সমীভবন কাকে বলে ও কয় প্রকার | ব্যঞ্জন সংগতি কাকে বলে

সমীভবন কথার অর্থ ও সমীভবনের সংজ্ঞা

সমীভবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আসুন জেনে নিই সমীভবন কথাটির অর্থ কী। সমীভবন মানে সমান হ‌ওয়া বা এক হ‌ওয়া। সমীভবনে দুটি ভিন্ন ধ্বনির এক ধ্বনিতে পরিণত হ‌ওয়া বোঝায়। তবে সব সময় একেবারে এক ধ্বনিতে পরিণত হয় না, এক বর্গের কাছাকাছি ধ্বনিতে পরিণত হলেও তা সমীভবন হিসেবে গণ্য হয়।

সমীভবন কাকে বলে? সমীভবনের সংজ্ঞা হিসেবে আমরা বলতে পারি: পাশাপাশি বা কাছাকাছি উচ্চারিত দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জনের একটি অপরটির প্রভাবে বা দুটিই পরস্পরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে এক‌ই বা এক‌ই ধরনের ব্যঞ্জনে পরিণত হলে তাকে সমীভবন বা ব্যঞ্জন সংগতি বলে।

সমীভবনের অপর নাম সমীকরণ।

সমীভবনের উদাহরণ ও বিশ্লেষণ

সমীভবনের কয়েকটি প্রচলিত উদাহরণ হল: দুর্গা>দুগ্গা, বড়দা > বদ্দা, উৎসব > উচ্ছব, ধর্ম > ধম্ম, বৎসর > বচ্ছর, পদ্ম > পদ্দ , মহাত্মা > মহাত্তা ইত্যাদি।

সমীভবনের দুটি উদাহরণ আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি

১: উৎসব > উচ্ছব। এখানে দেখছি ৎ ও স দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে চ ও ছ হয়ে গেছে। চ ও ছ আলাদা হলেও কাছাকাছি। তাই বলা যায় দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নিকটবর্তী ব্যঞ্জনে পরিণত হয়েছে। তাই এটি সমীভবন। এই ধরনের সমীভবনকে আংশিক সমীভবন বলা যায়।

২: পদ্ম > পদ্দ । এখানে দ ও ম দুটি আলাদা ব্যঞ্জন ছিলো। দুটি বদলে গিয়ে এক‌ই ব্যঞ্জন দ হয়ে গেছে। তাই এখানে সমীভবন ঘটেছে। 

সমীভবন কয় প্রকার?

সমীভবন তিন প্রকার: প্রগত সমীভবন, পরাগত সমীভবন ও অন্যোন্য সমীভবন।

প্রগত সমীভবন:

যে সমীভবনে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনের পরিবর্তন ঘটে, তাকে বলে প্রগত সমীভবন।

যেমন: পদ্ম > পদ্দ, মহাত্মা > মহাত্তা

একটু বিশ্লেষণ করে দেখি: পদ্ম > পদ্দ উদাহরণটি ভাঙলে পাই
প্ + অ + দ্ + ম্ + অ > প্ + অ + দ্ + দ্ + অ।

দেখা যাচ্ছে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন দ্ -এর প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জন ম্ বদলে গিয়ে দ্ হয়ে গেছে। 

কার প্রভাব, কী করে বুঝবো?

ম্ -এর বদল ঘটেছে, দ্ -এর বদল ঘটেনি। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রভাবটা দ্ -এর। মনে রাখতে হবে, যার বদল ঘটবে না, প্রভাব তার। এটাই পৃথিবীর নিয়ম, দুর্বলকেই সবলের কাছে যেতে হয়, সবল দুর্বলের কাছে যায় না। যার প্রভাব, তাকে সবল ধরবো।

পরাগত সমীভবন: 

যে সমীভবনে পরবর্তী ব্যঞ্জনের প্রভাবে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের পরিবর্তন ঘটে, তাকে পরাগত সমীভবন বলে।

যেমন: দুর্গা > দুগ্গা , কর্ম > কম্ম

এখানে দেখুন, প্রথম উদাহরণে গ্ -এর প্রভাবে র্ বদলে গ্ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় উদাহরণে ম্ এর প্রভাবে র্ বদলে ম্ হয়ে গেছে। তাই এগুলো পরাগত সমীভবন।

অন্যোন্য সমীভবন: 

যে সমীভবনে পারস্পরিক প্রভাবে উভয় ব্যঞ্জনের পরিবর্তন ঘটে, তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে।

যেমন: বৎসর > বচ্ছর, উৎসব > উচ্ছব

লক্ষ করে দেখুন: ৎ ও স্ বদলে চ্ ও ছ্ হয়ে গেছে। ৎ ও স্ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ব্যঞ্জন, কিন্তু চ্ ও ছ্ এক‌ই বর্গের কাছাকাছি দুটি ব্যঞ্জন, এদের উচ্চারণ প্রায় এক। এখানে উভয় ধ্বনির প্রভাবে উভয় ধ্বনির পরিবর্তন ঘটেছে। তাই এটি অন্যোন্য সমীভবন। এই ব্লগে আর‌ও কী কী লেখা আছে দেখার জন্য সূচিপত্রে যান। 

ইউটিউবে আমার ক্লাস করার জন্য ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করুন আমার নাম অনন্য পাঠক/Ananya Pathak. নিচের ভিডিওটি মাত্র দু মিনিটের ভিডিও। দেখে নিন। 




আর‌ও পড়ে দেখুন

মন্তব্যসমূহ

আর‌ও পড়ে দেখুন

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

সাধু ও চলিত ভাষার ৭টি বৈশিষ্ট্য ও রূপান্তর | Sadhu o cholit bhasha

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

১০০+ সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ | সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের তালিকা | Samochcharito Vinnarthok shabdo

তৎসম শব্দ কাকে বলে | তৎসম শব্দের তালিকা

বিশেষণ পদ - সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ: বিস্তারিত | বিশেষণ কাকে বলে

সূচিপত্র | Bengali Grammar

অপিনিহিতি কাকে বলে