ধাত্ববয়ব প্রত্যয়
ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের ধারণা
এই আলোচনায় যা আছে:
- ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের ধারণা
- ধাত্ববয়বের নাম ধাত্ববয়ব কেন
- কৃৎ ও তদ্ধিতের সাথে ধাত্ববয়বের পার্থক্য
- সংস্কৃত ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ও তার ব্যবহার
- বাংলা ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ও তার ব্যবহার
প্রত্যয় মূলত তিন প্রকার: কৃৎ প্রত্যয়, তদ্ধিত প্রত্যয় ও ধাত্ববয়ব প্রত্যয়। আমরা জানি:
কৃৎ প্রত্যয় ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে।
তদ্ধিত প্রত্যয় শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে।
এ ছাড়া রয়েছে ক্রিয়াপদ গঠনে ব্যবহৃত প্রকারবাচক প্রত্যয় ও অসমাপিকা ক্রিয়া-প্রত্যয়। ইতিপূর্বে আমরা কৃৎ প্রত্যয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। বর্তমান আলোচনায় ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের আলোচনা করবো।
ধাত্ববয়ব প্রত্যয় কাকে বলে?
যে প্রত্যয়গুলি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু গঠন করে, তাদের ধাত্ববয়ব প্রত্যয় বলে।
ধাত্ববয়ব প্রত্যয় যোগে গঠিত নতুন ধাতুগুলি অবশ্যই সাধিত ধাতু হবে। মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু কোনো প্রত্যয় যোগেই তৈরি হয় না।
ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের নাম ধাত্ববয়ব কেন?
'ধাত্ববয়ব' শব্দটিকে ভাঙলে পাই - ধাতু+অবয়ব। অবয়ব কথার অর্থ হল দেহ। এই প্রত্যয়টি সাধিত ধাতুর দেহ বা অবয়ব গঠন করে বলেই এর এরূপ নাম দেওয়া হয়েছে।
ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়ের পার্থক্য
সংজ্ঞা থেকেই আমরা বুঝতে পারছি কৃৎ ও তদ্ধিত প্রত্যয়ের সঙ্গে ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের পার্থক্যটি বোঝা যাচ্ছে। কৃৎ ও তদ্ধিত প্রত্যয় সব সময় শব্দ গঠন করে। অপরদিকে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় সবসময় ধাতু গঠন করে। কৃৎ প্রত্যয় শুধুমাত্র ধাতুর সাথে যুক্ত হতে পারে ও তদ্ধিত প্রত্যয় শুধুমাত্র শব্দের সাথে যুক্ত হতে পারে। অপরদিকে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ধাতু ও শব্দ, উভয়ের সাথেই যুক্ত হতে পারে।
ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের উদাহরণ
ধাত্ববয়ব প্রত্যয় সংস্কৃত ও বাংলা, উভয় ভাষাতেই দেখা যায়। নিচে দুই ভাষার ধাত্ববয়ব প্রত্যয়গুলির আলাদা ভাবে উদাহরণ দেওয়া হলো।
সংস্কৃত ধাত্ববয়ব প্রত্যয়
ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের উদাহরণ প্রচুর নেই। সংস্কৃত ভাষার দুটি ধাত্ববয়ব প্রত্যয় আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। একটি হল ণিচ্ প্রত্যয়, অপরটি সন্ প্রত্যয়। ণিচ্ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাদের বলে ণিজন্ত ধাতু এবং সন্ প্রত্যয় যোগে গঠিত ধাতুগুলিকে বলে সনন্ত ধাতু।
ণিচ্ প্রত্যয়: কোনো ধাতুর সঙ্গে ণিচ্ প্রত্যয় যুক্ত হলে ঐ ধাতুটি প্রযোজক ধাতু হয়ে যায়।
যেমন: √শিক্ষ্+ণিচ্ = √শিক্ষি। √শিক্ষ্ ধাতুর অর্থ হলো শেখা। এর সাথে ণিচ্ ধাত্ববয়ব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে √শিক্ষি ধাতু পাওয়া গেল। এই নতুন ধাতুটির অর্থ হলো 'অন্যকে শেখানো'। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ণিচ্ ধাত্ববয়ব যোগে আমরা একটি প্রযোজক ধাতু পেলাম। এই ওরকারণেই প্রযোজক ধাতুর অপর নাম ণিজন্ত ধাতু। সংস্কৃতে 'ণিজন্ত ধাতু' নামটিই প্রযোজক ধাতু অর্থে ব্যবহৃত হয়।
সন্ প্রত্যয়: এই প্রত্যয়টি ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে যে নতুন ধাতু গঠন করে, তার দ্বারা ঐ মূল ধাতুর কাজটি করার ইচ্ছা করা বোঝায়। যেমন: √জ্ঞা ধাতুর অর্থ জানা। √জ্ঞা ধাতুর সাথে সন্ প্রত্যয় যুক্ত হলে √জিজ্ঞাস্ ধাতু পাওয়া যায়। এই নতুন ধাতুটির অর্থ হল 'জানার ইচ্ছা করা'। একই ভাবে √পা+সন্ = √পিপাস্ (পানের ইচ্ছা করা)।
উপরের দুটি প্রত্যয় সাধারণত ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু গঠন করে। এছাড়া যঙ্ প্রত্যয়টিও এই শ্রেণিতে পড়ে।
ক্যচ্, কাম্যচ্, ক্বিপ্, ণিচ্, খচ্, ক্যঙ্, ক্যষ্, ণিঙ্ প্রভৃতি প্রত্যয়গুলি শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে নামধাতু গঠন করে, তাই এরাও উপযুক্ত প্রয়োগ-ক্ষেত্রে ধাত্ববয়ব।
বাংলা ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের উদাহরণ
সংস্কৃতের মতো বাংলাতেও ধাত্ববয়ব প্রত্যয় দেখা যায়। বাংলায় প্রধান ধাত্ববয়ব প্রত্যয় একটিই, সেটি হল 'আ' প্রত্যয়। আ-প্রত্যয়ের বহু ধরনের প্রয়োগ আছে। তার মধ্যে ধাত্ববয়ব রূপে এর ব্যবহারটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আর একটি ধাত্ববয়ব প্রত্যয় বাংলাতে দেখা যায়, সেটি হল 'ড়া' প্রত্যয়। এর ব্যবহার সীমিত।
ধাত্ববয়ব রূপে 'আ' প্রত্যয়ের ব্যবহার
সাধারণ ধাতুকে প্রযোজক ধাতুতে রূপান্তরিত করতে পারে ধাত্ববয়ব 'আ' প্রত্যয়। যেমন: √দেখ্+আ =√দেখা, √কর্+আ = করা, √বল্+আ = √বলা। এখানে √দেখা, √করা, √বলা ধাতুগুলির অর্থ যথাক্রমে দেখানো, করানো, বলানো। অর্থাৎ এগুলি প্রযোজক ধাতু। এছাড়া নামধাতু ও ধ্বন্যাত্মক ধাতু গঠনেও আ প্রত্যয় কাজ করে। যেমন: হাত+আ =√হাতা(নামধাতু), ঝনঝন+আ =√ঝনঝনা(ধ্বন্যাত্মক ধাতু) । প্রযোজক ধাতু, নামধাতু ও ধ্বন্যাত্মক ধাতুর বিষয়টি ভালো করে বোঝার জন্য ধাতু অধ্যায়টি পড়ে নিন।
প্রসঙ্গত ধাত্ববয়ব 'ড়া' প্রত্যয়ের প্রয়োগেরও কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরি।
১: হাত+ড়া =√হাতড়া
২: পাছ+ড়া =√পাছড়া
৩: কাছ+ড়া =√কাছড়া
৪: খিঁচ+ড়া = √খিঁচড়া
৫: হাঁক+ড়া = √হাঁকড়া
এই সবগুলিই ড়া প্রত্যয় যোগে নামধাতু গঠনের উদাহরণ।
আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ