অব‍্যয় পদ কাকে বলে ও শ্রেণিবিভাগ | অব্যয় পদ

এই পোস্টে যা আছে
  • অব্যয় পদের সংজ্ঞা ও ধারণা
  • অনন্বয়ী অব্যয় ও তার শ্রেণিবিভাগ
  • পদান্বয়ী অব্যয় ও তার শ্রেণিবিভাগ
  • সমুচ্চয়ী অব্যয় ও তার শ্রেণিবিভাগ
  • ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
  • ধ্বন্যাত্মক অব্যয় ও অনুকার শব্দের পার্থক্য

অব‍্যয়ের সংজ্ঞা ও ধারণা


সংস্কৃতে অব‍্যয় বলতে বোঝায়, যে পদের ব‍্যয় বা পরিবর্তন নেই। অর্থাৎ, ক্রিয়ার কাল, কর্তার পুরুষ, লিঙ্গ, বচন পাল্টে গেলেও যে পদের রূপ বদলাবে না, কোনো বিভক্তি‌ও গ্রহণ করবে না, তাকে অব‍্যয় বলে। কিন্তু বাাংলা ব‍্যাকরণে অব‍্যয়ের এই সংজ্ঞাটি গ্রহণ করার অসুবিধা আছে। কারণ বা‌ংলায় অব‍্যয় রূপে যে পদগুলি গণ‍্য হয় তারা অনেকেই বিভক্তি-যোগে তৈরি হয়, আবার এমন অনেক পদ আছে, যাদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তবু তারা অব্যয় নয়। তবু ছোটদের এই সংজ্ঞাটিই শেখানো উচিত। 

অব্যয় পদ কাকে বলে

অব‍্যয়ের সংজ্ঞায় ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বাক‍্যগত উক্তিকে এবং বাক‍্যস্থ পদগুলির পারস্পরিক সম্বন্ধকে স্থান, কাল, পাত্র ও প্রকার বিষয়ে পরিস্ফুট করে দেয় যে পদগুলি, তাদের অব‍্যয় বলে। 

অব‍্যয়ের এই সংজ্ঞাটি থেকে আমরা বলতে পারি, অব‍্যয়ের কাজ হল বাক‍্যে উপস্থিত পদ, বাক‍্যাংশ (Phrase) ও উপবাক‍্যগুলির (Clause) মধ‍্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করা এবং বাক‍্যের মধ‍্যে প্রকাশিত বিশেষ মনোভাব, অন্তর্ভাব, আবেগ, ব‍্যঞ্জনা, ইত‍্যাদি‌কে পরিস্ফুট করা।



অব‍্যয়ের শ্রেণিবিভাগ

অব্যয়ের শ্রেণিবিভাগ



আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় অব‍্যয়কে দু'ভাগে ভাগ করেছেন : সম্বন্ধ-বাচক ও মনোভাব-বাচক। তাঁর এই শ্রেণিবিভাগ আমাদের মতে সর্বাংশে গ্রহণযোগ্য। 
কিন্তু বর্তমানে বাংলায় অব‍্যয়ের শ্রেণিবিভাগ করা হয় সাধারণত ৪ ভাগে। 
১) অনন্বয়ী ২) পদান্বয়ী ৩) সমুচ্চয়ী ও ৪) ধ্বন‍্যাত্মক


১: অনন্বয়ী অব্যয়




যে অব‍্যয়গুলি বাক‍্যের মধ‍্যে কোনো প্রকার সম্বন্ধ স্থাপনে ভূমিকা গ্রহণ করে না, তাদের অনন্বয়ী অব‍্যয় বলে। অর্থাৎ এই অব‍্যয়গুলি বাক‍্যে উপস্থিত থেকে সম্পর্ক-স্থাপন ছাড়া অন‍্যান‍্য কাজগুলি করে থাকে। যেমন : সম্বোধন, আবেগ-প্রকাশ, মনোভাব-প্রকাশ, অলংকরণ ইত্যাদি।

অনন্বয়ী অব‍্যয়ের প্রধান শ্রেণিগুলি নিচে আলোচিত হল।

আলংকারিক অব‍্যয় বা বাক্যালংকার অব্যয়

যে অব‍্যয়গুলি স্পষ্ট কোনো অর্থ বহন করে না কিন্তু বাক‍্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং অতি সূক্ষ্ম ভাবে বাক‍্যের ব‍্যঞ্জনাকে সামান‍্য পরিবর্তিত করে, তাদের আলংকারিক অব‍্যয় বা বাক‍্যালংকার অব‍্যয় বলে। এই অব‍্যয়ের অপর নাম নিরর্থক অব‍্যয়। এদের আলাদা করে কোনো অর্থ থাকে না, বাক্য থেকে এই অব্যয়কে বাদ দিয়ে দিলেও বাক্যের মূল ভাবটির বিশেষ কোনো পরিবর্তন বা ক্ষতি হয় না।

আলংকারিক অব্যয় বা বাক্যালংকার অব্যয়ের উদাহরণ

"একবার নাচো তো দেখি।" (তো) 
তুমি কিন্তু কাজটা ভালো করলে না। 'কিন্তু' সাধারণ ভাবে  সমুচ্চয়ী অব‍্যয়ের মধ‍্যে পড়ে, কিন্তু উপরোক্ত উদাহরণে এটি আলংকারিক অব‍্যয়। কারণ এখানে 'কিন্তু' বাদ দিলেও বাক‍্যের মূল অর্থটি প্রকাশিত হয়। তবে সেক্ষেত্রে বক্তার মনের অভিমান বা অনুযোগের সুরটি আর ধরা পড়ে না। বাক‍্যটি আবেগশূন‍্য বিবৃতি হয়ে ওঠে। 'কিন্তু' অব্যয়টি বক্তার অভিমানের সূক্ষ্ম ভাব প্রকাশ করছে। আলঙ্কারিক অব্যয় এইভাবে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

আলংকারিক অব্যয়ের আরও উদাহরণ
একটু জল দাও না
আমি আজ যাবো না কো


সম্বোধন-সূচক অব‍্যয়

যে অব‍্যয়গুলি কাউকে সম্বোধন করার কাজে ব‍্যবহৃত হয়, তাদের সম্বোধন-সূচক অব‍্যয় বলে। সম্বোধন-সূচক অব‍্যয় আর সম্বোধন পদ কিন্তু এক জিনিস নয়। সম্বোধন পদ কারক অধ‍্যায়ে আলোচনা করেছি।

সম্বোধন-সূচক অব‍্যয়ের উদাহরণ : ওহে, ওগো, ওলো, রে, ওরে, হে ইত্যাদি। যদি বলা হয়: "ওহে ভাই, এদিকে এসো।" - তাহলে এই উদাহরণে 'ওহে' হল সম্বোধন সূচক অব্যয় এবং 'ভাই' হল সম্বোধন পদ।

আবেগসূচক অব‍্যয়

যে অব‍্যয়গুলি‌র দ্বারা বক্তা‌র মনের আবেগ বা মানসিক অবস্থা বোঝানো হয়, তাদের আবেগসূচক অব‍্যয় বলে। আবেগসূচক অব‍্যয়কে আবেগের নাম অনুসারে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। যেমন :
বিস্ময়সূচক : অ্যাঁ, সে কি 
ক্রোধ সূচক : তবে রে
ঘৃণাসূচক: ছিঃ
বিরক্তি‌সূচক: আঃ
যন্ত্রনা‌সূচক : উঃ
লজ্জা‌সূচক : মরি মরি
আনন্দ‌সূচক : হুররে
ভয়সূচক : মাগো
করুণাসূচক : আহা রে

এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, আবেগসূচক অব‍্যয়গুলির কয়েকটি এমন আছে যারা একাধিক আবেগ প্রকাশ করতে পারে‌। যেমন, 'আঃ' অব‍্যয়টি বিরক্তি‌ও প্রকাশ করে, যন্ত্রনা‌ও প্রকাশ করে, আরাম‌বোধ‌ও প্রকাশ করে।


সম্মতিজ্ঞাপক অব‍্যয়

এই অব‍্যয়গুলি বক্তার সম্মতি প্রকাশ করে। অর্থাৎ কেউ কোনো বিষয়ে রাজি হয়েছে বোঝায়।

যেমন : হ‍্যাঁ, হুঁ, ঠিক আছে, বেশ, আচ্ছা ইত্যাদি।

নিষেধাত্মক অব‍্যয়

যে অব‍্যয়গুলি বাক‍্যের ভাবকে নেতিবাচক ভাবে পরিণত করে, তাদের নিষেধাত্মক অব্যয় বলে।

যেমন : না, নে । "আমি যাবো না।" - এই বাক্যের 'না' একটি নিষেধাত্মক অব্যয়। এদের নেতিবাচক অব্যয়‌ও বলা চলে। কেউ কেউ এগুলিকে ক্রিয়াবিশেষণ বলতে চান।

অসম্মতিজ্ঞাপক অব‍্যয়

যে অব‍্যয়গুলি বক্তার অসম্মতি বোঝাতে ব‍্যবহৃত হয়, তাদের অসম্মতিজ্ঞাপক অব্যয় বলে।

যেমন : না, কক্ষণো না।

প্রশ্নবাচক অব‍্যয়

এই অব‍্যয়গুলি প্রশ্ন করার কাজে ব‍্যবহৃত হয়। যে অব্যয়ের দ্বারা বক্তার মনের জিজ্ঞাসা পরিস্ফুট হয়, তাদের প্রশ্নবাচক অব্যয় বলে। প্রশ্নবাচক অব্যয় অনেক সময় ঊহ্য রাখলেও চলে। অনেক সময় শুধুমাত্র গলার স্বরে প্রশ্নের সুর নিয়ে এসেই অব্যয়ের কাজটি করে দেওয়া হয়।

যেমন: কি ('কী' নয়। 'কী' সর্বনাম)

নিষেধাত্মক অব্যয় ও অসম্মতিসূচক অব্যয়ের পার্থক্য

নিষেধাত্মক অব্যয় ও অসম্মতিসূচক অব্যয়কে আলাদা করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে এদের পার্থক্য সহজেই বোঝা যায়। যেমন: "না, আমি যাবো না।" এই বাক্যে প্রথম 'না' বক্তার অসম্মতি প্রকাশ করছে এবং দ্বিতীয় 'না' ক্রিয়াটিকে নেতিবাচক করছে। এখন মজার কথা হলো, এই দ্বিতীয় 'না' না থাকলেও প্রথম 'না' অসম্মতিসূচক হবে। যেমন: "না, আমি যাবোই।" অর্থাৎ এখানে বক্তাকে যেতে বারণ করা হচ্ছে এবং বক্তা তাতে অসম্মতি প্রকাশ করে জানাচ্ছে যে, সে যাবেই।



২: পদান্বয়ী অব‍্যয়

যে অব‍্যয়গুলি বাক‍্যস্থ পদগুলির মধ‍্যে অন্বয় বা সম্পর্ক স্থাপন করে, তাদের পদান্বয়ী অব‍্যয় বলে। পদান্বয়ী অব‍্যয় আসলে অনুসর্গ। অনুসর্গ কখনও কখনও বিভক্তির বিকল্প হিসেবেও কাজ করে। তবে আচার্য সুনীতিকুমার অনুসর্গকে অব‍্যয়ের মধ‍্যে স্থান দেননি।

পদান্বয়ী অব‍্যয়ের উদাহরণ : 

দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, জন‍্য, নিমিত্ত, হ‌ইতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, মধ‍্যে, পাশে, উপরে, সাথে, বিনা, ছাড়া, ব‍্যতীত, ব্যতিরেকে, তরে, লাগি ইত্যাদি।

উপরের উদাহরণগুলি লক্ষ করলে দেখা যাবে, কয়েকটি অনুসর্গে বিভক্তি আছে। যেমন, মধ‍্যে, পাশে ইত্যাদি। 

পদান্বয়ী অব্যয়ের শ্রেণিবিভাগ

পদান্বয়ী অব্যয় বা অনুসর্গ দুই প্রকার

১: নামজাত অনুসর্গ: যে অনুসর্গগুলি নামপদ থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে সেগুলিকে বলা হয় নামজাত অনুসর্গ।

যেমন: দ্বারা, কর্তৃক, বিনা, অপেক্ষা, নিমিত্ত ইত্যাদি।

২: ক্রিয়াজাত অনুসর্গ: যে অনুসর্গগুলি ক্রিয়াপদ থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে সেগুলি ক্রিয়াজাত অনুসর্গ। রূপের দিক থেকে এরা আসলে অসমাপিকা ক্রিয়া, কিন্তু বাক্যের মধ্যে অব্যয়ের কাজ করে।

ক্রিয়াজাত অনুসর্গের উদাহরণ:
দিয়ে: কলম দিয়ে লিখি।
থেকে: কলকাতা থেকে আসছি।
করে: গাড়ি করে এলাম।
নিয়ে: বল নিয়ে খেলা করো।
চেয়ে: তোমার চেয়ে আমি বড়ো।
হতে: কোথা হতে এলে?
ধরে: রাস্তা ধরে হাঁটো।

উপরোক্ত দুই প্রকার পদান্বয়ী অব্যয় ছাড়া আর‌ও এক প্রকার পদান্বয়ী অব্যয় দেখা যায়। তাদের আমরা যৌগিক অনুসর্গ বলতে পারি। দুটি অনুসর্গের যোগে এগুলি গঠিত হয়। যেমন: মধ্যে দিয়ে, ভিতর দিয়ে, মধ্যে থেকে প্রভৃতি। অনুসর্গের দ্বিত্ব প্রয়োগ‌ও প্রায়‌ই দেখা যায়। যেমন: আমার পাশে পাশে হাঁটো। দাগের ভিতরে ভিতরে ছুটতে হবে।  


৩: সমুচ্চয়ী অব‍্যয় (Conjunction)

সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে?

যে সব অব‍্যয় বাক‍্যের দুটি পদকে বা দুটি খণ্ডবাক‍্যকে জুড়ে দেয়, তাদের সমুচ্চয়ী অব‍্যয় বলে। 

জুড়ে দেওয়ার কাজ করে, তাই আধুনিক ব্যাকরণে সমুচ্চয়ী অব্যয়কে যোজক পদ বলা হয়। তবে মনে রাখতে হবে, এই জুড়ে দেওয়ার ভাবটি সব সময় যোগ করার ভাব হয় না। বিয়োগ, সংকোচন, কারণ নির্দেশ ইত‍্যাদি অনেক প্রকার ভাব প্রকাশিত হয়। পদান্বয়ী অব‍্যয়ের সাথে এর পার্থক্য বোঝার জন‍্য একটি কথা মনে রাখলেই হবে : পদান্বয়ী অব‍্যয় Preposition-এর কাজ করে এবং সমুচ্চয়ী অব‍্যয় Conjunction-এর কাজ করে। একজনের কাজ সম্পর্ক তৈরি করা, অপরজনের কাজ একত্রিত করা। সমুচ্চয়ী অব‍্যয়ের অনেকগুলি ভাগ আছে। যেমন : সংযোজক, বিয়োজক, সংকোচক, হেতুবাচক, অন‍্যথাসূচক, সংশয়বাচক ইত‍্যাদি।


সমুচ্চয়ী অব্যয়ের শ্রেণিবিভাগ। সমুচ্চয়ী অব্যয় কত প্রকার





সংযোজক অব‍্যয়

যে অব‍্যয় দুটি পদ বা বাক্যাংশ বা দুটি খণ্ডবাক‍্যকে যুক্ত করে, তাকে সংযোজক অব‍্যয় বলে। 

যেমন : ও, এবং, আর
বাক্যে প্রয়োগ: তুমি ও আমি যাবো। সে আসবে এবং তুমিও আসবে।

বিয়োজক অব‍্যয় বা বৈকল্পিক অব্যয়

যে অব‍্যয় দুটি বিকল্পের মধ‍্যে একটিকে প্রতিষ্ঠা করে এবং অপরটিকে খারিজ করে, তাকে বিয়োজক বা বৈকল্পিক অব‍্যয় বলে।

যেমন : "আমি যাবো অথবা রাম আসবে।" এখানে 'অথবা' বিয়োজক অব‍্যয়। অন‍্যান‍্য বিয়োজক অব‍্যয় : বা, কিংবা, না ইত্যাদি।


সংকোচক অব‍্যয়

যে অব‍্যয় দুটি খণ্ডবাক‍্যের মধ‍্যে থেকে একটি খণ্ডবাক‍্যের ভাবকে কিছুটা সংকুচিত করে, তাকে সংকোচক অব‍্যয় বলে। সংকোচক অব‍্যয় বৈপরীত্যের ভাব‌ও প্রকাশ করে।

উদাহরণ : "সে এসেছে কিন্তু আমার সাথে দেখা করেনি।" এখানে 'কিন্তু' অব‍্যয়টি তার আসার ভাবটিকে সংকুচিত করছে। বোঝা যাচ্ছে, তার উচিত ছিল বা প্রত‍্যাশিত ছিল আমার সাথে দেখা করা। 
অন‍্যান‍্য সংকোচক অব‍্যয়গুলি হল : অথচ, তবুও, তথাপি ইত্যাদি।

[ছোটোদের শেখানোর জন‍্য সমুচ্চয়ী অব‍্যয়ের উপরোক্ত ৩টি শ্রেণি উল্লেখ করলেই হয়। এই তিনটিই সমুচ্চয়ী অব‍্যয়ের মধ‍্যে প্রধান।]


হেতুবাচক অব‍্যয়

যে অব্যয়গুলি কোনো ক্রিয়া সম্পাদনের কারণ প্রকাশ করে তাদের হেতুবাচক অব্যয় বলে। যেমন: কেননা, যেহেতু ইত্যাদি।

বাক্যে প্রয়োগ: যেতে হবে, কেননা না গিয়ে উপায় নেই। বলছি, যেহেতু বলা দরকার।


অন‍্যথাবাচক বা ব্যতিরেকাত্মক অব্যয়

একটি ঘটনা না ঘটলে কী হতে পারে, এইরূপ ভাব প্রকাশ করে যে অব‍্যয়, তাকে অন‍্যথাবাচক অব‍্যয় বলে। 
যেমন : তুমি আসবে ন‌ইলে আমি দুঃখ পাবো। (ন‌ইলে)। এক‌ই রকম : নতুবা, তাছাড়া, নয়তো।


সংশয়াত্মক অব্যয়

এই অব‍্যয়ের দ্বারা বক্তার মনের সংশয়ের ভাব প্রকাশিত হয় তাকে সংশয়াত্মক অব্যয় বা সংশয়-বাচক অব্যয় বলে। 
যেমন : আমি ভয় পেয়েছিলাম, পাছে কেউ জেনে যায়।
এক‌ইরকম : যদি, বুঝি।


সাপেক্ষ বা নিত্যসম্বন্ধী অব্যয়

সাপেক্ষ অব‍্যয়গুলি জোড়ায় ব‍্যবহৃত হয়। অর্থাৎ একটির সাপেক্ষে অপরটি ব‍্যবহৃত হয়। 
যেমন : যদি-তবে, পাছে-তাই ইত্যাদি।

এখানে মনে রাখতে হবে সাপেক্ষ অব্যয়, সাপেক্ষ সর্বনাম ও সাপেক্ষ বিশেষণ আলাদা। 
যে-সে: সাপেক্ষ সর্বনাম।
যেমন-তেমন, যত-তত: সাপেক্ষ বিশেষণ।
যদি-তবে, পাছে-তাই: সাপেক্ষ অব্যয়।

প্রতিষেধক বা সীমানির্দেশক অব্যয়

এই অব‍্যয়গুলি দুটি খণ্ডবাক‍্যের মধ‍্যে একটির ভাবকে সীমায়িত করে। যেমন : সবাই এসেছিল, শুধু সে আসতে পারেনি।
ভাত খেতে হয় না, কেবল মাছটা খাও।


অবস্থাত্মক বা ঘটনাসূচক

এই অব্যয় কোনো ঘটনা বা অবস্থার সূচনা করে। 

যেমন  : যদি আবার সুযোগ পেতাম! যদি আমি পাখি হতাম! 


ব্যবস্থাত্মক অব্যয়

এই অব‍্যয়টি কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী ব‍্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হয় বা হবে তা বুঝিয়ে দেয়।

যেমন : ফিরতে রাত হবে, তাই টর্চটা সঙ্গে নিলাম।(তাই)


উপমাবাচক অব্যয়

যে অব্যয়গুলি তুলনা করতে বা উপমা দিতে তুলনাবাচক পদের কাজ করে, তাদের উপমাবাচক অব্যয় বা উপমাত্মক অব্যয় বলে। উদাহরণ: মতো, যেন, পারা, প্রায় ইত্যাদি।



সিদ্ধান্ত‌বাচক অব্যয়

যে অব্যয়গুলি কোনো সিদ্ধান্তের সূচনা করে, তাদের সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় বলে।

উদাহরণ : সুতরাং, কাজেই , অর্থাৎ, অত‌এব।


৪: ধ্বন‍্যাত্মক অব‍্যয়

ধ্বন‍্যাত্মক শব্দগুলি বাংলা ভাষার বিশিষ্ট সম্পদ। ইংরাজির মত অতি সমৃদ্ধ একটি ভাষাতেও বোধহয় বাংলার মত এত ধ্বন‍্যাত্মক শব্দ নেই। ধ্বন‍্যাত্মক শব্দগুলি কখনও বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে সৃষ্টি হয় আবার কখনও বিশেষ ভাব-এর ব‍্যঞ্জনা দেয়।
এই হিসেবে ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

ধ্বনিপ্রকাশক ধ্বন্যাত্মক শব্দ : এগুলি বাস্তব ধ্বনির অনুকরণ করে এবং বাস্তব ধ্বনিকেই বোঝায়। যেমন: দুম দাম, ফড় ফড়, ঝন ঝন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ব‌ইয়ে এগুলিকে 'অনুকার ধ্বন্যাত্মক শব্দ' বলা হয়েছে। এই নামটি যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর।

ভাব প্রকাশক ধ্বন্যাত্মক শব্দ: এগুলি শুনতে ধ্বন্যাত্মক শব্দ হলেও আসলে কোনো ধ্বনি প্রকাশ করে না, কোনো ভাব প্রকাশ করে। যেমন: ঝাঁ ঝাঁ, খাঁ খাঁ, কুচ কুচে, টন টন ইত্যাদি।

ধ্বন‍্যাত্মক শব্দগুলি সাধারণত অব‍্যয় হিসেবে গণ‍্য হয়। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। আমাদের মতে ধ্বন্যাত্মক শব্দ একটি বিশেষ ধরনের শব্দ। এরা অব্যয়ের কাজ করে না। এদের থেকে বিভিন্ন ধরনের পদ তৈরি হয়, যেমন বিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ, বিশেষ্য প্রভৃতি।

অনুকার অব্যয় কাকে বলে? ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও অনুকার শব্দের পার্থক্য

 এই প্রসঙ্গে একটি কথা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার, অনেকে ধ্বন‍্যাত্মক ও অনুকার শব্দকে এক করে ফেলেন। ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও অনুকার শব্দ আলাদা জিনিস। একটি শব্দের সাথে ধ্বনিগত মিল রেখে(অর্থাৎ ধ্বনিগত অনুকরণে) যে সব অর্থহীন শব্দ তৈরি করা হয়, তাদের অনুকার শব্দ বলে। যেমন : 'জল-টল' শব্দের 'টল' অংশটি অনুকার শব্দ। অপরদিকে থপথপ, দুমদাম, হুড়হুড়, কটকট, ঝাঁঝাঁ, কুচকুচ প্রভৃতি শব্দগুলি ধ্বন‍্যাত্মক শব্দ। ধ্বন‍্যাত্মক শব্দগুলি অনেক ক্ষেত্রে     বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ প্রভৃতি পদের ভূমিকা পালন করে। একটি ধাতুর পূর্বে‌ বসে এরা যুক্ত ধাতু গঠন করে। অনুকার শব্দকে অব্যয় বলার কোনো যুক্তি নেই। অনুকার শব্দগুলি যে শব্দের অনুকরণে নির্মিত হয়, মোটামুটি সেই শব্দের অর্থ‌ই প্রকাশ করে। যেমন: "জামা-টামা একটা গায়ে দাও।" এই বাক্যে 'টামা' বলতে আসলে 'জামা জাতীয় কিছু' বোঝানো হয়েছে।


আর‌ও পড়ুন







মন্তব্যসমূহ

ABIR SAHANA বলেছেন…
দারুণ রে দারুণ
Budhimanta বলেছেন…
দারুণআলোচনা
৫/৫
মাহাবুব বলেছেন…
খুব ভালো আলোচনা করেছেন ভাই।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Unknown বলেছেন…
(আঁকা) বর্ণ বিশ্লেষণ করো
Burha Uddin বলেছেন…
ধন্যবাদ
সম্রাট বলেছেন…
ধন্যবাদ স্যার।
Apu বলেছেন…
দারুণ কাজ করেছেন।
Unknown বলেছেন…
ধন্যবাদ স্যার
অব্যয় বলেছেন…
বোঝানোর প্যাটার্ণ দুন্দর।
Tuhin Dey বলেছেন…
ক্লাস পঞ্চম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সম্পূর্ণ বাংলা ব্যাকরণ কোন লেখক এর কোন বই তে পাবো। বললে খুব উপকৃত হব।

আর‌ও পড়ে দেখুন

মিল যুক্ত শব্দ | মিল করে শব্দ লেখ

সূচিপত্র | Bengali Grammar

অপিনিহিতি কাকে বলে

সাধু ও চলিত ভাষার ৭টি বৈশিষ্ট্য ও রূপান্তর | Sadhu o cholit bhasha

দল বিশ্লেষণ, মুক্ত দল ও রুদ্ধ দল | দল কাকে বলে

১০০+ সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ | সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের তালিকা | Samochcharito Vinnarthok shabdo

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য