প্রবন্ধ রচনার নিয়ম | Prabandha rachana

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রবন্ধ রচনা


বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ‌ওয়ার জন্য বাংলায় প্রবন্ধ রচনা করতে হয়‌। বিশেষত WBCS Mains পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা বিষয়ে উত্তীর্ণ হ‌ওয়ার জন্য উন্নত মানের প্রবন্ধ লেখার কৌশলগুলি জেনে নেওয়া একান্ত জরুরি। একটি সুলিখিত প্রবন্ধ আপনার বাংলা বিষয়ে যেমন উঁচু স্কোর আনতে পারে, তেমনি আপনার আত্মপ্রকাশকে বলিষ্ঠ করে তুলবে। ফলে দেশকালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে লিখিত বা মৌখিক মতামত প্রকাশের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। এক কথায় বলা যায়, একটি প্রবন্ধ পড়ে সেই প্রবন্ধের লেখকের ব্যক্তিত্বকে অনেকখানি চেনা যায়। তাই আসুন দেখে নিই একটি ভালো প্রবন্ধ লেখার জন্য কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আর কেমন ভাবে গড়ে তুলবেন প্রবন্ধের দেহ।


১: রচনার ভূমিকা লেখার নিয়ম


প্রবন্ধ রচনার জন্য একটি প্রাসঙ্গিক ভূমিকা দিতে হয়। ভূমিকা লেখার সময় মাথায় রাখতে হবে তাড়াহুড়ো করে মূল বিষয়ে প্রবেশ করা চলবে না। তাতে ভূমিকা আকর্ষণীয় হয় না। অর্থাৎ, প্রথমেই টপিকে যাবেন না। বরং টপিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, এমন একটি আকর্ষণীয় বিষয়ের কথা দিয়ে শুরু করুন। ভূমিকা শুরু করতে পারেন গল্পের মেজাজেও। এই অংশে এমন কিছু ইঙ্গিত দিতে হবে যাতে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি(approach) স্পষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ ভূমিকাতেই আপনি ঠিক করে দিন আপনি বিষয়টিকে কোন দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন। যেমন, আপনার বিষয় যদি হয় ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাহলে আপনি ভূমিকাতেই স্পষ্ট করে দিন, আপনি বর্তমান রাজনীতির দুর্বলতার কথা বলবেন, নাকি এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করতে চান, নাকি একটি মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি নিতে চাইছেন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার পরেই মূল বিষয়ের অবতারণা করুন। এ ছাড়া মাথায় রাখবেন, ভূমিকায় কোনো কোটেশন ব্যবহার করতে চাইলে খুব সতর্কতার সঙ্গে তা করতে হবে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও কোটেশনের বক্তব্য যেন পরস্পরবিরোধী না হয়ে যায়। ভূমিকার কথাগুলি যতটা সম্ভব নিজের উপলব্ধি থেকেই লেখার চেষ্টা করা ভালো।


২: প্রবন্ধের ভাষা


প্রবন্ধ কথাটির অর্থ‌ই হলো প্রকৃষ্ট বন্ধন। তাই প্রবন্ধের ভাষা হবে সুগঠিত। ভাষাকে অকারণ অলঙ্কারে ভারাক্রান্ত করার কোনো মানে হয় না। ভাষা যথাসম্ভব সহজ সরল ও সাবলীল রাখুন। বড়ো বড়ো সরল বাক্যের পরিবর্তে জটিল ও যৌগিক বাক্যের বেশি ব্যবহার করুন, তাতে ভাষা সহজবোধ্য হবে এবং গতিশীল হবে। মনে রাখবেন, সরল বাক্য‌ই আসলে দুর্বোধ্য হয়। এই প্রসঙ্গে সরল, জটিল ও যৌগিক বাক্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন।


৩: যৌক্তিকতা


প্রবন্ধের প্রাণ হলো যুক্তি। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতকে যুক্তির দ্বারা উপস্থাপিত করতে হবে। পর পর যুক্তি সাজিয়ে প্রবন্ধকে সিদ্ধান্তের স্তরে নিয়ে যেতে হবে। যুক্তি সাজানোর জন্য তথ্যের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। তথ্য আপনার যুক্তির প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। প্রবন্ধকে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত করবেন তা আপনি যেহেতু আগেই স্থির করে নিয়েছেন, তাই প্রয়োজন মতো এমন যুক্তির ব্যবহার করুন যা রচনাকে আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।


৪: তথ্যনির্ভরতা


তথ্য ছাড়া প্রবন্ধ কখনোই ভালো হতে পারে না। তাই আপনার সাধারণ জ্ঞান বাড়াতে হবে। সিভিল সার্ভিস বা পি.এস.সি.-র অন্যান্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট সাধারণ জ্ঞান প্রয়োজন হয়। আপনার সেই সাধারণ জ্ঞানকে প্রবন্ধে ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সম্ভাব্য টপিকের উপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুখস্থ রাখাও দরকার। আপনার কাছে যে ধরনের তথ্য আছে, চেষ্টা করুন প্রবন্ধকে এমন দিকে নিয়ে যেতে, যাতে ঐ তথ্যগুলি ব্যবহার করা যায়। মনে রাখবেন, প্রবন্ধ রচনায় আপনার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। আপনি আপনার ইচ্ছে মতো দিকে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। মূল্যায়নের সময় দেখা হবে আপনার ভাষা, তথ্য, যুক্তি ও উপস্থাপনার ভঙ্গি। 




৫: সৃজনশীলতা


রচনা হোক বা সারাংশ বা ই-টু-বি, আপনার গদ্যের হাতটিই শেষ পর্যন্ত বিচার্য বিষয় হয়ে উঠবে। লেখার ব্যাপারে সৃষ্টিশীল হোন। নিজের বুদ্ধি দিয়ে ঘটনার বিচার বিশ্লেষণ করুন এবং সেই বিশ্লেষণকেই রচনায় তুলে ধরুন। মনে রাখবেন, প্রবন্ধ কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়, প্রবন্ধ সাহিত্যের‌ই একটি সমৃদ্ধ শাখা। তাই আপনার প্রবন্ধটি আসলে একটি সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়ে উঠুক। সাহিত্যগুণসম্পন্ন প্রবন্ধ লেখার জন্য আপনাকে অন্তত কয়েকটি অতি উচ্চ মানের বাংলা প্রবন্ধ পড়তে হবে। এই বিষয়ে আমি আধুনিক বাঙালি সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্নদাশঙ্কর রায়কে প্রথম সারিতে রাখি। একজন প্রাবন্ধিকের ভাষা কেমন হতে পারে, সৃজনশীলতা ও মৌলিকতা কতখানি থাকতে পারে তা জানার জন্য অন্নদাশঙ্কর রায়ের প্রবন্ধগ্রন্থগুলির মধ্যে একটি পড়ে দেখতে পারেন। অন্নদাশঙ্করের 'পথে প্রবাসে ও নির্বাচিত প্রবন্ধ' ব‌ইটি থেকে কয়েকটি লেখা পড়লেই প্রবন্ধের বাঁধন কতটা ভালো হতে পারে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। ব‌ইটি অ্যামাজনে পাওয়া যায়।





৬: উপসংহার লেখার নিয়ম


উপসংহার ভূমিকার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। উপসংহার অংশে আপনি রচনাকে শেষ করবেন। উপসংহার পড়ার পর যেন মনে হয়, এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য পূর্ণতা পেলো। অর্থাৎ সিদ্ধান্তহীন উপসংহার লিখবেন না। উপসংহারেও কোটেশন ব্যবহার করার ব্যাপারে এক‌ই সতর্কতা অবলম্বন করুন। ভুল বা অনুপযুক্ত কোটেশন দেওয়ার চেয়ে কোটেশন না দেওয়া ভালো। উপসংহারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবেন না। চেষ্টা করবেন একটি আশাবাদী মনোভাব (optimistic approach) নিয়ে যেন রচনা শেষ করা যায়। 

আমাকে YouTube-এ ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

আর‌ও পড়ুন

সমস্ত লেখা পড়ার জন্য সূচিপত্রে যান






মন্তব্যসমূহ

আর‌ও পড়ে দেখুন

বিবৃতিমূলক বাক্য কত প্রকার | নির্দেশক বাক্য কত প্রকার

অপিনিহিতি কাকে বলে

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

অভিশ্রুতি কাকে বলে?

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

সাধু ও চলিত ভাষার ৭টি বৈশিষ্ট্য ও রূপান্তর | Sadhu o cholit bhasha

বর্ণ বিশ্লেষণ করার নিয়ম | Barna bislesan Bengali

উপসর্গ ও প্রত্যয়ের পার্থক্য