বাংলা শব্দ | বাংলা শব্দ ভাণ্ডার

উৎস অনুযায়ী বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ

বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ একটি ভাষা। একটি ভাষাকে আমরা তখন‌ই সমৃদ্ধ ভাষা বলবো, যখন সেই ভাষার শব্দভান্ডার হবে সমৃদ্ধ। পৃথিবীর যে কোনও সমৃদ্ধ ভাষার মতোই বাংলা ভাষার‌ও রয়েছে এক বিশাল শব্দভাণ্ডার। বাংলা ভাষার এই শব্দ-সম্পদ পুরোপুরি নিজস্ব নয়। নিজস্ব শব্দের পাশাপাশি বাংলা ভাষা তার চাহিদা পূরণ করার জন্য সংস্কৃত সহ আর‌‌ও নানান ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করেছে। এই আলোচনায় আমরা বাংলা শব্দের উৎসগত শ্রেণিবিন্যাস করার পাশাপাশি প্রত্যেক প্রকার শব্দের বেশ কিছু উদাহরণ তালিকার আকারে তুলে ধরবো। তার আগে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক বাংলা ভাষার জন্ম ও বিবর্তনের ইতিহাস। তাহলে বাংলা শব্দভাণ্ডারের বৈচিত্র্যময় উৎসটিকে বুঝে নিতে সুবিধা হবে।

বাংলা ভাষার জন্ম ও বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

আনুমানিক দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে (৯০০খ্রি: -১১৯৯ খ্রি: সময়কাল) বাংলা ভাষার জন্ম হয়। একটা সময় ছিলো, যখন বঙ্গদেশে শুধুমাত্র প্রাচীন অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস ছিলো। আর্য জনজাতির মানুষ পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলে এসে বসবাস করতে শুরু করে। সেই সময় আর্যরা কথা বলতো প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃত ভাষা প্রাচীন আর্য ভাষার‌ই (যাকে সংস্কৃত বলা চলে) রূপান্তরিত চেহারা। এই প্রাকৃত ভাষা আবার বিবর্তিত হয়ে পরিণত হয় অপভ্রংশ ভাষায়। বঙ্গদেশে প্রচলিত অপভ্রংশ ভাষার নাম পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ। এই পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ ও এই অঞ্চলে আগে থেকে বসবাসকারী অনার্য গোষ্ঠীর মানুষের ভাষার মিশ্রণে তৈরি হল বাংলা ভাষা। নিচের ছক দুটি থেকে আমরা বাংলা ভাষার জন্মকথা মোটামুটি বুঝতে পারবো।


প্রাচীন ভারতীয় আর্য (সংস্কৃত) > মাগধী প্রাকৃত > মাগধী অপভ্রংশ।


মাগধী অপভ্রংশ + বঙ্গদেশে প্রচলিত অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা = বাংলা ভাষা।


এইভাবে বাংলা ভাষার জন্ম হ‌ওয়ার ফলে বাংলা ভাষায় প্রথমেই স্থান পেল ১. সংস্কৃত শব্দ(তৎসম) ২. প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত সংস্কৃত শব্দ(তদ্ভব), ৩. কিছু বিকৃত সংস্কৃত শব্দ(অর্ধতৎসম) এবং ৪. অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষার শব্দ(দেশি)। এই চার প্রকার শব্দ‌ই বাংলা শব্দভাণ্ডারের আদি সম্পদ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিদেশি জাতির সঙ্গে নানা কারণে বাঙালির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন ঐ সব জাতির ভাষা থেকে বহু শব্দ বাংলা শব্দভাণ্ডারে ঢুকতে থাকে। বঙ্গে মুসলমান শাসনের আমলে ফারসি ও আরবি ভাষার বহু শব্দ বাংলা ভাষায় ঢোকে। ব্রিটিশ শাসনকালে ইংরেজি শব্দ ঢোকে। ইংরেজি শব্দ এখনও বাংলা শব্দভাণ্ডারে ঢুকছে, আগামী দিনেও ঢুকবে।

বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ

বাংলা শব্দকে তিনটি মাপকাঠিতে ভাগ করা যায়: গঠন অনুসারে, অর্থ অনুসারে ও উৎস অনুসারে। গঠন ও অর্থ অনুসারে ভাগগুলি জানার জন্য শব্দ ও পদ অধ্যায়টি পড়ুন। এখানে আমরা আলোচনা করবো উৎস অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ।

তৎসম শব্দ

সংস্কৃত থেকে সরাসরি বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে প্রবেশ করেছে যে শব্দগুলি, তাদের বলে তৎসম শব্দ। বিস্তারিত পড়ুন: তৎসম শব্দ

তদ্ভব শব্দ

সংস্কৃত বা প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা থেকে বিবর্তিত হয়ে যে শব্দগুলি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে, তাদের বলে তদ্ভব শব্দ। বিস্তারিত পড়ুন: তদ্ভব শব্দ।

অর্ধতৎসম শব্দ

যে শব্দগুলি সংস্কৃত থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় এলেও উচ্চারণ বিকৃত হয়েছে, তাদের বলে অর্ধতৎসম শব্দ। বিস্তারিত পড়ুন: অর্ধতৎসম শব্দ।

দেশি শব্দ

যে শব্দগুলি প্রাক্-আর্য অস্ট্রিক, দ্রাবিড় প্রভৃতি গোষ্ঠীর ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলিকে বলে দেশি শব্দ। বিস্তারিত পড়ুন: দেশি শব্দ।

বিদেশি শব্দ

বিভিন্ন বিদেশি ভাষা থেকে যে সব শব্দ বিভিন্ন যুগে বাংলা শব্দভাণ্ডারে প্রবেশ করেছে, তাদের বলে বিদেশি শব্দ। 

তুর্কি শব্দ 
পোর্তুগিজ শব্দ
ইংরেজি শব্দ
চিনা শব্দ

সংকর বা মিশ্র শব্দ

দুটি ভিন্ন উৎস থেকে আগত দুটি শব্দ, অথবা একটি শব্দ ও একটি শব্দাংশের মিলনে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে বলে সংকর বা মিশ্র শব্দ। বিস্তারিত পড়ুন: মিশ্র শব্দ।

মন্তব্যসমূহ

আর‌ও পড়ে দেখুন

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

লোকনিরুক্তি কাকে বলে

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

অপিনিহিতি কাকে বলে

শব্দ ও পদের পার্থক্য | শব্দ ও পদ

অভিশ্রুতি কাকে বলে?

বিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে | অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে