পোস্টগুলি

ভাষা ও উপভাষা লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মাতৃভাষা কাকে বলে? | What is mother tongue in Bengali

মাতৃভাষার সংজ্ঞা 'মাতৃভাষা' কথার আক্ষরিক অর্থ হল মায়ের ভাষা। কিন্তু ভাষাবিজ্ঞান অনুসারে মাতৃভাষার সংজ্ঞায় আক্ষরিক অর্থে 'মায়ের মুখের ভাষা'-কেই মাতৃভাষা বলে না। প্রতিটি মানুষ জন্মের পর তার ভাষা শেখে নিজের পরিবেশ থেকে। জন্মের পর থেকে একজন মানুষ তার পরিবেশ থেকে প্রথম যে ভাষাটি শেখে এবং যে ভাষায় সে সর্বাধিক স্বচ্ছন্দ বোধ করে, সেটিই ওই ব্যক্তির মাতৃভাষা। অনেক সময় এমন দেখা যায় যে একজন শিশু প্রথম শৈশবে একটি বিশেষ ভাষা শেখার পর বিদ্যালয় শিক্ষার শুরুতে অন্য ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে। এমন ক্ষেত্রে ঐ শিশু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে ভাষায় সবচেয়ে বেশি সময় কথা বলবে, সেই ভাষাটি হবে ঐ শিশুর মাতৃভাষা। মাতৃভাষা শিক্ষার গুরুত্ব মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান। শিশুর দৈহিক বিকাশে মাতৃদুগ্ধ যেমন তুলনাহীন, শিশুর মানসিক বিকাশে মাতৃভাষার ভূমিকাও তেমনি তুলনাহীন।  ১: মাতৃভাষা শিশুর কল্পনাশক্তি ও চিন্তাশক্তির বিকাশে সহায়তা করে। ২: মনের ভাব সবচেয়ে সহজে প্রকাশ করা যায় মাতৃভাষার মাধ্যমে। ৩: মাতৃভাষার মাধ্যমে দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজে বুঝতে পারা সম্ভব হয়। ৪: মাতৃভাষার মাধ্যমে নিজের সং

ভাষা কাকে বলে? | পশুদের ভাষা ভাষা নয় কেন?

মনুষ্যেতর প্রাণীর ভাষা ও মানুষের ভাষার পার্থক্য অন্যান্য প্রাণীও মানুষের মতো আওয়াজ করে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, এমন একটা কথা মাঝে মাঝেই শোনা যায়। তাহলে তাদের আওয়াজকে ধ্বনি বলা হবে না কেন, অথবা তাদের তাদের ভাব প্রকাশের ব্যবস্থাকে ভাষা বলা হবে না কেন? আজকের আলোচনায় ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দেবো।  ভাষা কাকে বলে? বিভিন্ন ভাষাবিদ্ ভাষার সংজ্ঞা বিভিন্ন ভাবে দিয়েছেন। তাঁদের সকলের মতামতের নির্যাসটুকু নিয়ে ভাষার যে সংজ্ঞাটি দাঁড় করানো যায়, সেটি হলো: মূলত বাগ্‌ধ্বনি দ্বারা গঠিত যে শৃঙ্খলিত ব্যবস্থার দ্বারা অন্তত একটি  জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের মধ্যে মনের ভাব বিনিময় করেন তাকে ভাষা বলে। তার মানে ভাষার সংজ্ঞায় আমরা এখানে তিনটে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি: ১: বাগ্‌ধ্বনির ব্যবহার, ২: শৃঙ্খলিত ব্যবস্থা, অর্থাৎ একটা ব্যাকরণের উপস্থিতি, ৩: ছোটোবড়ো অন্তত একটি জনগোষ্ঠীর ব্যবহারে লাগা। কোনো ভাষা একাধিক গোষ্ঠী ব্যবহার করে, আবার কোনো ভাষা মাত্র কয়েকশো লোকেই ব্যবহার করে। কিন্তু ভাষা হয়ে ওঠার জন্য এই শর্তগুলির বাইরেও আর‌ও কয়েকটি ভাষাবিজ্ঞানসম্মত শর্ত আছে। সেগুলি কী?

রেজিস্টার কাকে বলে | ভাষাবিজ্ঞানে রেজিস্টার

 ভাষাবিজ্ঞানে রেজিস্টার বলতে কী বোঝায়? আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, আমরা কথা বলার সময় একটা বিষয় সর্বদা খেয়াল রাখি, সেটা হলো কোথায় কথা বলছি এবং কার সাথে কথা বলছি। আমরা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডার মেজাজে থাকলে যে ভাষায় কথা বলি, অফিসে বসের সঙ্গে কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করার সময় সেই ভাষায় কথা বলি না। বাবা মায়ের সঙ্গে মানুষ যে ভাষায় কথা বলে, অতিথির সঙ্গে সেই ভাষায় কথা বলা যায় না। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে আমাদের ভাষা পরিবেশ অনুযায়ী বদলে যায়। এই পরিবেশকে এক কথায় বলা হয় উপলক্ষ্য। উপলক্ষ্য বদলে গেলে ভাষাও বদলে যায়। উপলক্ষ্য অনুসারে ভাষারীতির এই বৈচিত্র্যকে বলা হয় রেজিস্টার।  প্রতিটি মানুষ‌ই বহু সংখ্যক রেজিস্টার ব্যবহার করে থাকেন। পরিবেশ ও শ্রোতা বদলে গেলেই মানুষের কথা বলার ধরন বদলে যায়। আমরা নিজেরা নিজেদের উপর এই ব্যাপারে একটি পর্যবেক্ষণ চালালেই বুঝতে পারবো যে আমরা দিনের মধ্যে কত বার রেজিস্টার বদল করি।  রেজিস্টার ও উপভাষার মধ্যে পার্থক্য রেজিস্টার ও উপভাষার মধ্যে

ঝাড়খণ্ডি উপভাষা: বাকঁড়ি

বাঁকড়ি-ঝাড়খণ্ডি উপভাষার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সাহিত্যিক বিভাস রায়চৌধুরীর একটি গল্প বা উপন্যাসে পড়েছিলাম গল্পের একটি চরিত্র বাঁকুড়ার রাণীবাঁধ অঞ্চলের কথ্য উপভাষাটির মাধুর্যে নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করছে। বলা বাহুল্য এই মুগ্ধতা আসলে সাহিত্যিকের নিজের‌ই‌। ওখানে লেখক যে উপভাষাটির কথা বলেছেন সেটি আসলে বাঁকড়ি উপভাষা। বাঁকুড়ার পূর্ব ও উত্তর ভাগ বাদ দিয়ে সমগ্র জেলা এমনকি জেলা সদরেও এই উপভাষাটিই চলে। বাঁকুড়ার এই অঞ্চলের মানুষ আজ‌ও মাতৃভাষা বিসর্জন দিয়ে মান্য বাংলাকে কথোপকথনের কাজে ব্যবহার করা শুরু করেনি।    Advertisement আমরা জানি, বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জুড়ে প্রচলিত কোনো ভাষার আঞ্চলিক রূপভেদগুলিকে বলে উপভাষা। উপভাষা কোনো আলাদা ভাষা নয়, দুটি উপভাষার মধ্যে উচ্চারণগত ও গঠনগত পার্থক্য থাকলেও তা এতটা বেশি নয় যে তাদের আলাদা ভাষা রূপে গণ্য করতে হবে। এখন মজার ব্যাপার হল একটি উপভাষাও যদি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচলিত থাকে তাহলে এলাকাভেদে একটি তার মধ্যেও অনেক পার্থক্য দেখা যায়। যেমন, বর্ধমান ও হাওড়া, উভয় জেলার উপভাষা রাঢ়ি হলেও দুই জেলার মৌখিক ভাষায় অল্পবিস্তর ফারাক দ

সাধু ও চলিত ভাষার ৭টি বৈশিষ্ট্য ও রূপান্তর | Sadhu o cholit bhasha

 সাধু ও চলিত বাংলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় বাংলা লিখিত গদ্য-সাহিত্যের জন্ম হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে। সে সময়ের বাংলা গদ্য ছিল দুর্বল ও অগঠিত। তারপর পরবর্তীকালে রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরে বাংলা গদ্যের একটি সুগঠিত কাঠামো তৈরি হয়। অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই যে বাংলা গদ্য সৃষ্টি হল এর গঠন বাঙালির মৌখিক ভাষা অনুসরণে হয়নি। এই ভাষার গঠন ছিল মূলত ব্যাকরণ নির্ভর। এর ব্যবহার ছিল কেবল মাত্র সাহিত্যের ক্ষেত্রে। শিক্ষিত সাধুজনের ব্যবহার্য ভাষা হওয়ার কারণে এই গদ্যভাষাকে সাধু ভাষা নাম দেওয়া হয়। অপরদিকে সাধারণ মানুষের মুখে যে ভাষা ব্যবহৃত হতো তাকে বলা হয় চলিত ভাষা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্যারীচাঁদ মিত্র ও কালীপ্রসন্ন সিংহের রচনায় তৎকালীন বাঙালির মুখের ভাষার কিছু কিছু নিদর্শন উঠে আসে। কিন্তু সাহিত্য রচনায় চলিত ভাষার প্রচলন তখনও শুরু হয়নি। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মূলত সবুজপত্র পত্রিকার হাত ধরে বাংলা গদ্যে চলিত ভাষার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু এরপরেও বেশ কিছুদিন সাধু গদ্যের ব্যবহার অনেক লেখক ধরে রাখেন। বিংশ শতাব্দীর শেষ তিন-চারটি দশকে গদ্য সাহিত্যে সাধু ভ