ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম | ভাব সম্প্রসারণ করার ৭ নিয়ম

 ভাব সম্প্রসারণ কাকে বলে?

ভাব সম্প্রসারণ বলতে বোঝায় কোনো তাৎপর্যপূর্ণ কথাকে বিস্তারিত ভাবে বিশ্লেষণ করা। এই তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি হতে পারে কোনো কবিতার লাইন, কোনো প্রবাদ বা মনীষীদের উদ্ধৃতি। আসুন জেনে নিই ভাব সম্প্রসারণ করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, যেগুলি মনে রাখলে ভাব সম্প্রসারণ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

ভাব সম্প্রসারণ করার নিয়ম (উদাহরণ সহ)

১: প্রথমে ভাব সম্প্রসারণের উদ্ধৃতিটি ভালো করে পড়তে হবে। পড়ার উদ্দেশ্য হলো উদ্ধৃতির মূল ভাবটি বুঝে নেওয়া।

২: মূল ভাবটি বোঝার জন্য উদ্ধৃতিটির সঙ্গে মানবজীবন ও মানবসমাজের সম্পর্ক খুঁজে বের করতে হবে। এই বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝাতে চেষ্টা করছি। যেমন:
"কে ল‌ইবে মোর কার্য?" কহে সন্ধ্যা রবি 
শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি
মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল "স্বামী, 
আমার যেটুকু সাধ্য, করিব তা আমি।"

এখানে আপাত দৃষ্টিতে সূর্য ও মাটির প্রদীপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভাব সম্প্রসারণের বিষয় সব সময় মানব জীবন বা মানব সমাজের সাথে যুক্ত হয়। তাহলে এখানে সূর্য আসলে কে? একটু ভাবলেই বোঝা যাবে। এখানে অস্তাচলগামী সূর্যকে মানব সমাজের মহান কর্মবীর মহাপুরুষ বলে বুঝতে হবে। মহাপুরুষরা যখন পরলোক গমন করেন, তখন সমগ্র সমাজে অন্ধকার নেমে আসে। সেই অন্ধকার দূর করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের থাকে না। তবু মাটির প্রদীপের মতো এমন কিছু মানুষ এই সমাজে থাকেন, যাঁরা নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলেন সমাজের অন্ধকার দূর করতে। 

৩: ভাব সম্প্রসারণ করার সময় প্রথমে উদ্ধৃত অংশের সরল অর্থটি অল্প কথায় লিখতে হয়। তার পর অন্তর্নিহিত ভাবটি আলাদা প্যারাগ্রাফে বিস্তারিত আলোচনা করতে হয়। 

৪: ভাব সম্প্রসারণের মধ্যে আলোচ্য ভাবের সপক্ষে কোনো উদাহরণ দিতে নেই বা কোনো কোটেশন ব্যবহার করতে নেই। তাতে ভাবটির মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ন হতে পারে। যেমন: "যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ/কেহ কভু তাহাদের করেনি সম্মান।" -- এই ভাব সম্প্রসারণে দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের নাম উল্লেখ করে উদাহরণ দেওয়া উচিত নয়। তার পরিবর্তে সমস্ত স্বাধীনতা-সংগ্রামী তথা যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে সভ্যতা ও সমাজ এগিয়ে চলেছে, তাঁদের সবার কথা বলা উচিত। ‌

৫: কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ, কোনো ঘটনার উল্লেখ করা চলবে না। তবে কোনো কোনো ভাব সম্প্রসারণ বিশেষ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে নাম উল্লেখে সমস্যা নেই। যেমন: "বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে,/ করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে, /দীন যে, দীনের বন্ধু।" এই ভাব সম্প্রসারণে কবির নাম ও বিদ্যাসাগরের নাম উল্লেখ করতে হবে। তবে এই ধরনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাবসম্প্রসারণ পরীক্ষায় সাধারণত আসে না।

৬: কবির নাম জানা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাব সম্প্রসারণ করার সময় কবির নাম লেখার দরকার নেই। এমনকি "উদ্ধৃত অংশে কবি বলতে চেয়েছেন" -- এই ধরনের শব্দবন্ধ‌ও ব্যবহার করা চলবে না। 

৭: ভাবসম্প্রসারণ করার সময় ব্যক্তিগত মতামত দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ না ঘটাই ভালো। যথাসম্ভব নিরপেক্ষ থেকে ভাব সম্প্রসারণ করতে হবে। 

মন্তব্যসমূহ

আর‌ও পড়ে দেখুন

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

পদ পরিবর্তন | ২৫০+ নির্ভুল পদান্তর

সাধু ও চলিত ভাষার ৭টি বৈশিষ্ট্য ও রূপান্তর | Sadhu o cholit bhasha

১০০+ সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ | সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের তালিকা | Samochcharito Vinnarthok shabdo

বর্ণ বিশ্লেষণ করার নিয়ম | Barna bislesan Bengali

সূচিপত্র | Bengali Grammar

বিশেষণ পদ - সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ: বিস্তারিত | বিশেষণ কাকে বলে

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য