বাংলা নেট পরীক্ষার প্রস্তুতি ও সিলেবাস | Bengali NET SET Preparation
বাংলা NET/JRF প্রস্তুতির পরামর্শ
লিখছেন মানস নিয়োগী (NET JRF 2020)
NET/SET বিষয়ে জানতে ও মক টেস্ট দিতে মানসকে YouTube-এ সাবস্ক্রাইব করুন।
NET/JRF পাবার জন্য কীভাবে পড়বো? এই প্রশ্নটাই বেশিরভাগ জন করছেন বলে বিস্তারিত পোস্টের মাধ্যেমে জানানোর কথা ভাবলাম ৷ সবাইকে আলাদা আলাদা ভাবে না বলে এখানে বলাই সুবিধাজনক ৷
কেউ কেউ জানতে চাইছেন সহজে কীভাবে নেট বা জেআরএফ পাওয়া যায়। তাঁদের জন্য বলব, এর কোনো সহজ পন্থা নেই ৷ পরিশ্রমই শেষ কথা ৷ বহুদিন ধরে লাগাতার মনযোগের সাথে পরিশ্রম করছে কিন্তু নেট বা জেআরএফ পায়নি এমন মানুষ খুব একটা দেখিনি ৷ আমি আমার জার্নিতে যে বিষয়গুলো শিখেছি সেগুলোই এখানে আপনাদের কাছে তুলে ধরছি ৷
জেনারেল পেপার
১) সর্বপ্রথম জেনারেল পেপার নিয়ে বলি ৷ জেনারেল পেপারই হল JRF-এর আসল ডিসাইডার ৷ আমাদের বাংলার নেট পড়ুয়াদের কাছে জেনারেল পেপার একটা খুব জটিল বিষয় বলে মনে হয় ৷ যার একমাত্র কারণ ভাষা ৷ এবারেও অনেকে এমন আছেন যাঁদের সাবজেক্টে স্কোর ভালো হলেও জেনারেল পেপারে কমে যাওয়ার দরুন NET বা JRF হয়নি ৷ তাই জেনারেল পেপার অবশ্যই পড়তে হবে ৷
নেট জেনারেল পেপারের বই
জেনারেল পেপার পড়ার জন্য সবচেয়ে ভালো বই পিয়ারসন প্রকাশনীর কেভিএস মদানের বইটি ৷ তার সাথে NTA যতদিন পরীক্ষা নিচ্ছে সেই সমস্ত জেনারেল পেপারের প্রিভিয়াস প্রশ্ন সেটগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে অ্যানালিসিস করুন ৷ আর একটি উপাায় হলো বুুুুুঝতে না পারা বিষয়টি UNACADEMY বা YOUTUBE বা গুগলে সার্চ করে জেনে নেওয়া আর নোট তৈরি করা ৷ এই পদ্ধতিতে পড়লে আশাকরি থিয়োরির দিকটি ভালোভাবে তৈরি হয়ে যাবে ৷
নেট জেনারেল পেপারের অনুশীলন
জেনারেল পেপারের যে দিকগুলিতে প্র্যাকটিস দরকার সেই দিকগুলি হল ম্যাথ, ডি.আই., রিজনিং, প্যাসেজ ৷ এইগুলো প্রতিদিন নিয়ম করে প্র্যাক্টিস করুন ৷ ম্যাথ না জানলে ইউটিউবে খুব সাধারণ বিষয় যেমন পার্সেন্টেজ, রেশিও, লাভ ক্ষতি, এভারেজ ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখে নিন, DI করার ক্ষেত্রে কাজে লাগে এগুলো ৷
তাছাড়া পরীক্ষার হলে যে প্রশ্নে কোনো একটি শব্দের অর্থ না বোঝা যাবে সেই প্রশ্নটিকে হিন্দিতে করে নিয়ে দেখে নেওয়া যেতে পারে ৷
হাই স্কোরিং ইউনিট
২) সাবজেক্টে মোটামুটি অনেকেই পড়ে ফেলতে পারেন সহজ জায়গাগুলি ৷ গল্প উপন্যাস নাটক রবীন্দ্র সাহিত্য এগুলোতে কারো তেমন সমস্যা হয়না ৷ এই ইউনিটগুলি খুব স্কোরিং ইউনিট ৷ তাই যিনি প্রথম পড়া শুরু করবেন তিনি এগুলি দিয়েই করুন ৷ আর বাকিরা খুব খুঁটিয়ে এই জায়গাগুলি তৈরি করুন ৷ এক্ষেত্রে টেক্সট বই ভালোভাবে পড়তে হবে, নোট করতে হবে ৷ আর বাইরের তথ্যগুলো যেমন প্রকাশকাল, কোন পত্রিকা বা আরও কোনো তথ্য থাকলে তা নোট করে নিতে হবে ৷
সাবজেক্ট প্রথম ইউনিটের বই
৩) এরপরে আসি সাবজেক্টের প্রথম ইউনিটে ৷ এখান থেকেও বেশ প্রশ্ন আসে ৷ এই কয়েকটি বই ফলো করলে ভালো হয় ৷
ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ— সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
ভাষার ইতিবৃত্ত— সুকুমার সেন
সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা— রামেশ্বর শ'
সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার ক্রমবিকাশ— পরেশচন্দ্র মজুমদার
বাংলা ভাষার আধুনিক তত্ত্ব ও ইতিকথা— দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু
বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয় খুব সহজে বোঝার জন্য অনন্য পাঠক স্যারের এই ব্লগটি ফলো করুন। আমি এই ব্লগটিকে আমার ব্যাকরণের হ্যান্ড বুক হিসেবে ব্যবহার করি। ব্লগের সূচিপত্র দেখে জেনে নিন কোন কোন পোস্ট নেট পরীক্ষার জন্য কাজে লাগবে।
দ্বিতীয় ইউনিট
৪) দ্বিতীয় ইউনিট একটি খুব বিস্তৃত ইউনিট এবং এখান থেকে প্রশ্নও বেশি আসছে ৷ এবারে ১৪ টি এসেছে ৷ তাই এই ইউনিট ছাড়ার কোনো প্রশ্নই নেই ৷ তবে সবগুলো পড়তে যাওয়ার দরকার নেই ৷ তাহলে শেষ করে ওঠা যাবেনা ৷ প্রথম দিকে ছোটো টপিকগুলো যেমন চৈতন্যভাগবত, লোরচন্দ্রানী, ময়মনসিংহ গীতিকা ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ে নোট করে নিন ৷ পরে সময়ে কুলোলে রামায়ণ মহাভারত শ্রীকৃষ্ণবিজয় পড়া যাবে, সময় না থাকলে পড়ার দরকার নেই ৷ JRF পেতে গেলে 100% সিলেবাস কভার করার দরকার হয়না ৷
মধ্যযুগের কোনো টপিক পড়ার আগে দেখে নিন সেই টপিক থেকে বিগত বছরগুলোতে কী কী প্রশ্ন এসেছে ৷ সেইভাবে নিজের পড়ার স্ট্রাটেজি ঠিক করুন ৷ টেক্সট কেনার ক্ষেত্রে ভালো প্রকাশনীর কিনবেন, যেমন সাহিত্য সংসদ ইত্যাদি ৷
তৃতীয় ইউনিট
৫) তৃতীয় ইউনিট থেকে একটাই কথা বলার, ছোটো কবিতাগুলো মুখস্থ করে নিন ৷ প্রতিদিন সকালে একটা করে ৷ মুখস্থ হয়ে গেলে না দেখে খাতায় লিখুন ৷ আর বড় কবিতাগুলো এক-দেড়শো বার পড়ে প্রায় মুখস্থের মত করে রাখুন ৷ প্রয়োজনে কবিতার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ লাইন নোট করেও রাখতে পারেন ৷
৬) নকশা উপন্যাসের ক্ষেত্রে টেক্সটই সব ৷ টেক্সট খুঁটিয়ে পড়ুন ও উপন্যাস ধরে ধরে নোট করুন ৷ সব ইউনিটের ক্ষেত্রেই নোট করবেন সেই বিষয়গুলো, যা আপনার মনে থাকছেনা বা যেগুলি গুলিয়ে যাওয়ার মত তথ্য ৷ সব তথ্য লিখতে গেলে আগাগোড়া উপন্যাসটিকেই আবার লিখতে বসতে হয় ৷ কোন তথ্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ সেটি জানতে আপনাকে সাহায্য করবে আগে হয়ে যাওয়া পরীক্ষার প্রশ্নগুলি ৷
ছোটগল্পের ইউনিট
৭) ছোটোগল্প খুব সহজ ইউনিট ৷ এটায় হয়তো কারো সমস্যা নেই ৷ থাকলে কমেন্টে বলবেন ৷
৮) প্রহসন ও নাটকের ক্ষেত্রে যে ধরণের তথ্যগুলি মনে রাখতে হবে— সংলাপ, চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, গান সংক্রান্ত তথ্য, দৃশ্য অঙ্কের স্থান এবং অবশ্যই নাটকের অভিনয় সংক্রান্ত তথ্যগুলি৷ তাছাড়া নাটকের ভেতরের সাধারণ তথ্যগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ৷
প্রবন্ধের ইউনিট
৯) প্রবন্ধের ইউনিটের ক্ষেত্রে নোট তৈরি করে পড়াই ভালো ৷ কারণ এই ইউনিটে বিষয়ের গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন আছে৷ প্রাবন্ধিক কী বলতে চাইছেন বুঝতে হবে ৷ তাহলেই পরীক্ষায় কোনটা অশুদ্ধ অর্থাৎ এরকমটা প্রাবন্ধিক কখনই বলতে পারেন না তা, ধরতে পারবেন ৷ সাময়িক পত্রের জন্য সেই সাময়িক পত্রটির প্রথম সংখ্যাটি পড়ে নিন ৷ তাছাড়া ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বা সন্দীপ দত্তের সাময়িক পত্রের উপর বই দেখতে পারেন ৷
রবীন্দ্র-সাহিত্য
১০) রবীন্দ্র সাহিত্যে চিত্রা পুনশ্চ নবজাতকের সবকয়টি কবিতা পড়তে পারলে অতি উত্তম, না পারলে গুরুত্বপূর্ণ কবিতাগুলি পড়ে নিন ৷ আর কোথায় বসে লেখা বা কোন পত্রিকায় প্রকাশ অর্থাৎ বিশ্বভারতীর বইয়ে পিছনদিকে যে তথ্যগুলি থাকে তা খুব ভালো ভাবে পড়ে নিন ৷
ছন্দ অলংকারের ইউনিট
১১) ছন্দ অলংকারের ইউনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ এখান থেকে সহজ প্রশ্নই আসে ৷ ছন্দের ক্ষেত্রে সকলেই অপূর্ব কোলের বই পড়েন, কিন্তু প্রশ্ন এখান থেকে আসতে দেখিনি কখনও ৷ যা প্রশ্ন আসে বেশিরভাগই হয় নূতন ছন্দ পরিক্রমা—প্রবোধচন্দ্র সেন বা রবীন্দ্রনাথের ছন্দ বই থেকে ৷ তাই এইদুটো আগে পড়ে নিন, সময় থাকলে ছন্দের ইতিহাস জানার জন্য অপূর্ব কোলের বই দেখতে পারেন ৷ তাছাড়া সময়ে কুলোলে ছন্দ সরস্বতী বা মোহিতলালের ছন্দের বই বা নীলরতন সেনের বই দেখতে পারেন ৷
অলঙ্কারের জন্য অলংকার চন্দ্রিকা ও জীবেন্দ্র সিংহরায়ের বই খুব খুঁটিয়ে পড়ুন ৷ আর প্রতিদিন অলংকার প্র্যাক্টিস করুন ৷ বন্ধুর সাথে আলোচনা করতে পারেন বা বন্ধু আপনাকে প্রতিদিন পাঁচটি করে অলংকার করতে দিলেন, আপনি বন্ধুকে পাঁচটি দিলেন এভাবে খুব ভালো আয়ত্ত করা যেতে পারে ৷
১২) ভারতীয় কাব্যতত্ত্বের উপর অনেক ভালো বই আছে ৷ তার মধ্যে দুর্গাশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের বই থেকে বেশি প্রশ্ন আসে ৷ এর বাইরে পড়তে পারেন জীবেন্দ্র সিংহরায়, অবন্তীকুমার সান্যাল, অতুলচন্দ্র গুপ্তের বই ৷
পাশ্চাত্য কাব্যতত্ত্বের জন্য একোমেব অদ্বিতীয়ম্— শিশিরকুমার দাস ৷ আর কোনো বই দরকার নেই ৷
সবশেষে বলার, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই ৷ আপনি দিনে 10 ঘন্টা পড়েন, অন্য একজন দিনে 15 ঘন্টা পড়ে, তাহলে 15 ঘন্টা যিনি পড়েন তিনিই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন ৷ এই ভাবনাটা মাথায় রেখে আপনার সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ পরিশ্রম করুন ৷ সাফল্য আসবেই ৷ বারবার রিভাইজ করুন ৷ নোট তৈরি করে রিভাইজ খুব তাড়াতাড়ি করা যায় ৷ তাই অবশ্যই নোট তৈরি করুন ৷ নোটে সব লেখার দরকার নেই, যেগুলো আপনার মনে থাকছে সেগুলো লিখবেন না, যা মনে থাকেনা বারবার ভুলে যান বা যাবেন বলে মনে হয় সেগুলোই লিখুন ৷ চার্ট তৈরি করুন, নিমনিক্স তৈরি করুন নিজের মত করে মনে রাখার জন্য ৷ পড়ার ঘরের দেওয়াল ভরে ফেলুন চার্ট চিটিয়ে ৷ আর সবচেয়ে বড়ো কথা, বাজারচলতি নোটবইয়ের উপর নির্ভরশীল হবেন না ৷ পরীক্ষার একমাস আগে নোটবইতে কী কী আছে দেখতে পারেন ৷ কিন্তু যাঁরা দিনের পড়া শুরুই করেন নোটবই মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে তাঁরা ভুল পথে আছেন ৷ যাঁরা অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান তাঁরাও ভুল করছেন, সোশ্যাল মিডিয়া পড়ায় মনোযোগ নষ্ট করে ভীষণ পরিমাণে ৷ তাই ওটা ত্যাগ করাই ভালো, যতদিন না সাফল্য আসছে ৷
বন্ধুদের সাথে আলোচনা
বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে অনেকে ভালো পড়তে পারেন, যেটা আমি কোনোদিন পারিনি ৷ নিজে নিজে পড়তেই বেশি ভালো লাগে ৷ আপনি নিজে দেখবেন কোন পদ্ধতিতে ভালো মনে থাকছে বা ভালো পড়া হচ্ছে, কারণ এটা ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা হয় ৷ আর কোনোরকম সাজেশন করবেন না, যে আগের বার মুক্তধারা থেকে এসেছে, এবারে আসবেনা, এমনটা নয় ৷ এটা এম.এ. বা বি.এ. পরীক্ষা নয় ৷ সবাইকে আমার ভালোবাসা জানাই আর যাঁরা এই কঠিন পথটায় চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের জন্য একরাশ শুভেচ্ছা জানাই ৷ আমার বলা বিষয়ের বাইরে কারও কোনো অসুবিধা থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন ৷সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, পড়াশোনায় ডুবে থাকুন ৷ বাংলা নেট সিলেবাস ২০২০ পিডিএফ আকারে নিচে দিলাম। নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন।
Download নেট বাংলা সিলেবাস ২০২০ 👈
আরও পড়ুন
This article contains affiliate links, and if you make a purchase through the links a small amount of commission may be entitled to me.
মন্তব্যসমূহ