বাংলা ভাষার জন্ম কোথা থেকে | কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে

বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাবংশের অন্তর্গত একটি নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা হল বাংলা। আনুমানিক দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে (৯০০খ্রি: -১১৯৯ খ্রি: সময়কাল) বাংলা ভাষার জন্ম হয়। একটা সময় ছিলো, যখন বঙ্গদেশে শুধুমাত্র প্রাচীন অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস ছিলো। আর্য জনজাতির মানুষ পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলে এসে বসবাস করতে শুরু করে। বঙ্গদেশে আসার সময় আর্যরা কথা বলতো প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃত ভাষা প্রাচীন আর্য ভাষার‌ই (যাকে সংস্কৃত বলা চলে) রূপান্তরিত চেহারা। এই প্রাকৃত ভাষা আর‌ও বিবর্তিত হয়ে পরিণত হয় অপভ্রংশ ভাষায়। বঙ্গদেশে প্রচলিত অপভ্রংশ ভাষার নাম ছিল পূর্ব (বা পূর্বী) মাগধী অপভ্রংশ। এই পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ ও এই অঞ্চলে আগে থেকে বসবাসকারী অনার্য গোষ্ঠীর মানুষের ভাষার মিশ্রণে তৈরি হল বাংলা ভাষা। নিচের ছক দুটি থেকে আমরা বাংলা ভাষার জন্মকথা মোটামুটি বুঝতে পারবো।

প্রাচীন ভারতীয় আর্য (সংস্কৃত) > মাগধী প্রাকৃত > মাগধী অপভ্রংশ।

মাগধী অপভ্রংশ + বঙ্গদেশে প্রচলিত অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা = বাংলা ভাষা।

এর পর এই বাংলা ভাষা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষার জন্মের পর এই ভাষার তিনটি স্তর লক্ষ করা যায়। 

১: প্রাচীন বাংলা: এর একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। প্রাচীন বাংলার সময়কাল দশম থেকে দ্বাদশ শতক।

২: মধ্য বাংলা: এর নিদর্শন মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্য, যেমন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, কৃত্তিবাসের রামায়ণ, কাশীরাম দাসের মহাভারত, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল প্রভৃতি। মধ্য বাংলাকে দুটি উপ-স্তরে ভাগ করা যায় - আদি মধ্য ও অন্ত্য মধ্য। মধ্য বাংলার সময়কাল ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ।

৩: আধুনিক বাংলা: আধুনিক বাংলা ভাষার জন্ম হয় অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে। আধুনিক বাংলায় অজস্র উন্নত মানের সাহিত্য রচিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কাব্য-কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প প্রভৃতি।

বাংলা ভাষার বয়স কত?

বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময়কাল নিয়ে অল্পবিস্তর বিতর্ক আছে। কেউ বলেন বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে, আবার কেউ বলেন দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে। তাই বাংলা ভাষার বয়স কত, এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় বাংলা ভাষার বয়স এক হাজার থেকে এক হাজার চার শত বছর।

বাংলা শব্দভাণ্ডার

এইভাবে বাংলা ভাষার জন্ম হ‌ওয়ার ফলে বাংলা ভাষায় প্রথমেই স্থান পেল ১. প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত সংস্কৃত শব্দ(তদ্ভব) , ২: অপরিবর্তিত সংস্কৃত শব্দ যা তৎসম শব্দ নামে পরিচিত ৩. কিছু বিকৃত সংস্কৃত শব্দ(অর্ধতৎসম) এবং ৪. অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষার শব্দ(দেশি)। এই চার প্রকার শব্দ‌ই বাংলা শব্দভাণ্ডারের আদি সম্পদ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিদেশি জাতির সঙ্গে নানা কারণে বাঙালির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন ঐ সব জাতির ভাষা থেকে বহু শব্দ বাংলা শব্দভাণ্ডারে ঢুকতে থাকে। বঙ্গে মুসলমান শাসনের আমলে ফারসি ও আরবি ভাষার বহু শব্দ বাংলা ভাষায় ঢোকে। ব্রিটিশ শাসনকালে ইংরেজি শব্দ ঢোকে। ইংরেজি শব্দ এখনও বাংলা শব্দভাণ্ডারে ঢুকছে, আগামী দিনেও ঢুকবে।

আরও পড়ুন

তৎসম শব্দ 

তদ্ভব শব্দ 

উপভাষা কাকে বলে 

সূচিপত্র

মন্তব্যসমূহ

আর‌ও পড়ে দেখুন

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

লোকনিরুক্তি কাকে বলে

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

অপিনিহিতি কাকে বলে

শব্দ ও পদের পার্থক্য | শব্দ ও পদ

অভিশ্রুতি কাকে বলে?

বিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে | অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে