ধ্বনি ও বর্ণ | Dhwani o barna

ধ্বনির সংজ্ঞা


ভাষার মূলগত উপাদান হল ধ্বনি। মানুষ তার মনের ভাবকে কিছু সাংকেতিক আওয়াজের সাহায‍্যে প্রকাশ করে। এই সাংকেতিক আওয়াজ‌গুলি বিভিন্ন সমন্বয়ে মিলিত হয়ে অর্থবহ সমষ্টি গড়ে তোলে। ভাষায় ব‍্যবহৃত ঐ আওয়াজগুলি সৃষ্টি হয় মানুষের বাগ্‌যন্ত্রে। এই আওয়াজ‌গুলি ব‍্যাকরণে ধ্বনি নামে পরিচিত। সাধারণ ব‍্যবহারিক জীবনে যে কোনো আওয়াজকেই ধ্বনি বলে। কিন্তু ব‍্যাকরণে ধ্বনি কাকে বলে? "ভাব প্রকাশের উদ্দেশ‍্যে মানুষের বাগযন্ত্র থেকে নিঃসৃত সাংকেতিক আওয়াজকে ধ্বনি বলে।" মনে রাখতে হবে ভাষার ধ্বনি তখন‌ই সার্থক হয় যখন তা একক ভাবে বা ধ্বনিগুচ্ছ আকারে কোনো ভাব বা সংকেত বহন করে। 



ধ্বনির বৈশিষ্ট্য


১: ধ্বনি হবে মানুষের বাগ্‌যন্ত্র থেকে সৃষ্ট।
২: ধ্বনি উচ্চারিত হবে স্বেচ্ছায়। 
৩: ধ্বনি উচ্চারিত হবে ভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে।

বিভাজ্য ধ্বনি ও অবিভাজ্য ধ্বনি


ধ্বনিকে প্রাথমিক ভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ১: বিভাজ‍্য ধ্বনি ও ২: অবিভাজ‍্য ধ্বনি।


আমরা সাধারণ ধারণায় যেগুলি‌কে ধ্বনি বলি, অর্থাৎ অ,আ, ক, খ ইত‍্যাদি, এগুলি আসলে বিভাজ‍্য ধ্বনি। কারণ এই ধ্বনিগুলিকে যে কোনো সমষ্টি‌র অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং তাদের আবার আলাদা করে দেখানো যায়। যেমন: আকাশ = আ+ক্+আ+শ্+অ। অপর দিকে আমরা কথা বলার সময় যে বিশেষ বিশেষ সুর(যেমন প্রশ্ন করার একটা বিশেষ সুর আছে কিন্তু ওই এক‌ই কথা উত্তর হিসেবে বললে সুর পাল্টে যায়), তাল, কণ্ঠের ওঠাপড়া ইত্যাদি ব‍্যবহার করি, সেগুলি অবিভাজ‍্য ধ্বনি। একটা সহজ উদাহরণ দিলে ব‍্যাপারটা অনেক স্পষ্ট হবে।
যদি বলা হয়--- "রাম যাবে।" তাহলে কথাটা যেমন শুনতে লাগবে, "রাম যাবে?" বললে তার চেয়ে অনেক আলাদা শোনায়। এই পার্থক‍্যটা গড়ে দিচ্ছে অবিভাজ‍্য ধ্বনি(এখানে সুর)। লক্ষ করলে দেখা যাবে বিভাজ‍্য ধ্বনিগুলো কিন্তু উভয় বাক‍্যে এক‌ই রকম আছে। অবিভাজ‍্য ধ্বনি মূলত চার প্রকার: সুরতরঙ্গ, যতি, দৈর্ঘ্য ও শ্বাসাঘাত। বিভাজ‍্য ধ্বনি দুই প্রকার: স্বর ও ব্যঞ্জন।


বর্ণ


বর্ণ বলতে বোঝায় ধ্বনির লেখ‍্য রূপ। মনে রাখতে হবে, বর্ণ আসলে ধ্বনির একটি বিকল্পমাত্র।  বর্ণের কাজ হল ধ্বনিকে স্হায়িত্ব দেওয়া। ধ্বনি আর বর্ণকে অনেকে অনেক সময় এক করে ফেলেন। বাস্তবে তা কিন্তু ভুল।

ধ্বনি ও বর্ণের পার্থক্য


  • বর্ণ চোখে দেখার জিনিস আর ধ্বনি কানে শুনবার। 
  • ধ্বনি অস্থায়ী, বর্ণ স্থায়ী।
  • ধ্বনিকে উচ্চারণ করতে হয়, বর্ণকে লিখতে হয়।

ব‍্যাকরণে ধ্বনির আলোচনাই গুরুত্বপূর্ণ, বর্ণের আলাদা আলোচনা প্রয়োজন নেই।
ভাষায় লিপি সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হলে বর্ণ জানা প্রয়োজন। বাংলা বর্ণগুলি ধ্বনিমূলক বর্ণ। অর্থাৎ বাংলা বর্ণগুলির উচ্চারণ মোটামুটি সুনির্দিষ্ট। বাংলা ক্ ধ্বনিকে সব সময় এক‌ই ভাবেই উচ্চারণ করা হয়। অপরদিকে ইংরেজি C বর্ণ কখন‌ও স্ আবার কখন‌ও ক্-এর মতো উচ্চারিত হয়। 

আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা 


পৃথিবীর সমস্ত ভাষার সমস্ত ধ্বনিকে একটিমাত্র বর্ণমালার সাহায্যে লেখার জন্য আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক সংস্থা একটি বর্ণমালা উদ্ভাবন করে। এই বর্ণমালা সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বনিতাত্ত্বিক। অর্থাৎ এর প্রতিটি বর্ণের উচ্চারণ সুনির্দিষ্ট। একে বলা হয় আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা বা International Phonetic Alphabet (IPA). এই বর্ণমালার উদ্ভাবন হয় ঊনিশ শতকের আটের দশকে। তারপর থেকে বহুবার এই বর্ণমালার সংস্কার ও পরিবর্ধন হয়েছে। ধ্বনিতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে এই বর্ণমালা জানা একান্ত প্রয়োজন।

আর‌ও পড়ুন
সব পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করে সূচিপত্রে যান

মন্তব্যসমূহ

ABIR SAHANA বলেছেন…
দারুণ অনন্য । এগিয়ে চল
Unknown বলেছেন…
খুব সুন্দর দাদা।অনেকে উপকৃত হবে।।
Ananya Pathak বলেছেন…
ধন‍্যবাদ আবির। Please follow me.
Ananya Pathak বলেছেন…
Please encourage me by following and sharing.
Ananya Pathak বলেছেন…
ছাত্রছাত্রীরা যে কোনো আর্টিকলে‌র কোনো অংশ বুঝতে না পারলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করো। তোমাদের উত্তর দেবো আমি।
bivas বলেছেন…
বাঃ, দাদা খুব সুন্দর।
Ananya Pathak বলেছেন…
ধন‍্যবাদ, বিভাস।
Unknown বলেছেন…
স্যার অসাধারণ ভালো
Debu বলেছেন…
লেখাগুলি বই আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করো অনন্যদা, আমরা কেনার অপেক্ষায় থাকবো|
ব্যাকরণ বলেছেন…
স্যার আজ থেকেই শুরু করে দিলাম।এভাবে সাহায্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Unknown বলেছেন…
চতুর্থ শ্রেণীর পাতাবাহার বই -এ নরহরি দাস গল্পের হাতে কলমের সাত নম্বর দাগে যে বর্ণ বিশ্লেষণ গুলি আছে তা কি ভুল ?
Anup408 বলেছেন…
সুন্দর সরল করে বেঝালেন স্যার। ধন্যবাদ!!

আর‌ও পড়ে দেখুন

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

লোকনিরুক্তি কাকে বলে

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

অপিনিহিতি কাকে বলে

শব্দ ও পদের পার্থক্য | শব্দ ও পদ

অভিশ্রুতি কাকে বলে?

বিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে | অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে