বহুব্রীহি সমাস | বহুব্রীহি সমাসের বিস্তারিত আলোচনা | Bohubrihi somas

বহুব্রীহি সমাসের ধারণা ও প্রকারভেদ


বহুব্রীহি সমাসের ধারণা ও সংজ্ঞা

 বহুব্রীহি শব্দের অর্থ  "বহু ব্রীহি যার"। ব্রীহি কথার অর্থ ধান। অর্থাৎ সহজ ভাবে বললে বহুব্রীহি শব্দের অর্থ হয় যার অনেক ধান আছে বা ধনী ব্যক্তি। অতীতে ধানের দ্বারাই একজন ব্যক্তির ধনসম্পত্তি বিচার করা হত। এরপর আসি বহুব্রীহি সমাসের কথায়। দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ ও কর্মধারয় সমাসের আলোচনায় আমরা দেখেছি, দ্বন্দ্ব সমাসে উভয়পদের এবং তৎপুরুষ ও কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ-প্রাধান্য দেখা যায়। বহুব্রীহি সমাসের ক্ষেত্রে সমস্যমান পদগুলির মধ্যে কোনোটির অর্থ‌ই প্রকাশ পায় না। এখানে অন্য একটি পদের অর্থ প্রকাশ পায়। যেমন: 'চন্দ্রচূড়' সমাসবদ্ধ পদটির ব্যাসবাক্য হবে "চন্দ্র চূড়ায় যাঁর"। পূর্বপদ চন্দ্র, পরপদ চূড়া। কিন্তু চন্দ্রচূড় বললে 'চন্দ্র' বা 'চূড়া' কোনোটিই বোঝায় না, এর অর্থ মহাদেব বা  শিব। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এখানে দুই সমস্যমান পদ মিলে একটি পৃথক অর্থ সৃষ্টি করল। পূর্বোল্লিখিত সমাসগুলিতে সমস্যমান পদগুলি নিজেদের অর্থের অতিরিক্ত অন্য কোনো অর্থ সৃষ্টি করেনি। বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদগুলির অতিরিক্ত নতুন অর্থ পাওয়া যায়। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, বহুব্রীহি সমাসে যে নতুন অর্থবিশিষ্ট শব্দটি তৈরি হয়, সমস্যমান পদগুলির সাহায্যেই ঐ অর্থ নিষ্কাশন করতে হয়। 'চন্দ্রচূড়' শব্দটি শিবের বর্ণনা-মাত্র। শিবের মাথায় চাঁদ থাকে, এই সত্য আমাদের কাছে পরিচিত, তাই এই বর্ণনা থেকে আমরা সহজেই বুঝে যাই চন্দ্রচূড় মানে শিব।
এই সমাসে সমস্যমান পদগুলি সমস্তপদের ধারণাটির বর্ণনা দেয়, তাই একে বর্ণনামূলক সমাস‌ও বলা হয়। 

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে

যে সমাসের সমস্তপদে সমস্যমান পদগুলির কোনোটির অর্থ‌ই প্রকাশিত হয় না, তার পরিবর্তে একটি তৃতীয় পদের অর্থ প্রকাশিত হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ

  • বীণাপাণি: বীণা পাণিতে যাঁর।
  • চন্দ্রচূড় : চন্দ্র চূড়ায় যাঁর।
  • অপুত্রক : পুত্র নেই যার।
  • নির্বোধ: বোধ নেই যার।
  • পঞ্চানন: পঞ্চ আনন যাঁর।
  • বিধুমুখী: বিধুর ন্যায় মুখ যার।
  • হরিণনয়না: হরিণের নয়নের ন্যায় নয়ন যার।
  • সার্থক: অর্থের সহিত বর্তমান।
  • সপরিবার: পরিবারের সহিত বর্তমান।
  • সস্ত্রীক: স্ত্রীর সহিত বর্তমান।
  • শশীশেখর: শশী শিখরে যাঁর।
  • শশাঙ্ক: শশ অঙ্কে যাঁর।
  • অনঙ্গ: নেই অঙ্গ যাঁর।


বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণিবিভাগ

সমানাধিকরণ বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদগুলির দুটির‌ই বিভক্তি এক হয়, তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলে। 

সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ: 
নীলাম্বর = নীল অম্বর যাঁর
পীতাম্বর = পীত অম্বর যাঁর
ছিন্ন মূল যার = ছিন্নমূল


ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস

যে বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদগুলির বিভক্তি আলাদা হয়, তাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে।

উদাহরণ:
বীণা পাণিতে যাঁর = বীণাপাণি
চন্দ্র চূড়ায় যাঁর = চন্দ্রচূড়
শশ অঙ্কে যাঁর = শশাঙ্ক
শশী শিখরে যাঁর = শশীশেখর

সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস

যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে সংখ্যাবাচক বিশেষণ থাকে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে।

উদাহরণ:
পঞ্চ আনন যাঁর = পঞ্চানন (মানে শিব)
ত্রি নয়ন যাঁর = ত্রিনয়নী
চতুঃ(চার) মুখ যাঁর = চতুর্মুখ (মানে ব্রহ্মা)
দশ আনন যাঁর = দশানন
সহস্র লোচন যাঁর = সহস্রলোচন 
দশ ভুজ যাঁর = দশভুজা


ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস

বহুব্রীহি সমাসের সমাসবদ্ধ পদটির দ্বারা পারস্পরিক ক্রিয়াবিনিময় বোঝালে তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে।

ক্রিয়া-বিনিময় বলতে বোঝায় পরস্পর বিপরীতমুখী ক্রিয়া। একজন যদি অপরজনকে টানে অথবা একজন যদি অপরজনকে মারে, তাহলে ক্রিয়ার বিনিময় হয়। এক‌ই ভাবে অন্য কোনো কাজ‌ও যদি দুজন কর্তা পরস্পর বিপরীতমুখে করে, তবে ঐ কাজের নামটি ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস হবে।
এই সমাসে সমস্তপদ গঠিত হয় প্রায় এক‌ই উচ্চারণ-বিশিষ্ট দুটি শব্দের যোগে। শব্দ দুটি সাধারণভাবে এক‌ই মূল শব্দ থেকে সৃষ্ট হয়। যেমন: 'লাঠালাঠি' সমস্তপদটি 'লাঠা' ও 'লাঠি' শব্দের যোগে তৈরি হয়েছে। এই দুটি শব্দ‌ই এসেছে মূল শব্দ 'লাঠি' থেকে।

ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ:

পরস্পর চুল আকার্ষণ করে যে ঝগড়া = চুলোচুলি
লাঠিতে লাঠিতে যে লড়াই = লাঠালাঠি
হাতে হাতে যে লড়াই = হাতাহাতি
পরস্পর তর্ক করে যে বিবাদ = তর্কাতর্কি
পরস্পরকে বলে যে ক্রিয়া = বলাবলি

না বহুব্রীহি/নঞ্ বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে 'নেই' শব্দ এবং পরপদে বিশেষ্য থাকে, তাকে নঞ্ বহুব্রীহি বা না বহুব্রীহি বলে।

মনে রাখতে হবে, ব্যাসবাক্যের 'নেই' শব্দ সমস্তপদে না-বাচক উপসর্গ রূপে থাকে।

নঞ্ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ:

নেই ধন যার: নির্ধন
নেই বোধ যার: নির্বোধ
নেই পুত্র যার: অপুত্রক
নেই বল যার(স্ত্রী): অবলা
নেই বোল যার: অবোলা (অবোলা প্রাণী, 'অবলা' নয়)

নঞ্ বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদটি সাধারণত বিশেষণ হয়।



অলোপ বহুব্রীহি সমাস:

বহুব্রীহি সমাসের সমস্যমান পদের বিভক্তি যদি সমস্তপদেও অক্ষুণ্ন থাকে তবে ঐ বহুব্রীহি সমাসকে অলোপ বহুব্রীহি সমাস বলে ‌

যেমন: 

মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে: মুখে ভাত
হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে: হাতেখড়ি


সহার্থক বহুব্রীহি সমাস

সহিতার্থক পদের সাথে বিশেষ্য পদের বহুব্রীহি সমাসকে সহার্থক বহুব্রীহি বলে। এই সমাসে পরপদটির সাথে কোনো কিছুর অবস্থিতি বোঝায়।

উদাহরণ: 

স্ত্রীর সহিত বর্তমান: সস্ত্রীক
পুত্রের সহিত বর্তমান: সপুত্র
পরিবারের সহিত বর্তমান: সপরিবার
অবধানের সহিত বর্তমান: সাবধান
তর্কের সহিত বর্তমান: সতর্ক
অর্থের সহিত বর্তমান: সার্থক


মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস

যে বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্যে মধ্যপদের আগমন ঘটে এবং সমস্তপদে মধ্যপদটি লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে।

উদাহরণ:

মীনের অক্ষির ন্যায় অক্ষি যার: মীনাক্ষী
মৃগের নয়নের ন্যায় নয়ন যার: মৃগনয়না
চিরুনির দাঁতের ন্যায় দাঁত যার: চিরুনদাঁতী

আমাকে YouTube-এ ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আর‌ও পড়ুন 

সমস্ত পোস্ট দেখার জন্য সূচিপত্রে যান।


মন্তব্যসমূহ

Manas Sobuj Neogi বলেছেন…
স্যার, বাকি সমাসগুলো আলোচনা করলে ভালো হয়
Ananya Pathak বলেছেন…
বাকিগুলো ‌‌‌‌‌করবো।
Nesharul sk বলেছেন…
অসম্ভব ভালো লাগল স্যার।ধন্যবাদ
Nesharul sk বলেছেন…
অসম্ভব ভালো লাগল স্যার।ধন্যবাদ
R.karmakar বলেছেন…
ছাত্র-ছাত্রীদের অসম্ভব কাজের

আর‌ও পড়ে দেখুন

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

লোকনিরুক্তি কাকে বলে

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

অপিনিহিতি কাকে বলে

অভিশ্রুতি কাকে বলে?

নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

বিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে | অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে