পুরুষ কাকে বলে? পুরুষের ধারণা ও শ্রেণিবিভাগ | Purush kake bole
পুরুষ কাকে বলে?
আমি-আমরা উত্তম পুরুষ, তুমি-তোমরা মধ্যম পুরুষ, সে-তারা-রাম-শ্যাম প্রথম পুরুষ। এই পর্যন্ত আমরা সবাই জানি। প্রায় সমস্ত বইয়েই এই ধারণাটি দেওয়া আছে। কিন্তু পুরুষ কাকে বলে? পুরুষ বিষয়টি আসলে কী? এই পোস্টে আমাদের আলোচনা এই নিয়েই।
আমরা জানি বাক্যের মূল উপাদান হল পদ। পাঁচ প্রকার পদের মধ্যে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদগুলিকে তিনটি পুরুষ বা পক্ষে বিভক্ত করা হয়। বাক্য গঠনে এই পুরুষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াটি গঠনে বাক্যের উদ্দেশ্য-পদটির পুরুষের ভূমিকা থাকে। এই কারণেই পুরুষ জানা দরকার।
পুরুষ আসলে কী?
পুরুষ হল বাক্যস্থ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের এক ধরনের পরিচিতি। পুরুষ কী তা বোঝার জন্য প্রথমেই বুঝতে হবে যে, প্রত্যেক বাক্যের একজন বক্তা থাকে এবং প্রতিটি বাক্যই কোনো না কোনো শ্রোতার উদ্দেশ্যে বলা হয়ে থাকে। শ্রোতা একসঙ্গে একাধিক হতে পারে। বক্তা সাধারণভাবে একাধিক না হলেও একাধিক ব্যক্তির হয়ে কেউ কথা বলতেই পারে। যেমন: ধরা যাক একটি ছেলে স্কুলের সমস্ত ছাত্রছাত্রীর তরফে শিক্ষকদিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছে। তখন সে যদি বলে 'আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা মেনে চলি।" তাহলে 'আমরা' পদটির দ্বারা স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীর কথাই বোঝানো হলো এবং তখন এই 'আমরা' পদটি বক্তা-পক্ষে পড়লো। পরের বাক্যে ছেলেটি যদি বলে "আপনারা আমাদের পথ দেখান।" তাহলে 'আপনারা' বলতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বোঝালো। তাঁরা এখানে শ্রোতার ভূমিকায় আছেন। তাই এখানে 'আপনারা' পদটি হল শ্রোতাপক্ষ। এরপর ছেলেটি বলল, "আমাদের বাবা-মায়েরাও আমাদের শিক্ষক।" এখানে 'বাবা-মা' অনুপস্থিত, অথবা উপস্থিত থাকলেও সরাসরি তাঁদের উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়নি, কারণ ছাত্রটির উদ্দিষ্ট শ্রোতামণ্ডলী হলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ। শ্রোতামণ্ডলীকে বোঝানোর জন্য ছেলেটি 'আপনারা' পদটিই ব্যবহার করবে। তাই 'বাবা-মায়েরা' পদটি বক্তা ও শ্রোতার বাইরে অন্য একটি পক্ষে পড়ল। এই পক্ষকে আমরা 'অন্য পক্ষ' বলতে পারি।
উত্তম, মধ্যম ও প্রথম পুরুষের বিভাজন
উপরের তিনটি উদাহরণ থেকে আমরা বুঝলাম কী ভাবে কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পুরুষ বা পক্ষ নির্ণয় করতে হয়। এবার উদাহরণ সহযোগে তিনটি পুরুষের সংজ্ঞা জেনে নেবো।
উত্তম পুরুষ কাকে বলে ও উদাহরণ
বাক্যের বক্তা যে পদের দ্বারা নিজেকে বা নিজেদেরকে বোঝায়, তা বক্তাপক্ষ, একেই বলা হয় উত্তম পুরুষের পদ। যেমন: আমি, আমরা, মুই, মোরা। উত্তম পুরুষ সবসময় সর্বনাম পদ হয়।
মধ্যম পুরুষ কাকে বলে ও উদাহরণ
বাক্যের বক্তা যে পদের দ্বারা শ্রোতাকে বোঝায়, তাকে বলে শ্রোতাপক্ষ বা মধ্যম পুরুষ। যেমন: আপনি, আপনারা, তুমি, তোমরা, তুই, তোরা। মধ্যম পুরুষও সবসময় সর্বনাম পদ হয়।
প্রথম পুরুষ কাকে বলে ও উদাহরণ
বাক্যের বক্তা যে বিশেষ্য বা সর্বনামের দ্বারা বক্তা ও শ্রোতার বাইরে অন্য কাউকে নির্দেশ করে, তাকে বলে অন্যপক্ষ বা প্রথম পুরুষ। সমস্ত বিশেষ্য পদই প্রথম পুরুষের অন্তর্গত। এছাড়া বেশ কিছু সর্বনাম পদও প্রথম পুরুষের মধ্যে পড়ে। যেমন: সে, তিনি, ও, ওরা, এ, এরা, ওই প্রভৃতি।
পুরুষবাচক বিভক্তি
আমরা আগেই বলেছি সমাপিকা সমাপিকা ক্রিয়াপদ গঠনে পুরুষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সমাপিকা ক্রিয়ার শেষ অংশে পুরুষের পরিচয়বাহী বিভক্তিটি থাকে। একে পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি বলে। বিভক্তি অধ্যায়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়ের আলোচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই পড়ুন।
পুরুষ সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞাতব্য বিষয়
- পুরুষের সঙ্গে শুধুমাত্র বিশেষ্য, সর্বনাম ও সমাপিকা ক্রিয়া পদের সম্পর্ক থাকে। অন্য পদের সঙ্গে পুরুষের কোনো যোগ নেই।
- বাংলা ব্যাকরণে পুরুষের ভূমিকা শুধুমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া গঠনের ক্ষেত্রে। উদ্দেশ্য যে পুরুষের হয় সমাপিকা সেই অনুযায়ী গঠিত হয়।
- পুরুষের অপর নাম পক্ষ। তিনটি পক্ষ হল: বক্তাপক্ষ, শ্রোতাপক্ষ ও অন্যপক্ষ।
- পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তির মাধ্যমে সমাপিকা ক্রিয়াতে পুরুষের পরিচয় প্রকাশ পায়।
নির্দেশ অনুযায়ী পুরুষ পরিবর্তন করো
আমাকে YouTube-এ সাবস্ক্রাইব করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ