স্বরসঙ্গতি কাকে বলে ও কয় প্রকার
স্বরসঙ্গতির সংজ্ঞা
পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বর, পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বর, পারস্পরিক প্রভাবে উভয় স্বর অথবা উভয় স্বরের প্রভাবে মধ্যবর্তী (তৃতীয়) স্বরের পরিবর্তন ঘ'টে স্বরের যে সামঞ্জস্য সাধিত হয়, তাকে স্বরসঙ্গতি বলে।
সংজ্ঞাটি কি খুব কঠিন লাগছে? গুলিয়ে যাচ্ছে? গুলিয়ে যাবে না, যদি আমরা সংজ্ঞাটি বুঝে নিই। মুখস্থ করার চেষ্টা করলেই গুলিয়ে যাবে। আপাতত এইটুকু বুঝলেই চলবে যে, স্বরসঙ্গতিতে স্বরের পরিবর্তন ঘটে এবং সেই পরিবর্তনের ফলে স্বরের সামঞ্জস্য সাধিত হয়। এবার আসুন স্বরসঙ্গতির প্রকারভেদ আলোচনা করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংজ্ঞাটিও ভালো করে বুঝে নেবো।
স্বরসঙ্গতি কয় প্রকার
স্বরসঙ্গতি চার প্রকার: প্রগত স্বরসঙ্গতি, পরাগত স্বরসঙ্গতি, অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি ও মধ্যগত স্বরসঙ্গতি।
প্রগত স্বরসঙ্গতি
পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরের পরিবর্তন ঘটে যে স্বরসঙ্গতি হয়, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন:
কুয়া > কুয়ো। উদাহরণটির একটু ধ্বনি বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।
ক্+উ+য়্+আ > ক্+উ+য়্+ও।
দেখা যাচ্ছে পূর্ববর্তী উ স্বরটি অপরিবর্তিত রয়েছে, পরবর্তী আ স্বরটি বদলে ও হয়ে গেছে। তার মানে পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরের পরিবর্তন ঘটেছে। যে স্বরটির পরিবর্তন ঘটছে না, বুঝতে হবে প্রভাব তার। এখানে পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাব, তাই এটি প্রগত স্বরসঙ্গতি। সংজ্ঞাটি লক্ষ করুন, আমরা প্রথমেই এই প্রগত স্বরসঙ্গতির কথা বলেছি "পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বর"।
পরাগত স্বরসঙ্গতি
পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরের পরিবর্তন ঘটে যে স্বরসঙ্গতি হয় তাকে বলে পরাগত স্বরসঙ্গতি।
যেমন: দেশি > দিশি। ধ্বনি বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখি
দ্+এ+শ্+ই > দ্+ই+শ্+ই।
লক্ষ করুন এখানে পরবর্তী স্বর ই অপরিবর্তিত আছে, পূর্ববর্তী স্বরটি বদলে গিয়ে পরবর্তী স্বরটির মতো হয়ে গেছে। অর্থাৎ এখানে পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরের পরিবর্তন ঘটেছে। সংজ্ঞার দ্বিতীয় ধাপে আমরা এর কথা বলেছি "পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বর"।
অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি
দুটি স্বর পরস্পরের প্রভাবে উভয়েই পরিবর্তিত হয়ে যে স্বরসঙ্গতি ঘটায়, তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে।
যেমন: রামু > রেমো, দাশু > দেশো। ধ্বনি বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখি:
দ্+আ+শ্+উ > দ্+এ+শ্+ও । দেখা যাচ্ছে আ, উ -- এই দুটি স্বরই বদলে গিয়ে হয়েছে যথাক্রমে এ, ও। তাহলে প্রভাব কার বলবো? এখানে প্রভাব উভয়ের, অর্থাৎ পারস্পরিক। পরিবর্তনও উভয়ের।
মধ্যগত স্বরসঙ্গতি
যে স্বরসঙ্গতিতে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী, উভয় স্বরের প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরটি বদলে যায়, তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে।
মধ্যগত স্বরসঙ্গতির উদাহরণ
বিলাতি > বিলিতি। এখানে পূর্ববর্তী স্বর ই, পরবর্তী স্বরও ই। মাঝে ছিলো আ। দুই দিকে অবস্থিত দুই স্বরের প্রভাবে মধ্যবর্তী আ হয়ে গেছে ই। একেই বলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি।
স্বরসঙ্গতির ব্যাখ্যা
স্বরের সঙ্গতি বলতে আসলে কী বোঝায়? দেশি > দিশি হলে না হয় বোঝা যাচ্ছে, দুটি ভিন্ন স্বরের মধ্যে একটি বদলে গেছে, ফলে দুটি স্বরের সমতা এসেছে। তাই একে স্বরের সঙ্গতি বলতে আমাদের অসুবিধা হবার কথা নয়। যদিও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়: একে সঙ্গতি না বলে সমতা বা স্বরের সমীভবন বলা হয় না কেন? যাই হোক এই উদাহরণটিতে বা বিলাতি>বিলিতি উদাহরণে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু দাশু > দেশো এই উদাহরণটিকে আমরা স্বরসঙ্গতি বলবো কেন? এখানে তো কোনো সঙ্গতি দেখা যাচ্ছে না! এই সঙ্গতিটি বোঝার জন্য আমাদের মৌলিক স্বরধ্বনির নিচের ছবিটি দেখতে হবে।
ছবিতে লক্ষ করুন 'দাশু' শব্দের দুটি স্বর আ এবং উ-এর মধ্যে কতখানি দূরত্ব ও পার্থক্য ছিলো। স্বরসঙ্গতির পর স্বর দুটি বদলে হয়েছে এ এবং ও, এবার এই দুটি স্বরের দূরত্ব লক্ষ করুন। দেখুন, দূরত্ব অনেকটা কমে গেছে। স্বর দুটি হুবহু এক না হলেও কাছাকাছি, দুটিই উচ্চমধ্য, অর্ধসংবৃত। দুটি দূরবর্তী স্বরকে পর পর উচ্চারণ করার জন্য জিহ্বাকে অনেকখানি পথ অতিক্রম করতে হয়, ফলে জিহ্বার পরিশ্রম হয় অনেক বেশি। এই পরিশ্রম লাঘব করাই স্বরসঙ্গতির উদ্দেশ্য। আশা করি স্বরসঙ্গতির মধ্যে 'সঙ্গতি'-টি কোথায়, তা এবার বোঝা গেছে।
আমার ক্লাস ইউটিউবে করার জন্য ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করুন আমার নাম অনন্য পাঠক (Ananya Pathak).
আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
সমাধান হলো।।।।।আশা করছি এর পরের পোস্ট গুলোতে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবো।।।।।
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।।ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, আরো আরো পোষ্ট করুন।।।