বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনি | মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে

মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ও ধারণা


বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি। যথা, অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? মৌলিক স্বরধ্বনি বলতে সেই সব স্বরকে বোঝায় যেগুলিকে ভাঙা যাবে না এবং যে স্বরগুলি অন্য কোনো স্বরের রূপভেদ নয়।

বাংলা স্বরবর্ণ ও স্বরধ্বনি কতগুলি

এখানে মনে রাখতে হবে, বাংলা বর্ণমালায় উপস্থিত অন‍্যান‍্য স্বরগুলো মৌলিক স্বর নয়। যেমন, ঈ স্বরটি ই স্বরের‌ই দীর্ঘ রূপ। আবার ঋ স্বরটি বাংলায় 'রি' রূপে উচ্চারিত হয়। ঐ,ঔ -- এরা দুটি স্বরের যোগে তৈরি যৌগিক স্বর। অপরদিকে অ্যা স্বরটি বাংলা উচ্চারণে বহুল ব‍্যবহৃত হলেও বর্ণমালায় এর নিজস্ব চিহ্ন নেই। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো বাংলা বর্ণমালায় মাত্র দুটি যৌগিক স্বরকে রাখা হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে বাংলায় এই দুটি ছাড়া যৌগিক স্বর নেই। আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চলিত বাংলা ভাষায় মোট ২৫টি যৌগিক স্বরের কথা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে যৌগিক স্বরের সংখ্যা আর‌ও বেশি। কারণ এই ২৫টি আসলে যৌগিক দ্বিস্বর। বাংলা ভাষায় ত্রিস্বর, চতুঃস্বর এমনকি পঞ্চস্বরের যোগে গঠিত যৌগিক স্বরের‌ও যথেষ্ট নিদর্শন রয়েছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা কয়টি, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া গেলেও "বাংলায় মোট স্বরধ্বনি ক'টি" এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য আমাদের হাতে নেই। তাই বাংলা স্বরধ্বনি কটি বলতে বললে মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা বলাই উচিত। তবে বাংলা স্বরবর্ণ কয়টি জানতে চাইলে ১১টি বলতে হবে। কারণ বাংলা বর্ণমালায় ১১টি স্বরবর্ণ রয়েছে।



এখন আমরা একে একে বাংলা মৌলিক স্বরগুলির পরিচয় নেবো। কিন্তু তার আগে উচ্চারণ-কৌশল, মুখবিবরের আকৃতি ও জিহ্বার অবস্থান অনুসারে স্বরধ্বনি কত প্রকার হয় তা বিস্তারিত জেনে নিই। স্বর ও ব্যঞ্জনের ভাষাতাত্ত্বিক সংজ্ঞা জানতে দেখে নিতে পারেন নিচের ভিডিওটি।




সম্মুখ তথা প্রসারিত স্বর: 

যে স্বরগুলির উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনের দিকে থাকে, তাদের সম্মুখ স্বর বলে। এগুলি উচ্চারণ করার সময় আমাদের ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত হয়, অর্থাৎ ওষ্ঠপ্রান্ত দুটি পরস্পর থেকে দূরে যায়। সোজা ভাষায় বললে মুখছিদ্র আড়াআড়ি ভাবে বড়ো হয়। 'এ' স্বরটি উচ্চারণ করে দেখলেই ব‍্যাপারটা বোঝা যাবে। এই কারণে এদের প্রসারিত স্বর‌ও বলে।

পশ্চাৎ তথা কুঞ্চিত স্বর:

এই স্বরগুলির উচ্চারণের সময় জিহ্বা খানিকটা পিছিয়ে যায়। তাই এদের পশ্চাৎ স্বর বলা হয়। এদের উচ্চারণের সময় ওষ্ঠপ্রান্ত দুটি কাছাকাছি আসে(প্রসারিত স্বরের বিপরীত)। এর ফলে ওষ্ঠ কুঞ্চিত হয়। 'উ' স্বরটি উচ্চারণ করলে ঠোঁটের কুঞ্চিত বা কুঁচকানো অবস্থা‌টা স্পষ্ট বোঝা যাবে। তাই এদের কুঞ্চিত স্বর‌ও বলে।

উচ্চ তথা সংবৃত স্বর:

যে স্বরগুলির উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখবিবরের উপরের দিকে অবস্থান করে, তাদের উচ্চ স্বর বলে। এদের উচ্চারণ করার সময় মুখছিদ্র উপর-নিচে অল্প একটু খোলে। অর্থাৎ দুই ঠোঁটের মধ‍্যবর্তী দূরত্ব কম হয়। (প্রসারিত-কুঞ্চিত‌র ক্ষেত্রে আমরা ডাইনে বাঁয়ে ফাঁকটা হিসেব করেছি, এক্ষেত্রে উপর নিচের ফাঁক হিসেব করব।) এই কারণে এদের সংবৃত স্বর‌ও বলে।

অর্ধসংবৃত স্বর:

সংবৃত স্বরের একটু নিচে উচ্চারিত হয় অর্ধসংবৃত স্বর। এদের ক্ষেত্রে মুখছিদ্র উপর-নিচে অল্প একটু বেশি করে খোলে। এদের অবস্থান‌টিকে বলে উচ্চ-মধ্য।

নিম্ন বা বিবৃত স্বর:

একেবারে নিচে উচ্চারিত হয়। জিহ্বা মুখগহ্বরের মেঝেতে অবস্থান করে। 

অর্ধবিবৃত স্বর:

নিম্ন স্বরের একটু উপরের অবস্থনকে বলে নিম্ন-মধ‍্য এবং ঐ অবস্থানের স্বরগুলির আর এক নাম অর্ধ-বিবৃত।

এখন আমরা দেখে নেবো বাংলা মৌলিক স্বরগুলি কে কোন শ্রেণিতে পড়ে:

বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্থান


 উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্থান।

প্রসারিত, কুঞ্চিত, সংবৃত ও বিবৃত স্বরের ধারণাটি স্পষ্ট ভাবে বোঝার জন্য নিচের ভিডিওটি দেখুন।







সম্মুখ, প্রসারিত, সংবৃত।

উ 

পশ্চাৎ, কুঞ্চিত, সংবৃত।

সম্মুখ, প্রসারিত, অর্ধসংবৃত।

পশ্চাৎ, কুঞ্চিত, অর্ধসংবৃত।

অ্যা

সম্মুখ, প্রসারিত, অর্ধবিবৃত।

পশ্চাৎ, কুঞ্চিত, অর্ধবিবৃত।

নিম্ন, কেন্দ্রীয়, বিবৃত। আ-কে কেন্দ্রীয় বলার কারণ, একে উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা মুখবিবরের মাঝামাঝি অবস্থান করে, সম্মুখ বা পশ্চাতে যায় না 

**বাংলা মৌলিক স্বরগুলির উচ্চারণ-স্থান দেখার জন‍্য "বাংলা মৌলিক স্বর" কথাটি লিখে গুগলে ইমেজ সার্চ করলেই বাংলা মৌলিক স্বরের ছকটি পাওয়া যাবে। 

আর‌ও পড়ুন
ব্যাকরণের নির্ভরযোগ্য ব‌ই

[সব পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করে সূচিপত্রে যান]

মন্তব্যসমূহ

আর‌ও পড়ে দেখুন

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

লোকনিরুক্তি কাকে বলে

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

অপিনিহিতি কাকে বলে

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

বিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে | অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে

অভিশ্রুতি কাকে বলে?

নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে