্গ, এ

বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি কাকে বলে

বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি এবং তার উদাহরণ আমরা জানি সন্ধির কিছু বাঁধাধরা নিয়ম বা সূত্র আছে। এ ছাড়া এমন কিছু সন্ধি আছে, যারা কোনো নিয়ম মানে না, এবং কতকগুলি সন্ধি এমন আছে, যাদের নিয়ম তো আছে, কিন্তু সেই নিয়ম সাধারণ নিয়মের থেকে আলাদা। এই ধরনের সন্ধিকে বলা হয় বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি। মনে রাখতে হবে যে, এগুলি নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি নয়। নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধির কোনো নিয়ম নেই, কিন্তু এই সন্ধিগুলির নিয়ম আছে। এরপর নিচে আমরা বিশেষ নিয়মে সাধিত কয়েকটি সন্ধির উদাহরণ ব্যাখ্যা করে দেখবো এগুলি কেন বিশেষ নিয়মে সাধিত বলা হয়। বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধির উদাহরণ ১: উৎ + স্থান = উত্থান। এখানে স্ ব্যঞ্জনটি লোপ পেয়েছে। ২: উৎ + স্থাপন = উত্থাপন। এখানেও উপরের নিয়ম কাজ করেছে। ৩: পরি + কৃত = পরিষ্কৃত। এখানে বিসর্গ ছাড়াই ষ্ ব্যঞ্জনের আগমন ঘটেছে।  ৪: পরি + কার = পরিষ্কার। এখানেও উপরের নিয়ম কাজ করছে। ৫: সম্ + কৃত = সংস্কৃত। এখানে বিসর্গ ছাড়াই স্ ব্যঞ্জনের আগম ঘটেছে। ৬: সম্ + কৃতি = সংস্কৃতি। এখানেও উপরের নিয়ম কাজ করেছে। ৭: সম্ + কার = সংস্কার। এখানেও এক‌ই নিয়ম কাজ করছে। ৮: সম্ + করণ = সংস্করণ। এখান

মাত্রা কাকে বলে উদাহরণ দাও

মাত্রার সংজ্ঞা ও উদাহরণ ছন্দ শেখার জন্য দল ও মাত্রা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতেই হবে। যারা গান গায়, তাদেরকেও মাত্রা বুঝতে হয়। দল বিষয়ে ধারণা না থাকলে অবশ্যই দল সম্পর্কে আলোচনাটি পড়ে নিন। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক মাত্রা কাকে বলে, মাত্রা আসলে কী। মাত্রা হল দল উচ্চারণের সময়। অর্থাৎ একটি দলকে উচ্চারণ করতে যতটা সময় লাগে, তাকে ওই দলের মাত্রা বলে । একটি দলের মাত্রা হতে পারে এক, দুই বা বহু। ছন্দে বহু মাত্রার ব্যবহার নেই, সঙ্গীতে আছে। নিচে এক, দুই ও বহু মাত্রার ধারণা এবং মাত্রার উদাহরণ দেওয়া হলো। এক মাত্রা, দুই মাত্রা ও বহু মাত্রা সংস্কৃত ছন্দ শাস্ত্রে হ্রস্ব স্বর উচ্চারণের সময়কে এক মাত্রা ও দীর্ঘ স্বর উচ্চারণ করার সময়কে দুই মাত্রা ধরা হয়। বাংলা উচ্চারণে যেহেতু দীর্ঘ স্বরের তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই, সেহেতু মাত্রা নির্ণয়ের এই পদ্ধতি বাংলা ছন্দের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। এই দিক থেকে বাংলার প্রতিটি স্বরকেই এক মাত্রা ধরতে হয়। সাধারণ বাংলা উচ্চারণে মাত্রার উদাহরণ সাধারণ উচ্চারণে  বাংলায় মুক্ত দল এক মাত্রা ও রুদ্ধ দল দুই মাত্রা। যেমন রবীন্দ্রনাথ = র-বীন্-দ্র-নাথ্ -- ১+২+১+২ বি

সম্বন্ধ পদ কারক নয় কেন | সম্বন্ধ পদকে কারক বলা যায় কিনা কারণ সহ লেখ

সম্বন্ধ পদ কারক বলতে বোঝায় ক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ক। আমরা জানি কারক ৬ প্রকার: কর্তৃ, কর্ম, করণ, নিমিত্ত, অপাদান ও অধিকরণ‌। এর বাইরে রয়েছে দুটি অকারক পদ, সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সম্বন্ধ পদকে কারক বলা হয় না কেন? তার আগে আসুন জেনে নিই সম্বন্ধ পদ কাকে বলে। সম্বন্ধ পদের সংজ্ঞার মধ্যেই আমাদের প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। সম্বন্ধ পদ কাকে বলে সাধারণত 'র'/'এর'/'দের' প্রভৃতি বিভক্তি যুক্ত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের ক্রিয়া পদের সাথে সরাসরি সম্পর্ক থাকে না, কিন্তু কোনো না কোনো কারক পদের সাথে সম্পর্ক থাকে, তাকে সম্বন্ধ পদ বলে।  যেমন: রামের ভাই মাঠে খেলছে। -- এই বাক্যে 'রামের' পদটির সাথে 'খেলছে' ক্রিয়ার কোনো যোগ নেই, কিন্তু 'ভাই' পদের সাথে সম্পর্ক আছে। তাই 'রামের' পদটি সম্বন্ধ পদ।  সম্বন্ধ পদ কারক নয় কেন? কারকের সংজ্ঞা থেকে আমরা জানি ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। আবার সম্বন্ধ পদের সংজ্ঞায় আমরা দেখতে পাচ্ছি সম্বন্ধ পদের সাথে ক্রিয়া পদের সরাসরি সম্পর্ক থাকে না।  অর্থাৎ সম্বন্ধ

নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে

নিরপেক্ষ কর্তা নিরপেক্ষ কথাটির অর্থ হল: যা কার‌ও অপেক্ষা করে না, বা যা শর্তসাপেক্ষ নয়, যা কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে না। তাহলে নিরপেক্ষ কর্তা কোনটি? এক‌ই বাক্যে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা আলাদা হলে অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাটিকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে। এখন প্রশ্ন হলো, অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ বলা হচ্ছে কেন? আসুন, উদাহরণের সাহায্যে সেই ব্যাপারটি একটু বুঝে নিই, তাহলে নিরপেক্ষ কর্তার ধারণাটি সারা জীবন মনে থাকবে। নিরপেক্ষ কর্তার উদাহরণ ১: সূর্য উঠলে পদ্ম ফুল ফুটবে। -- এই বাক্যে দুটি ক্রিয়া আছে, 'উঠলে' অসমাপিকা ক্রিয়া এবং 'ফুটবে' সমাপিকা ক্রিয়া। আবার এই দুই ক্রিয়ার কর্তা আলাদা। সংজ্ঞা অনুযায়ী অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা 'সূর্য' হচ্ছে নিরপেক্ষ কর্তা। সূর্যকে নিরপেক্ষ বলা হচ্ছে, তার কারণ সূর্য যে উঠবে, তা কোনো শর্তের অধীন নয় বা শর্তসাপেক্ষ নয়। সূর্য নিরপেক্ষ ভাবে উঠবে। অপরদিকে পদ্ম ফুল ফোটার একটি শর্ত আছে। সূর্য উঠলে তবেই সে ফুটবে।  ২: তুমি গেলে আমি যাবো। -- আমার যাওয়া শর্তাধীন, তোমার যাওয়া শর্ত-নিরপেক্ষ। তাই 'তুমি' নিরপেক্ষ কর্তা। কারকের

উক্ত কর্ম কাকে বলে

উক্ত কর্মের ধারণা উক্ত কর্ম বলতে কী বোঝায়? উক্ত কথার অর্থ হল 'যা বলা হয়েছে। কর্তৃ কারকের একটি ভাগ আছে উক্ত কর্তা। তার অনুসরণে কোনো কোনো ব্যাকরণবিদ উক্ত কর্মের ধারণাটি আমদানি করেছেন। উক্ত কর্তার বেলায় আমরা দেখেছি কর্তৃবাচ্যে কর্তাটি কর্তা রূপে উল্লিখিত হয়, তাই বলা যায় কর্তাটি উক্ত থাকে। এক‌ই ভাবে কর্মবাচ্যে কর্মপদটি কর্তার স্থান দখল করে। ফলে কর্মবাচ্যের কর্মপদটিই কর্তা হিসেবে থাকে। তাই কর্মবাচ্যের কর্মকে উক্ত কর্ম বলা যায়। নিচে উক্ত কর্মের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল। উক্ত কর্মের উদাহরণ "লোকটি জনগণের দ্বারা প্রহৃত হল।" এই বাক্যে প্রকৃত কর্ম হল 'লোকটি'। কিন্তু বাক্যটি কর্মবাচ্যে আছে বলে কর্মটি কর্তার ভূমিকা পালন করছে। এই অবস্থায় কর্মটিকে উক্ত কর্ম বলতে হবে। কারণ কর্ম এখন কর্মের স্থানে নেই, কর্তা রূপে উক্ত। আর‌ও উদাহরণ:  চোরটি ধৃত হয়েছে।  ভাতগুলো খাওয়া হয়ে গেছে। মালগুলো বেচা হয়ে গেছে।  চাঁদ আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।  কারকের বিস্তারিত আলোচনা পড়ুন

সহযোগী কর্তা কাকে বলে

সহযোগী কর্তা বাংলা কারকে কর্তৃ কারকের দুটি ভাগ সহযোগী কর্তা ও ব্যতিহার কর্তা নিয়ে অনেকের মনে অনেক সংশয় আছে। আজকের এই আলোচনাটি পড়লে সেই সংশয় দূর হবে। একধিক কর্তা যখন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এক‌ই ক্রিয়া সম্পাদন করে, তখন তাদের সহযোগী কর্তা বলে। নিচে সহযোগী কর্তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল। সহযোগী কর্তার উদাহরণ ১: মা-মেয়েতে রান্না করছে। ২: বাঘে গোরুতে এক ঘাটে জল খায়। (ভয়েই হোক আর যে কারণেই হোক, বাঘ ও গোরুর বিরোধ নেই।) ৩: বাপ ব্যাটায় পরামর্শ করছে। ৪: ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নিল। ৫: ভাই বোনে পড়তে বসেছে। ৬: স্বামী-স্ত্রীতে সন্তানকে বড় করেছেন। ৭: রাজায় রাজায় সন্ধি করলেন। ৮: ভারত-পাকিস্তানে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবে। ৯: অমৃত ইসাবে বেড়াতে বেরোল। ১০: বৌয়ে বৌয়ে গল্প করে। কারকের বিস্তারিত আলোচনা পড়ুন। সহযোগী কর্তা ও ব্যতিহার কর্তার পার্থক্য ১: সহযোগী কর্তায় দুই কর্তার একমুখী কাজ করা বোঝায়। ব্যতিহার কর্তায় দুই কর্তার বিপরীতমুখী কাজ বোঝায়। ২: সহযোগী কর্তায় সহযোগিতা লক্ষ করা যায়। ব্যতিহার কর্তায় সাধারণত প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়।

ব্যতিহার কর্তা কাকে বলে

ব্যতিহার কর্তা দু জন কর্তা এক‌ই কাজ পরস্পরের সাথে বিনিময় করলে তাদের বলে ব্যতিহার কর্তা। মনে রাখতে হবে ব্যতিহার কর্তা সব সময় দু জন হবে এবং একে অপরের বিপরীত মুখে কাজ করবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যতিহার কর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নাও বোঝাতে পারে। এই প্রসঙ্গে সহযোগী কর্তা সম্পর্কেও জেনে নেওয়া দরকার। অনেকেই সহযোগী কর্তা ও ব্যতিহার কর্তার মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন। যেমন: বাঘে গোরুতে এক ঘাটে জল খায়। -- এখানে বাঘ ও ঘোরুর মধ্যে ক্রিয়ার বিনিময় ঘটছে না, বরং তারা সহযোগিতার মাধ্যমে এক‌ই কাজ করছে। তাই এগুলি সহযোগী কর্তা। নিচে ব্যতিহার কর্তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল। ব্যতিহার কর্তার উদাহরণ  ১: রাজায় রাজায় যুদ্ধ করছে। ২: ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া করছে। ৩: সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি করছে। ৪: মায়ে মেয়ে ঝগড়া করছে। ৫: বাঘে সিংহে লড়াই লেগেছে। ৬: জনে জনে কানাকানি করছে। ৭: নেতায় নেতায় খাওয়াখায়ি লেগেছে। ৮: ছেলেতে মেয়েতে কাড়াকাড়ি করছে।  কারক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন