উপপদ তৎপুরুষ সমাস | Upapad tatpurush somas

উপপদ তৎপুরুষ সমাস চেনার উপায়

উপপদ তৎপুরুষ সমাস চেনার সহজ উপায় নিয়ে আজকের এই আলোচনা। সেই সঙ্গে আলোচনা করবো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের বিস্তারিত পরিচয়। 

তৎপুরুষ সমাসের আলোচনায় যথাস্থানে উপপদ তৎপুরুষ সমাস আলোচনা করেছি। তার পরেও এই সমাসটি সম্পর্কে আলাদা করে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হলো। তার কারণ এই বিষয়টি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। পুরো আলোচনাটি একটু মনোযোগ দিয়ে ভালো করে পড়লে উপপদ তৎপুরুষ সমাস সম্পর্কে নতুন ধারণা হবে আশা করছি। 


উপপদ তৎপুরুষ সমাসের বৈশিষ্ট্য

উপপদ তৎপুরুষ সমাস হতে গেলে পূর্বপদটি বিশেষ্য ও পরপদটি কৃদন্ত পদ হতে হবে। কৃদন্ত পদটিকে ক্রিয়াবাচক পদ‌ও বলা যায়।  এখন বুঝে নিই কৃদন্ত পদ বলতে কী বোঝায় এবং উপপদ‌ই বা কী‌।


কৃদন্ত পদ কাকে বলে

কৃদন্ত কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল: কৃৎ অন্তে যার; অর্থাৎ যার শেষে কৃৎ প্রত্যয় আছে। কৃৎ+অন্ত= কৃদন্ত।


আমরা জানি যে প্রত্যয়গুলি ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে তাদের কৃৎ প্রত্যয় বলে। এইভাবে ধাতুর সাথে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত নামপদকে কৃদন্ত পদ বলে। 

কৃদন্ত পদ দুই প্রকার হয়। কতকগুলি কৃদন্ত পদ ভাষায় স্বাধীন শব্দ রূপে ব্যবহৃত হয় আর কতকগুলি কৃদন্ত পদ স্বাধীন ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না, কার‌‌ও না কার‌ও আশ্রয়ের প্রয়োজন হয়। কে দেবে আশ্রয়? কৃদন্ত পদকে আশ্রয় দিতে পারে 

১: উপসর্গ, ২: নামপদ(উপপদ)। 

উপসর্গের সাথে কৃদন্ত পদের যোগে গঠিত বহু শব্দ আমরা দৈনন্দিন কথাবার্তায় ব্যবহার করে থাকি। যেমন: আ-√হৃ+ঘঞ্ (আ+হার) = আহার। এখানে 'আ' হল উপসর্গ, 'হার' হল কৃদন্ত পদ, '√হৃ' ধাতু ও 'ঘঞ্' কৃৎ প্রত্যয় মিলে তৈরি হয়েছে কৃদন্ত পদ 'হার'। এক‌ই ভাবে উপকার(উপ+কার), সংস্কার(সম্+কার), অনুকার, অনুজ, বিহার, প্রহার প্রভৃতি শব্দগুলি উপসর্গ ও আশ্রিত কৃদন্ত পদের যোগে গঠিত হয়েছে। এখানে আশ্রিত কৃদন্ত পদকে আশ্রয় দিচ্ছে উপসর্গ। কিন্তু এই আশ্রয় দেওয়ার কাজটিই যদি কোনো নামপদ করে থাকে, তখন‌ই হবে উপপদ তৎপুরুষ সমাস। যেমন: 'কুম্ভকার'(কুম্ভ+কার) শব্দে 'কার' কৃদন্ত পদটিকে আশ্রয় দেওয়ার কাজটি করছে 'কুম্ভ'(মানে কলসী) বিশেষ্য পদটি। তাই কুম্ভ পদটিকে আমরা বলবো উপপদ। সংস্কৃত ভাষায় অধীন কৃদন্ত পদকে আশ্রয় দেওয়ার কাজটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গ‌ই করে থাকে। কখন‌ও কখন‌ও এই কাজটি নামপদে করে। এইভাবে উপসর্গের সাথে কাজের সাদৃশ্যের জন্য এদের উপপদ বলা হয়।


উপপদ কাকে বলে

তাহলে আমরা বলতে পারি: কৃদন্ত পদের পূর্বে অবস্থিত (আশ্রয়দাতা) নামপদকে উপপদ বলে। উপপদ কথার আক্ষরিক অর্থ 'পূর্বে অবস্থিত পদ'।

উপপদ তৎপুরুষ সমাস বোঝার জন্য নিচের ভিডিওটি দেখে নিন।



উপপদ তৎপুরুষ সমাস চেনার উপায়

উপপদ তৎপুরুষ সমাস চেনার জন্য নিচের পদ্ধতি অনুসণ করুন

১: দেখুন পরপদে কৃদন্ত পদ বা ক্রিয়াবাচক পদ আছে কিনা। যদি থাকে, তাহলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস হতে পারে। 

নিশ্চিত হ‌ওয়ার জন্য দেখুন:

২: কৃদন্ত পদটিকে ভাষায় স্বাধীন ভাবে ব্যবহার করা যায় কিনা। যদি না যায়, তাহলে এটি উপপদ তৎপুরুষ সমাস হতে পারে। 

নিশ্চিত হতে দেখুন:

৩: পূর্বপদটি নামপদ কিনা। নামপদ বলতে এখানে মূলত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ‌ই হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ্য‌ই হয়। বিশেষণ কম‌ই দেখা যায়।

এই তিনটি শর্ত মিলে গেলে একটি সমাসবদ্ধ পদকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা যাবে। 


 উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ শেষে দিচ্ছি। তৎপুরুষ সমাসের আলোচনাতেও কিছু উদাহরণ দিয়েছি। এখানে আগে এমন কিছু উদাহরণ দেবো যেগুলিকে উপপদ তৎপুরুষ বলে মনে হলেও উপপদ তৎপুরুষ সমাস হবে না। 

পরপদে চালক, দাতা, গ্রহীতা, প্রাপক, পাঠক, দৃশ্য, মৃত, চালিত, ইত্যাদি স্বাধীন কৃদন্ত পদ থাকলে সেগুলি উপপদ তৎপুরুষ সমাস হবে না। যেমন: ঋণগ্রহীতা = ঋণের গ্রহীতা, সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস। কারণ 'গ্রহীতা' পদটি এখানে 'ঋণ' পদটির আশ্রয়ে ব্যবহৃত হয়নি। এটি একটি স্বাধীন পদ।

কিন্তু বলকারক = বল করে যা, উপপদ তৎপুরুষ সমাস হবে। এখানে 'কারক' পদটি কৃদন্ত পদ এবং এর স্বাধীন ব্যবহার আছে। তবু উপপদ তৎপুরুষ সমাস হচ্ছে, কারণ 'কারক' পদটি ভাষায় স্বাধীন ভাবে ব্যবহৃত হলেও তা বিশিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়, 'যে করে'-এই অর্থে নয়। অপরদিকে 'ঋণগ্রহীতা' সমস্তপদে 'গ্রহীতা' পদটি 'যে গ্রহণ করে' - এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, কৃদন্ত পদটির স্বাধীন অর্থ থাকলেও তা যদি সাধারণ অর্থ না হয়ে বিশেষ অর্থ হয়, তাহলেও উপপদ তৎপুরুষ সমাস হবে। সমাসবদ্ধ পদে একটি স্বাধীন কৃদন্ত পদ নিজের স্বাভাবিক অর্থে ব্যবহৃত হলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস হয় না।

উপপদ তৎপুরুষ সমাসের পপরপদে যে কৃদন্ত পদগুলি ব্যবহৃত হয় তেমন কিছু কৃদন্ত পদের অর্থসহ উদাহরণ ও উপযুক্ত একটি করে সমাসবদ্ধ পদের উদাহরণ দেওয়া হলো।


         কৃদন্ত পদ    -      অর্থ                  উদাহরণ

  •  কর, কার, কারী - করা অর্থে             কর্মকার
  •  গ, গামী - গমন করা অর্থে                 ভুজগ
  •  জ, জা - জন্মগ্রহণ করা অর্থে            জলজ
  •  বদ, বদা, বাদী - বলা অর্থে                সত্যবাদী
  •  ঘ্ন - হত্যা করা অর্থে                          শত্রুঘ্ন
  •  জিৎ - জয় করা অর্থে                       ইন্দ্রজিৎ
  • প - পান করা অর্থে                            পাদপ
  • দ, দা, দায়ী- দেওয়া অর্থে                  বরদা
  • সহ - সহ্য করা অর্থে                          ভারসহ
  • পাতী- পতন অর্থে    -                       অন্তঃপাতী 
  • ধারী - ধারণ করা অর্থে                     অস্ত্রধারী
  • স্থ, স্থা - থাকা অর্থে                           মুখস্থ
  • গ্রাহী - গ্রহণ করা অর্থে                      তাপগ্রাহী
  • বাসী - বাস করা আর্থে                      গৃহবাসী
  • দর্শী - দর্শন করা অর্থে                       প্রিয়দর্শী
  • বাহী - বহন করা অর্থে                       ভারবাহী
  • চর - বিচরণ করা বা চরা অর্থে           খেচর
খাঁটি বাংলা উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণগুলিও পড়ে দেখুন। কারণ এখানে সব উদাহরণ‌ই তৎসম উদাহরণ‌।

আমাকে YouTube-এ সাবস্ক্রাইব করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

আর‌ও পড়ুন 

মাধ্যমিক বাংলা

বাংলা ব্যাকরণের সেরা কিছু ব‌ই 

প্রত্যয়ের বিস্তারিত আলোচনা

ব্যাকরণ শেখার সহজ কৌশল

সমাস (সম্পূর্ণ)

কারক

সন্ধি

বাক্য

বাচ্য

মন্তব্যসমূহ

আর‌ও পড়ে দেখুন

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

সাধু ও চলিত ভাষার ৭টি বৈশিষ্ট্য ও রূপান্তর | Sadhu o cholit bhasha

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

১০০+ সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ | সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের তালিকা | Samochcharito Vinnarthok shabdo

তৎসম শব্দ কাকে বলে | তৎসম শব্দের তালিকা

বিশেষণ পদ - সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ: বিস্তারিত | বিশেষণ কাকে বলে

সূচিপত্র | Bengali Grammar

অপিনিহিতি কাকে বলে