ক্রিয়ার ভাব | Kriyar bhab in Bengali
ক্রিয়ার ভাব কাকে বলে
সমাপিকা ক্রিয়ার গঠন যে বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে তাদের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল ক্রিয়ার ভাব। সমাপিকা ক্রিয়ার কাজটি কী প্রকারে সম্পাদিত হচ্ছে এবং ক্রিয়া বিষয়ে বক্তার মনোভাব কী, তা বোঝার উপায়কেই ক্রিয়ার ভাব বলে।
ক্রিয়ার ভাবের দ্বারা বক্তার মনোভাবটি স্পষ্ট হয়। যেমন: বক্তা যদি বলে "আজ আমাদের স্কুল ছুটি।" তাহলে বোঝা যাচ্ছে বক্তা একটি ঘটনার বর্ণনা দিতে চাইছে। অপরদিকে বক্তা যদি বলে "তুমি কাল আমার বাড়ি যেও।" তাহলে বক্তার মনোভাবে অনুরোধ ধরা পড়ছে। এই পার্থক্যটি স্পষ্ট হয় ভাবের দ্বারা বা সহজ ভাষায় বললে দুটি বাক্যের মধ্যে এই পার্থক্যটিই ভাব।
ক্রিয়ার ভাব কত প্রকার?
ভাব কত প্রকার তা বলার আগে জানিয়ে রাখি: পৃথিবীর সব ভাষায় ভাবের সংখ্যা সমান নয়। এর কারণ এই নয় যে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মনোভাবের প্রকারভেদ সমান নয়। এর কারণ এই যে, সব ভাষায় সব ভাবের জন্য আলাদা আলাদা ক্রিয়ারূপ পাওয়া যায় না। কোনো ভাষায় কোনো একটি ভাবের জন্য আলাদা ক্রিয়ারূপ না পাওয়া গেলে সেই ভাবটি ঐ ভাষার ব্যাকরণে আলোচিত হবে না, এটাই স্বাভাবিক।
যেমন: সংস্কৃত ভাষায় পাঁচটি ভাব ছিলো। বাংলা ভাষায় এদের মধ্যে সবকটির গুরুত্ব নেই। আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষায় কেবল তিনটি ভাবের কথাই বলেছেন।
- বিবৃতি বা নির্দেশক ভাব,
- অনুজ্ঞা বা নিয়োজক ভাব এবং
- অপেক্ষিত বা সংযোজক বা সম্ভাবক ভাব।
বিবৃতি বা নির্দেশক ভাব
যে ভাবে বক্তা কোনো ঘটনার বিবরণ দেয় বা বিবৃতি দেয়, তাকে বলা হয় নির্দেশক ভাব বা বিবৃতি ভাব।
নির্দেশক ভাবের উদাহরণ
ছেলেটি প্রতিদিন মন দিয়ে পড়াশোনা করে।
রাখাল গোরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
আমি বুড়িগঙ্গার ওই পারে থাকি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন।
অনুজ্ঞা ভাব
ক্রিয়ার যে ভাবে বক্তা কাউকে কিছু করতে আদেশ, অনুরোধ করে বা উপদেশ দান করে, তাকে অনুজ্ঞা ভাব বলে।
অনুজ্ঞা ভাবের উদাহরণ
আমাকে একটা কলম দিও।
দরজাটা বন্ধ করে এসো।
জুতো বাইরে খুলুন।
বিমল একবার গিয়ে দেখে আসুক।
যিনি কাজ জানেন তিনি দায়িত্ব নিন।
অপেক্ষিত ভাব বা সংযোজক ভাব
একটি ক্রিয়া সম্পাদনের সাপেক্ষে অপর একটি ক্রিয়া সম্পাদিত হলে, প্রথম ক্রিয়াটির ভাবকে ঘটনান্তরপেক্ষিত বা সংযোজক বা সম্ভাবক ভাব বলে।
সংযোজক ভাবের উদাহরণ
যদি তুমি যাও, তবে আমি যাবো।
যদি ছেলেরা খেতে চায়, খেতে দেবো।
যদি এখনই যাও, তাহলে ট্রেন পাবে।
যদি ক্ষমতায় কুলোয়, তবেই চেষ্টা করবো।
মনে রাখতে হবে, উপরের উদাহরণগুলিতে শুধুমাত্র স্থূলাক্ষর ক্রিয়াগুলির ভাব সংযোজক। এই ক্রিয়াগুলি অর্থ প্রকাশের জন্য অপর একটি ঘটনার অপেক্ষা করে, তাই এদের ভাবকে বলে ঘটনান্তরপেক্ষিত ভাব।
ক্রিয়ার ভাব ও বাক্যের অর্থগত শ্রেণিবিভাগের সম্পর্ক
বাংলায় ক্রিয়ার ভাব দেখলাম তিনটি, অথচ বাংলা বাক্যের অর্থগত শ্রেণিবিভাগে সাত প্রকার বাক্য পাচ্ছি। এই বিষয়ে কোনো রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া কাম্য নয়। নির্দেশক, অনুজ্ঞা ও সংযোজক, এই তিনটি ভাব অনুযায়ী তিন প্রকার বাক্য আমরা পাচ্ছি: নির্দেশক বাক্য, অনুজ্ঞাসূচক বাক্য ও শর্তসাপেক্ষ বাক্য। তাহলে বাকি চার প্রকার বাক্যের জন্য ভাব নেই কেন? এই প্রশ্নটি সঙ্গত ভাবেই কৌতুহলী শিক্ষার্থীদের মনে আসবে। এর উত্তরে বলি: বাক্যের এক একটি অর্থগত শ্রেণিবিভাগে এক একটি ভাব থাকার কোনো কারণ নেই। কেন না, বাক্যের অর্থ অনুযায়ী ক্রিয়ার ভাব নিরূপণ করা হয় না। ক্রিয়ার ভাব নিরূপণ করা হয় সমাপিকা ক্রিয়ার গঠন ও প্রকাশ অনুযায়ী। বাংলায় নির্দেশক ও অনুজ্ঞা ভাবের জন্য ক্রিয়াপদের আলাদা রূপ পাওয়া যায়। যেমন: ভবিষ্যৎ কালে "তুমি যাবে।" - এই বাক্যে বিবৃতি বোঝায়, আবার অনুজ্ঞাও বোঝায়, কিন্তু "তুমি যেও।" এই বাক্যে শুধুমাত্র অনুজ্ঞা বোঝায়। তার মানে অনুজ্ঞা ভাবের জন্য ক্রিয়াপদের স্বতন্ত্র চেহারা বাংলা ভাষায় রয়েছে। অতএব এই ভাবটিকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণে আলোচনা করতে হবে। এইভাবে প্রশ্নসূচক, বিস্ময়সূচক প্রভৃতি বাক্যের জন্য বাংলাতে ক্রিয়াপদের আলাদা রূপ নেই, তাই এইসব বাক্যের জন্য আলাদা ভাবেরও প্রশ্ন ওঠে না। প্রশ্নসূচক, বিস্ময়সূচক, সন্দেহবাচক বাক্যকে নির্দেশক ভাবের অন্তর্গত করতে হবে এবং প্রার্থনাসূচক বাক্যকে অনুজ্ঞা ভাবের মধ্যে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ