বিশেষণ পদ - সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ: বিস্তারিত | বিশেষণ কাকে বলে
বিশেষণ পদ কাকে বলে? সংজ্ঞা ও ধারণা :
বিশেষণ হল সেই সব পদ, যেগুলি বিশেষ্য ও অন্যান্য পদের পরিচিতি স্পষ্ট করে।
সহজ ভাষায় বললে, যে পদগুলি অন্য পদের (অর্থাৎ, বিশেষ্য , সর্বনাম , ক্রিয়া এমন কি স্বয়ং বিশেষণের) বৈশিষ্ট্য, দোষ, গুণ , অবস্থা , মাত্রা, তীব্রতা, সংখ্যা, ক্রম, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাদের বিশেষণ পদ বলে। সব পদের সব গুণ থাকে না। যার যা আছে বিশেষণ তার সেটাই প্রকাশ করে। মনে রাখা দরকার : বিশেষণের নিজের অস্তিত্ব নেই। তাই শেষ বিচারে বিশেষণ অন্য পদের দাস। বিশেষণ যার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, তারই দাসত্ব করে।
১: রাম ভালো ছেলে।
২: তাঁর চোখে ভাঙা চশমা।
৩: ট্রেনটির গতি তীব্র।
৪: সহজ অঙ্কটা ভুল করেছ।
৫: ক্লাসের প্রথম ছাত্র অনুপস্থিত।
বিশেষণ পদের উদাহরণ : বাক্যে প্রযুক্ত উদাহরণ
১: রাম ভালো ছেলে।
২: তাঁর চোখে ভাঙা চশমা।
৩: ট্রেনটির গতি তীব্র।
৪: সহজ অঙ্কটা ভুল করেছ।
৫: ক্লাসের প্রথম ছাত্র অনুপস্থিত।
৬: বাজার থেকে দশ কিলো চাল আনবে।
৭: তুমি কতটা খাবার খাবে?
৮: মনোহর বাবু সৎ লোক নয়।
(এ ছাড়া বিশেষণ পদের আরও প্রচুর উদাহরণ দেখুন বিশেষ্য ও বিশেষণের এই তালিকা থেকে।)
এখানে, ভালো, ভাঙা, তীব্র, সহজ, প্রথম এইসব চিহ্নিত পদগুলি বিশেষণ পদের উদাহরণ। এ ছাড়াও আরও অনেক প্রকারের বিশেষণ পদের উদাহরণ পাওয়া যায় আমাদের ভাষায়। বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে আমরা সে সব উদাহরণ আরও বিস্তারিত জানব।
বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ : বিশেষণ পদ কয় প্রকার
বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ করার জন্য আমাদের বেশ কয়েকটি মাপকাঠি দিয়ে বিচার করতে হয়। যেমন : বিশেষণটি কাকে বিশেষিত করছে, তার উপর ভিত্তি করে বিশেষণ পদ কত প্রকার তা যেমন দেখতে হয়, তেমনি বিশেষিত পদটির কোন বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হচ্ছে, যেমন : গুণ, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি অনুসারেও বিশেষণের প্রকারভেদ পাওয়া যাবে। আবার বিশেষণ পদটির গঠন কেমন, তার উপর ভিত্তি করে আর এক ধরণের শ্রেণিকরণ করা যায়।
প্রথমে আমরা দেখব বিশেষণ পদটি কোন পদকে বিশেষিত করছে, তার উপর ভিত্তি করে বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ। বিস্তারিত পড়ার আগে এই ভিডিওটি দেখে নিন।
১: বিশেষ্যের বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য পদের বৈশিষ্ট্য, ধর্ম, গুণাগুণ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা, ক্রম, মাত্রা ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে।
বিশেষ্যের বিশেষণের উদাহরণ :
১: সায়ন বুদ্ধিমান ছেলে। ২: প্রীতম লাল জামা গায়ে দিয়েছে। ৩: ঋতম গল্পের* বই পড়ছে।
এই তিনটি বাক্যে 'বুদ্ধিমান', 'লাল' ও 'গল্পের' পদ তিনটি যথাক্রমে 'ছেলে', 'জামা' ও 'বই' , এই তিনটি বিশেষ্যের পরিচয় বা গুণাগুণ স্পষ্ট করছে। তাই বুদ্ধিমান, লাল ও গল্পের--এই তিনটি পদ বিশেষ্যের বিশেষণ।
[*এখানে কারও কারও খটকা লাগবে। 'গল্পের' পদটি তো বিশেষ্য পদ বলেই আমরা জানি ! এখানে বিশেষণ হল কেমন করে? শব্দ ও পদ অধ্যায়ে আমি আগেই বলেছি, কোনো পদ বাক্যে কী ভূমিকা পালন করছে, তার উপরেই তার পদপরিচয় নির্ভর করে। একক শব্দের কোনো পদপরিচয় দেওয়া বা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। উক্ত উদাহরণে 'গল্পের' পদটি বইয়ের পরিচয় বা কোন জাতের বই, সেটি প্রকাশ করছে। গল্পের বইও বই, অঙ্কের বইও বই। 'গল্পের' ও 'অঙ্কের' পদদুটি এখানে দুটি বইয়ের বৈশিষ্ট্যগত পরিচয় তুলে ধরছে। তাই পদদুটি বিশেষণ পদ হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু বিভ্রান্তি এখানেই শেষ হয় না। এখন কেউ যদি বলে, 'রামের ভাই' , 'রাজার বেটা' , 'দেশের মাটি' এই ক্ষেত্রগুলিতেও কি একই ফল হবে? আমরা বলব, "না"। তা হবে না। এই উদাহরণগুলিতেও 'রামের', 'রাজার', 'দেশের' পদগুলিতে বিশেষণের ভাব অল্প আছে। তবু এগুলো বিশেষণ নয়। কারণ এই উদাহরণগুলিতে এই পদগুলির অধিকার-সম্পর্ক অতি স্পষ্ট। তাই এগুলি সম্বন্ধ পদের মধ্যে গণ্য হবে। অর্থাৎ এরা এখানে বিশেষ্য। সম্বন্ধ পদ সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হলে ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট হবে। আপাতত মূল আলোচনায় ফেরা যাক।]
২: সর্বনামের বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ কোনো সর্বনাম পদের গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি জানান দেয়, তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে।
সর্বনামের বিশেষণের উদাহরণ :
১: অন্ধ আমি অন্তরে বাহিরে। ২: তুমি খুব ভালো, আমি তত ভালো নই। এই উদাহরণগুলিতে 'অন্ধ' , 'ভালো'(২টিই) এই পদগুলি সর্বনামের বিশেষণ। সর্বনামের বিশেষণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বনামের পরেই বসে। বিশেষণ সাধারণত বিশেষিত পদটির আগেই বসে, তবে সবসময় আগেই বসতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। যদি বলি, "ছেলেটি বড় ভালো।" তাহলেও 'ভালো' পদটি ছেলেটির গুণই প্রকাশ করে।
৩: বিশেষণের বিশেষণ :
যে বিশেষণগুলি অন্য একটি বিশেষণের মাত্রা বা বিশেষত্ব প্রকাশ করে তাদের বলে বিশেষণের বিশেষণ।
বিশেষণের বিশেষণের উদাহরণ :
১: দাদার গায়ে টকটকে লাল জামা। ২: বৌদির পরণে কালচে সবুজ শাড়ি। ৩: ওদের ছেলেটা ভারি চঞ্চল।
উপরের তিনটি বাক্যে 'টকটকে', 'কালচে' ও 'ভারি' পদগুলি যথাক্রমে 'লাল', 'সবুজ' ও 'চঞ্চল' , এই তিনটি বিশেষণ পদের মাত্রা বা বিশিষ্টতা প্রকাশ করছে। তাই এরা (টকটকে, কালচে ও ভারি) বিশেষণের বিশেষণ।
৪: ক্রিয়ার বিশেষণ :
যে সব বিশেষণ পদ ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, তাদের ক্রিয়া-বিশেষণ বা ক্রিয়ার বিশেষণ বলে।
ক্রিয়া কী ভাবে ঘটছে, তা বুঝিয়ে দেওয়া ক্রিয়াবিশেষণের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে ক্রিয়া সংঘটনের স্থান-কালও ক্রিয়াবিশেষণ রূপে কাজ করে।
ক্রিয়াবিশেষণের উদাহরণ :
১: গাড়িটি জোরে ছুটছে। ২: আমি প্রথমে এসেছি। ৩: তারা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। ৪ : লোকটি হেঁটে হেঁটে আসছে। ৫: কাজটি সহজে করা যাবে না। ৬: তুমি আদপেই কিছু জানো না।
উপরের উদাহরণগুলিতে 'জোরে', 'প্রথমে', 'ক্রমশ', 'হেঁটে হেঁটে', 'সহজে', 'আদপেই' পদগুলি ক্রিয়াবিশেষণ।
ক্রিয়াবিশেষণের অনেক প্রকারভেদ আছে। যেমন
১: দ্রুততা/মন্থরতা অর্থে ২: অসমাপিকা ক্রিয়াজাত
৩: মাত্রাবাচক ৪: স্থানবাচক (যেমন: সে বিদেশে পড়াশোনা করেছে।) ৫: কালবাচক [যেমন: আমি ভোরেই বেরিয়েছি। এখানে 'ভোরেই' পদটির দ্বারা ক্রিয়াটি কখন ঘটেছে তা যেমন প্রকাশিত হচ্ছে, একই সঙ্গে এটাও বোঝা যাচ্ছে যে কাজটা কত তাড়াতাড়ি হয়েছে। স্থানবাচক ও কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণের উদাহরণ দেওয়ার সময় সতর্ক থাকা দরকার। খেয়াল রাখতে হবে, অধিকরণের ভাবটি অপেক্ষা বিশেষণ-ভাবটি যেন প্রকট হয়। সম্ভব হলে এই বিষয়টি পরবর্তী কালে বিশদে আলোচনা করব।]
৫: অব্যয়ের বিশেষণ :
যে বিশেষণ অব্যয়কে বিশেষিত করে, তাদের অব্যয়ের বিশেষণ বলে।
অব্যয়ের বিশেষণের অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের সংশয় আছে। আপাতত অনুসর্গকে অব্যয় হিসেবে ধরে (ধরা উচিত কি না, এ বিষয়েও বিতর্ক আছে।) দু একটি উদাহরণ দিলাম :
১: আমি তোমার ঠিক পাশে থাকবো। (ঠিক) ২: মন্দিরের একেবারে সামনে আমার বাড়ি। (একেবারে)।
এখন আমরা দেখে নেব, বিশেষিত পদটির কোন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করছে, তার বিচারে বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ। বিস্তারিত পড়ার আগে নিচের ভিডিওটি দেখে নিন।
এখন আমরা দেখে নেব, বিশেষিত পদটির কোন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করছে, তার বিচারে বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ। বিস্তারিত পড়ার আগে নিচের ভিডিওটি দেখে নিন।
১: গুণবাচক বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদের দ্বারা অন্য পদের দোষ, গুণ, ধর্ম প্রকাশ পায়, তাকে গুণবাচক বিশেষণ বলে।
গুণবাচক বিশেষণের উদাহরণ: ভালো, মন্দ, সুন্দর, লম্বা, বেঁটে, সোজা, উঁচু, কঠিন**(কঠিন হৃদয়, কঠিন অঙ্ক), কোমল, বড়, ছোটো, চ্যাপ্টা ইত্যাদি।
২: অবস্থাবাচক বিশেষণ :
যে বিশেষণ অন্য পদের অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলে।
অবস্থাবাচক বিশেষণের উদাহরণ : তরল, কঠিন**(কঠিন পদার্থ), দরিদ্র, ধনী, সুখী, প্রসন্ন, শান্ত, লুপ্ত, ঊহ্য, বিকশিত, প্রকাশিত, ভস্মীভূত, ক্রুদ্ধ, তপ্ত, রিক্ত, বিপন্ন, চলমান, স্ফুটমান, চলন্ত, ফুটন্ত ইত্যাদি।
[** প্রয়োগ অনুসারে একই বিশেষণ ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে পড়তে পারে। এমনকি একই শব্দ প্রয়োগভেদে অন্য পদও হয়ে যায়। তাই পদ চেনার ক্ষেত্রে প্রয়োগটিই দেখতে হয়।]
৩: সংখ্যাবাচক বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ বিশেষ্যের (কখনো কখনো সর্বনামের#) সংখ্যা প্রকাশ করে, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলে।
[# যেমন, আমরা দুটিতে একসঙ্গে থাকি।]
সংখ্যাবাচক বিশেষণের উদাহরণ : পাঁচটি কলম, দুটো ছেলে, বেশ কয়েকটা বই, এক গণ্ডা মিঠাই, আড়াইখানা আপেল, তিনগুণ উপার্জন ইত্যাদি। (পাঁচটি, দুটো, কয়েকটা, এক গণ্ডা, আড়াইখানা, তিনগুণ, এগুলি সবই সংখ্যা-বিশেষণ)
সংখ্যাবাচক বিশেষণের প্রকারভেদ আছে। যেমন :
১: বিশুদ্ধ সংখ্যা ২: ভগ্নাংশ সংখ্যা (দেড়, আড়াই, পৌনে তিন) ৩: গুণিতক সংখ্যা (দ্বিগুণ, দশগুণ, দু-ডজন) এবং ৪: অনির্দিষ্ট সংখ্যা (গোটাকতক, খানকয়েক, কয়েকটা)।
৪: পূরণবাচক বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদের দ্বারা কোনো বিশেষ্যের সংখ্যাগত ক্রমিক অবস্থান বোঝানো হয়, তাকে পূরণবাচক বিশেষণ বলে।
পূরণবাচক বিশেষণের উদাহরণ:
প্রথম, দ্বিতীয়, দশম, ঊনবিংশ, দশের (যেমন, দশের নামতা), পয়লা, পঁচিশে, শততম ইত্যাদি।
এখানে মনে রাখতে হবে: পূরণবাচক বিশেষণ সবসময় একটি বিশেষ্যকে বোঝায়। অর্থাৎ 'তৃতীয় সন্তান' বললে একটিই সন্তানকে বোঝায়।
সংখ্যা ও পূরণবাচক বিশেষণ বিস্তারিত পড়ুন এখানে ক্লিক করে।
৫: পরিমাণবাচক বিশেষণ :
যে বিশেষণ কোনো বিশেষ্যের পরিমাণ বোঝায়, তাকে পরিমাণবাচক বিশেষণ বলে।
পরিমাণবাচক বিশেষণের উদাহরণ :
প্রচুর, এক লিটার, দু'কেজি, অনেকটা, একমুঠো, একফোঁটা ইত্যাদি। (এই বিশেষণগুলিতে সংখ্যার ব্যবহার হলেও এগুলি সংখ্যাবাচক বিশেষণ নয়।)
এর পর আমরা দেখে নেব গঠনগত দিক দিয়ে বিশেষণের প্রকারভেদ :
বিশেষণের গঠনগত প্রকারভেদগুলি আমরা শুধু উদাহরণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করব।
১: একপদী বিশেষণ :
১: রাম ভালো ছেলে। ২: তারা বড়ো মানুষ।
এখানে বিশেষণগুলি একটি পদ নিয়ে গঠিত।
২: বহুপদী বিশেষণ / বাক্যাংশ বিশেষণ
১: বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো ছেলে। ( 'ছেলে' পদটির বিশেষণ হিসেবে কাজ করছে বাকি পুরো অংশটা।)
২: ঘুম ভাঙানিয়া গান। ( 'গান'-এর বিশেষণ বাকিটা)
৩: নাম-বিশেষণ :
কখনো কখনো শ্রেণিবাচক বিশেষ্যের নামটিই বিশেষণ রূপে কাজ করে।
উদাহরণ : ১: কলকাতা শহর। ( 'কলকাতা' বিশেষণের কাজ করছে।)
২: ল্যাংড়া আম। ('ল্যাংড়া' নাম হলেও বিশেষণ।)
৪: ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ :
ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলি বাক্যের মধ্যে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। এরা যখন বিশেষণের কাজ করে তখন এদের বলে ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ। যেমন: খুকখুক কাশি। ধুপধাপ শব্দ। ( ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলো বিশেষণ রূপে কাজ করছে।)
৫: সম্বন্ধীয় বিশেষণ :
সম্বন্ধ পদ যখন বিশেষণ রূপে কাজ করে তখন তাকে সম্বন্ধীয় বিশেষণ বলে। র/এর বিভক্তি-বিশিষ্ট পদগুলি সম্বন্ধ পদ।
সম্বন্ধীয় বিশেষণের উদাহরণ
১: মাটির পুতুল । ২: শক্তিগড়ের ল্যাংচা। মায়ের স্নেহ। মগের মুল্লুক। ঘুমের দেশ।
কাজের মানুষ।
এ ছাড়াও আছে
৬: পদান্তরিত বিশেষণ: গেছো বিড়াল, ঘরোয়া খাবার।
৭: শব্দদ্বৈতাশ্রয়ী বিশেষণ: লাল লাল ফুল। বড় বড় গাছ।
৮: অব্যয়জাত বিশেষণ : আচ্ছা বিপদে পড়া গেল!
৯: ক্রিয়াজাত বিশেষণ বলে আর এক ধরনের বিশেষণ আছে। বাংলায় এগুলি ধাতুর সাথে আ প্রত্যয় যোগে তৈরি হয়। যেমন: দেখা সিনেমা আবার দেখছি। পড়া বইটি আবার পড়ছি। এখানে 'দেখা' ও 'পড়া' বিশেষণ পদের কাজ করছে। মনে রাখতে হবে, আ প্রত্যয় যোগে বিশেষ্য পদও তৈরি হয়। প্রয়োগ অনুসারে বুঝতে হবে কোনটি বিশেষ্য ও কোনটি বিশেষণ। ক্রিয়াজাত বিশেষণগুলি কর্মবাচ্যের ক্রিয়াপদ গঠনে ব্যবহৃত হয়।
বাক্যের মধ্যে অবস্থান অনুযায়ী বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ
সাক্ষাৎ বিশেষণ
যে বিশেষণগুলি বিশেষিত পদটির আগে বসে, তাদের সাক্ষাৎ বিশেষণ বলে।
যেমন: সে ভালো ছেলে। লাল জামা কিনবো। বয়স্ক লোকটি বসে আছে।
উপরের তিনটি উদাহরণে বিশেষিত পদগুলি হল 'ছেলে', 'জামা' ও 'লোকটি'। চিহ্নিত পদগুলি সাক্ষাৎ বিশেষণ, কারণ এরা বিশেষিত পদের আগে বসেছে।বিধেয় বিশেষণ
বিধেয় বিশেষণ বলা হয় সেইসব বিশেষণকে যারা বাক্যের বিধেয় অংশে ব'সে উদ্দেশ্যের দোষ, গুণ ইত্যাদি প্রকাশ করে। সর্বনামের বিশেষণগুলি প্রায়শই বিধেয় বিশেষণ হয়। অন্য পদের বিশেষণও বিধেয় অংশে বসতে পারে।
যেমন, তুমি বড়। আমি ছোটো। ছেলেটা ভালো। লোকটা সুখী।
উপরের প্রতিটি উদাহরণে বিশেষণটি বিধেয় অংশে উপস্থিত থেকে উদ্দেশ্য অংশকে বিশেষিত করছে।
বিশেষণের তারতম্য বা অতিশায়ন
বিশেষণ পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর অতিশায়ন বা তারতম্য। বিশেষণ পদের কাজ হলো অন্য পদের ধর্ম, বৈশিষ্ট্য, দোষগুণাদি প্রকাশ করা। এই কাজ করতে গিয়ে দোষগুণের তুলনামূলক মাত্রা প্রকাশ করার জন্য বিশেষণকে অতিশায়িত করতে হয়। যেমন: দুটি বস্তুর দোষ গুণের তুলনামূলক বর্ণনা করার ক্ষেত্রে আমাদের বলতে হয় কোনটি অপেক্ষাকৃত বেশি বা কম দোষ-গুণের অধিকারী। আবার বহু বস্তুর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে বলতে হয় কোনটি সবচেয়ে বেশি বা কম দোষ-গুণের অধিকারী। এই কাজটি করার জন্য বিশেষণ পদের রূপান্তর ঘটাতে হয়। 'তর' ও 'তম', এই দুটি লগ্নক যোগ করে বিশেষণের অতিশায়ন করা যায়। আবার কিছু তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে বিশেষণ পদটির সঙ্গে বিশেষ প্রত্যয় যোগে এর গঠন বদলেও এই কাজ করা যায়।
বিশেষণের তারতম্য কাকে বলে?
বিশেষণ পদের শেষে তর ও তম লগ্নক যোগে বিশেষণ পদের যে মাত্রাগত তুলনা করা হয়, তাকে বিশেষণের তারতম্য বলে।
যেমন: ক্ষুদ্রতর = দুইয়ের মধ্যে ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্রতম = অনেকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র।
তর ও তম যোগে অতিশায়নের উদাহরণ
তর যোগে বোঝায় দুইয়ের মধ্যে অধিক এবং তম যোগে বোঝানো হয় সকলের মধ্যে অধিক বা বহুর মধ্যে অধিক।
যেমন:
সুন্দর > সুন্দরতর> সুন্দরতম
বৃহৎ > বৃহত্তর > বৃহত্তম
অধিক > অধিকতর > অধিকতম
ক্ষুদ্র > ক্ষুদ্রতর > ক্ষুদ্রতম
দ্রুত > দ্রুততর > দ্রুততম
সফল > সফলতর > সফলতম
কয়েকটি তৎসম শব্দের অতিশায়ন
ঘন > ঘনীয়ান > ঘনিষ্ঠ
লঘু > লঘীয়ান > লঘিষ্ঠ
যুবন > কনীয়ান > কনিষ্ঠ
শ্রেয় > শ্রেয়ান > শ্রেষ্ঠ
সর্বনামের বিশেষণ ও সর্বনামীয় বিশেষণের পার্থক্য
সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে যে বিশেষণগুলি, তাদের বলে সর্বনামের বিশেষণ। যেমন: আমি ভালো, তুমি মন্দ, সে বোকা, উনি সম্মানীয়।
মনে রাখতে হবে, সর্বনামের বিশেষণগুলি অন্য পদকেও বিশেষিত করতে পারে। অর্থাৎ সর্বনামের বিশেষণ সব সময় সর্বনামের বিশেষণ নাও হতে পারে। প্রয়োগ বদলে গেলে বিশেষণটির শ্রেণি বদলে যাবে, কারণ এটি বিশেষণের একটি প্রয়োগগত শ্রেণি।
অপর দিকে, যে বিশেষণ পদগুলির জন্ম হয় কোনো একটি সর্বনাম পদ থেকে, তাদের বলে সর্বনামীয় বিশেষণ। যেমন: যত টাকা চাই দেব।
মদীয় বাসভবন। কী উপায় বের করলে?
উনি কেমন লোক?
এই বিশেষণগুলির মূলে একটি করে সর্বনাম আছে। (যা>যত, মৎ>মদীয়, কী>কী, কী>কেমন) তাই এগুলি সর্বনামীয় বিশেষণ। সর্বনামীয় বিশেষণ যে ভাবেই প্রযুক্ত হোক না কেন, এটি সবসময় সর্বনামীয় বিশেষণ থাকবে, কারণ এটি বিশেষণের একটি গঠনগত শ্রেণি। অবশ্য প্রয়োগ ভেদে আলাদা শ্রেণিতে ফেলা যাবে।
আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ